সোমবার ● ১৬ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » মাতামুহুরী’র করাল থাবায় পাল্টে গেছে আলীকদমের চিত্র !
মাতামুহুরী’র করাল থাবায় পাল্টে গেছে আলীকদমের চিত্র !
হাসান মাহমুদ, আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: কথায় আছে শান্ত শীতল মাতামাতুরী নদী ৷ কিন্তু তাও মৌসুম ভেদে ৷ প্রতি বছর বর্ষায় পাল্টে যায় শান্ত শীতল এই মাতামুহুরীর স্বভাব ৷ বুকে ক্ষিপ্রতা ধারণ করে রাক্ষুসে রুপ নেয় এই নদী ৷ আবার যখন সুদিন আসে তখন শান্ত এই মাতামুহুরী নদী হয়ে উঠে অশান্ত ৷ চিরাচরিত তার এই স্বভাব বজায় রাখতে গিয়ে পাল্টে দিয়েছে আলীকদমের মানচিত্র ৷ মাতামুহুরী নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে উপজেলার হাজারের অধিক পরিবার ৷ ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সিড়ি ঘাট, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটসহ বহু স্থাপনা ৷ এমন আরো অনেক স্থাপনা রয়েছে যা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে ৷
অন্যদিকে প্রতি বছর আলীকদম উপজেলার শতাধিক গ্রাম পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয় ৷ বন্যা পরবর্তী সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলো এগিয়ে আসে ত্রান সামগ্রী নিয়ে ৷ কিন্তু এবিষয় নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জাগছে যে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের স্থায়ী কোন সমাধান কর্তৃপক্ষ নিবে কিনা ? বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখতে গিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেন প্রকৃতির প্রতি উদাসিনতাকে ৷ তারা বলেন প্রতি বছর যে হারে অপরিকল্পিত জুম চাষ ও বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, তাতে পাহাড়ের মাটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে এসে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে ৷ আর এই নদী ভরাটের কারণেই এসব পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে ৷ একটি গবেশনায় দেখা যায় বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলিয় এসব পাহাড় গুলো প্রতিবছর গড়ে ১৬ ইঞ্চি পর্যন্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে ৷ সেই অনুপাতে পাহাড়ি নদ-নদীগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে আসছে ৷
জানা যায়, ১৯৯৩ সালে নদী ভাঙন রোধ ও লামা-আলীকদমকে বন্যামুক্ত করার জন্য তত্কালিন প্রধানমন্ত্রীর নিকট ডজন খানেক আবেদন করেন ৷ প্রধান মন্ত্রীর স্পেশাল এ্যাফেয়াস বিভাগ থেকে সচিব পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রনালয়কে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিদের্শ প্রদান করে ৷ পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই সময় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাক্কলন তৈরি করেছিলো ৷ প্রায় দেড় যুগেরও বেশী সময় অতিবাহীত হওয়ার পর গত সপ্তাহে লামা-আলীকদমের বুক চিরে বয়ে যাওয়া মাহামুহুরীর ভাঙন স্বচোখে দেখে গেলেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ৷ এ সময় তিনি নদীর কুল ভাঙন রোধে অতিদ্রম্নত প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন ৷ তবে আশার আলো জাগাতে পারেনি নদীকুলের সাধারন জনগনের বুকে ৷ প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি হবে আলীকদম সেনানিবাস এলাকা সংলগ্ন মাত্র কয়েকশ মিটার ৷
আলীকদম উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি সমর বডুয়া এই প্রতিনিধিকে বলেন, প্রতি বছর আলীকদম উপজেলার শতাধিক গ্রাম পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয় ৷ পাহাড়ের ঝিরি বেয়ে আসা পানি মাতামুহুরী নদীতে মিশে প্রবল স্রোতে লন্ডভন্ড করে দেয় রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, শ্বসান ও হতদরিদ্র পরিবার গুলোর সাজানো সংসার৷ গত কয়েক বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শ’খানেক গ্রামের অসংখ্য বাড়ি, ফসলি জমি, মত্স খামার,উপজাতি শ্বসান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ৷ আজ ভাঙন কবলিত পরিবার গুলো বসবাস করছে অন্যের বাড়িতে আশ্রীতা হয়ে৷ স্ব স্ব ভূমির মালিক আজ ভূমিহীন প্রজা মাত্র ৷আপলোড : ১৬ নভেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : বিকাল ৪.২৭ মিঃ