শনিবার ● ২৪ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » পটুয়াখালীতে বসত-বাড়ি রক্ষা করতে দিশেহারা কৃষক
পটুয়াখালীতে বসত-বাড়ি রক্ষা করতে দিশেহারা কৃষক
হাসান আলী,পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: (১০ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.২০মি.) পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় এক দারিদ্র কৃষক তার বসত-বাড়ী রক্ষা করতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগীতা নিয়েও তার ভিটে-মাটি রক্ষা করতে পারছেন না এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে। প্রতিনিয়ত বাড়ী ছাড়তে হত্যা-গুমসহ নানা ভাবে হুমকী দিয়ে যাচ্ছে ওই কৃষক পরিবারটিকে। আইন মানছে না ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি।
চার সন্তানের জনক কৃষক আবুল কালামের (৫৫) অভিযোগ, দীর্ঘ ৩০ বছর পূর্বে প্রাকৃতিক দূর্যোগে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে তিনি তার পরিবার নিয়ে পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চতলাখালী গ্রামের বাসিন্দা হাতেম কারীর কাছ থেকে বাজার মুল্যে ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে বসত-বাড়ি নির্মাণসহ আবাস যোগ্য করে তোলেন উক্ত জমি। কিন্তু গত দুই থেকে আড়াই বছর আগে স্থানীয় আমীর হোসেন নামে এক প্রভাবশালী তার বাড়ির পাশে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। আমীর হোসেন জমি ক্রয়ের পর থেকেই কৃষক পরিবারটিকে নানা ভাবে হয়রানী করে আসছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে জুন মাসের প্রথম দিকে কৃষক আবুল কালামের স্ত্রী মোসাঃ জেসমিন বেগম গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। আবুল কালামের বাড়িটি পরিত্যক্ত রয়েছে এমন সংবাদ শুনে আমীর হোসেন তার লোকজন নিয়ে গত ১৪ জুন সম্পূর্ণ বাড়িটিকে তারকাটার বেড়া দিয়ে কর্ডন করে রাখেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে এমন খবর শুনে আবুল কালাম তাৎক্ষনিকভাবে দেশে পৌছে দেখেন তার বাড়িটি তারকাটার বেড়ায় অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসময় তিনি তার বাড়ির প্রবেশ পথের তারকাটার বেড়ার একাংশ সরিয়ে পরিবার নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেন। এতে আমীর হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে তার লোকজন নিয়ে তাদের ওই বাড়ি থেকে নেমে যেতে বলে এবং মারধরের হুমকীসহ অকথ্য ভাষায় গাল-মন্দ করেন।
কোন উপায়ান্ত না পেয়ে আবুল কালাম সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে ওই থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মো. হারুন অর রশিদ ঘটনাস্থলে যান এবং প্রাথমিকভাবে কাগজপত্র দেখে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় হাঝির হতে বলেন। পরে উভয় পক্ষ থানায় হাঝির হয়ে অফিসার ইনর্চাজ এর কাছে মিমাংসার জন্য মৌখিক মুচলেকা দিয়ে আসেন। কিন্তু থানা থেকে আমীর হোসেন এলাকায় পৌছে পুনরায় তাদের বাড়ি ত্যাগ করার জন্য বলেন। অন্যথায় হত্যা-গুমসহ নানা ভাবে হুমকী দিয়ে থাকেন। বর্তমানে তার পরিবারটি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য রয়েছেন। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত ওই কৃষকের বাড়ি আমীর হোসেন কর্তৃক কাটাতারের বেড়া দিয়ে কর্ডন করা রয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত আমীর হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আমীর হোসেন এক পর্যায়ে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ করে রাখেন।
প্রতিবেশি রাজা সরদার ও চানু মিয়া জানান, যে জমি দখলের জন্য আমীর হোসেন উঠেপরে লেগেছে উক্ত জমি কৃষক আবুল কালামের ক্রয়কৃত সম্পত্তি। কিন্তু আমীর তার গায়ের জোরে লোকজন নিয়ে নিরিহ আবুলের পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানী করে আসছে। দেশে আইন কানুনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় গরীবদের উপর এভাবেই জুলুম চলছে বলেও অভিমত তাদের।
রাঙ্গাবালী থানার এসআই মো. হারুন অর রশিদ বলেন,অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থলে যাই। প্রাথমিকভাবে কাগজপত্র দেখে তারকাটার বেড়া দেয়া জমি কৃষক আবুল কালামের বলে আমার ধারনা হয়। ওই সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করে উভয় পক্ষকে ডেকে কাগজপত্র এবং স্থানীয়দের নিয়ে থানায় আসতে বলি। কিন্তু কি কারনে আবুল কালামের জমি আমীর হোসেন দাবী করে তাকে হয়রানী করে আসছে তা আমার বোধগম্য নয়।