রবিবার ● ২৫ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » বিলুপ্ত হচ্ছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প
বিলুপ্ত হচ্ছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প
মো. মাইনউদ্দিন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: (১১ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.০৪মি.)কর্ণফুলী পেপার মিলের চাহিদা পূরণ, অবাধে পাহাড়ে জুম চাষের ফলে বাঁশের বংশ বিস্তার ধ্বংশ ও পাহাড়ীদের মাঝে (বাঁশ করুল) খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের ফলে পার্বত্য খাগড়াছড়ি থেকে আজ বিলুপ্তির পথে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশ শিল্প। বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা এখন এই পেশা ছেড়ে দিয়ে জড়িত হয়েছেন অন্য পেশায়।
পাহাড়ের জনপদে এক সময় বাঁশঝাড় ছিল না এমনটা কল্পনাও করা যেতো না। প্রতিটি উপজেলার যেখানে গ্রাম সেখানে বাঁশঝাড় এমনটিই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু কালের পরিক্রমায় নতুন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারে হারিয়ে যেতে বসেছে পাহাড়ের ঐতিহ্যময় এই শিল্পটি।
অপরদিকে, পার্বত্য অঞ্চলেও বাঁশ বিলুপ্ত হওয়ার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে পাহাড়ে অবাধে জুম চাষের ফলে লতা-পাতা, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ পরিষ্কার করে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুনে পুড়ে বাঁশঝাড়গুলো একেবারে ধ্বংশ হয়ে যায়। যার ফলে বাঁশ আর নতুন করে বংশ বৃদ্ধি সৃজন করতে পারে না।
আবার পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ীদের মাঝে খাবার হিসেবে এর চাহিদা রয়েছে ব্যপকভাবে। ছোট-ছোট বাঁশ করুল কেটে খাদ্য হিসেবে বাজারজাত করতে দেখা যায় অনেক পাহাড়ীদের। তার উপর আবার বিভিন্ন রকম টিলায় মানুষ বাঁশ বাগান কেটে সেখানে বিভিন্ন রকম ফলজ ও বনজ গাছ লাগিয়ে সৃজন করছেন নতুন বাগান। উন্নত জীবন যাপনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বাঁশের জায়গা দখল করেছে কৃত্রিম উপকরণে তৈরি নানান সামগ্রী। এতে হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ী অঞ্চলের হাতে তৈরি বাঁশের শিল্প।
অন্যদিকে যেমন করে বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস পত্র বাজার দখল করার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ের বাঁশ শিল্প। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন এ পেশায় নিয়োজিত জেলার বিভিন্ন উপজেলার শত শত শ্রমিক। খাগড়াছড়ি বিভিন্ন জেলারঅনেক পরিবার এই হস্ত শিল্প তৈরি সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন মাপের ছোট-বড় হাত পাখা, কুলা, মোড়া, ঝুড়ি, চাটাই, মুরগির খাঁচা, ছাকনি ইত্যাদি বাহারি রকমের জিনিস তৈরি করে তা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতো।কিন্তু বর্তমান বাজারে লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া। প্লাস্টিক সামগ্রীতে সয়লাব বাজার এবং প্রয়োজনীয় পুঁজি ও অর্থের অভাবে বাঁশ ক্রয় করতে না পেরে এ পেশার অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এ পেশার সাথে জড়িত কুলছুমাসহ অনেকেই জানান, কয়েকে বছর আগেও বাঁশের তৈরি ছোট-বড় জিনিস বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারতাম। কিন্তু এখন বাজারে এসে এইসব বিক্রি করে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাজার বিক্রির জন্য নিয়ে গেলে কোন কোন দিন গাড়ি ভাড়ার টাকাই হয়না।বর্তমানে একটি বাঁশ ক্রয় করে কঠোর পরিশ্রম করে বিক্রিও করতে হয় কম দাম দিয়ে। আর এখন স্বল্প মূল্যের প্লাস্টিক সামগ্রী বাজারে আসায় মানুষ বেশি দাম দিয়ে বাঁশের সামগ্রী কিনতে চায় না। বর্তমান বাজার পুরোটাই প্লাস্টিক সামগ্রীর দখল করে নিয়েছে।