রবিবার ● ২৫ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » খুলনা » ঈদের ছুটিতেও পর্যটক শূন্য বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন
ঈদের ছুটিতেও পর্যটক শূন্য বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন
বাগেরহাট প্রতিনিধি সুন্দরবন থেকে ফিরে :: (১১আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৪৬মি.)পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী বনভূমি। এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে স্বীকৃতি পায়। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। বনভূমিতে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির, সাপ সহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণির আবাসস্থল। এছাড়াও এই বনভূমিতে বিখ্যাত সুন্দরী গাছ গোলপাতা সহ হরেক প্রকার গাছের সমাহারে বিস্তৃত। এছাড়াও সুন্দরবনের বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে গড়ান, গেওয়া, কেওড়া সহ সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী মধু।
বাংলায় সুন্দরবনের আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। তবে, সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের মতামত। এতো অপরূপ দৃশ্য ও জীববৈচিত্রে ভরা বাগেরহাটের মংলা ও শরণখোলার সুন্দরবন এলাকা এখন পর্যটকশূন্য। মংলার চাঁদপাই রেঞ্জ এবং শরণখোলা রেঞ্জে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা সত্বেও এখন পর্যন্ত কোন পর্যটকের দেখা পায়নি এই সুন্দরবন।
বন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টির মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকদের আনাগোনা একটু কম থাকে। তবে, ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে কোন পর্যটকই এখন পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমনে আসেনি বলে জানান। এ ব্যাপারে আমাদের বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিএস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে জানান, সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে ঈদের আগেই কিছু কিছু দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দেখা মিললেও তা আগের তুলনায় অনেকাংশে কম।
বন বিভাগ আরো জানান, সকল পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগের সকল কর্মকর্তারা সর্বদা সচেষ্ট থাকে। কিন্তু বিগত বছর গুলোর তুলনায় এ বছর পর্যটকদের কোঠা একেবারেই শুন্যে নেমে এসেছে। সাধারণত সুন্দরবন প্রেমি পর্যটকরাই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এর অপরূপ জীব বৈচিত্র দেখার জন্য। আবার সাম্প্রতিক বনদস্যুদের ভয়েও পর্যটক অনেকাংশে কমে যাওয়ার কারণ বলে জানিয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাবাসী। এ সকল ভয়-ভীতি উপেক্ষা করেও বিগত বছরগুলোতে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এসেছিলো সুন্দরবনের এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে। তবে, শরণখোলা রেঞ্জের কোন স্টেশনেই এখন পর্যন্ত দেখা মেলেনি পর্যটকদের। বন বিভাগ ও এলাকাবাসী জানান, ঈদ পরবর্তীতে পর্যটকদের ভীড় হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে পর্যটক না আসাতে পর্যটন কেন্দ্রীক সকল নৌযান মালিকরা হয়ে পড়েছেন অনেকটা হতাশাগ্রস্থ। তবে, কোন উৎসব ছাড়াও মংলার চাঁদপাই রেঞ্জে কিছুনা কিছু পর্যটকদের দেখা সার্বক্ষণিক মিললেও বিগত বছরের তুলনায় তা খুবই কম। শরণখোলা রেঞ্জে পর্যটক সংখ্যাতো একেবারেই শুন্যের কোঠায়। বন বিভাগের কর্মকর্তারা আশাবাদী সুন্দরবনের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভীড়ে সুন্দরবন হয়ে উঠবে মুখরিত। তবে, শীত মৌসুমে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় সুন্দরবন নতুন করে নতুন রূপে সেজে ওঠে। মংলার চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ থেকে পর্যটকরা তাদের পছন্দের জায়গায় ছুটে চলে বিভিন্ন নৌযানের মাধ্যমে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান হলো- সুপতি, কটকা, হিরণপয়েন্ট, কচিখালী, হরিণটানা, বাদামতলা, করমজল, হারবাড়িয়া, নারিকেলবাড়িয়া, জালিয়ারটেক সহ বিভিন্ন স্থানে।
সুন্দরবন ভ্রমনের ব্যাপারে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং এলাকাবাসীরা আশাবাদী যে, ঈদ পরবর্তী সময়ে এবং শীত মৌসুমে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভীড়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন আবার নতুন সাজে সেজে উঠবে।