রবিবার ● ২৫ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » কলাপাড়ায় মাদক বাণিজ্যের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে
কলাপাড়ায় মাদক বাণিজ্যের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে
হাসান আলী,পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: (১১আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৪৬মি.)পটুয়াখালীর কলাপাড়া এখন ইয়াবা, গাঁজা ও চোরাই মদ বাণিজ্যের নিরাপদ অভয়ারন্য। ঈদকে টার্গেট করে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি উপজেলার শতাধিক স্পটে দেদারছে বিক্রী হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা ও চোরাই মদ। এসকল স্পট থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নামে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে প্রায় প্রতিদিনই মাদক বিক্রেতারা ধরা পড়লেও গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
নির্ভরযোগ্য জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১লা জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত ১১০০ পিস ইয়াবা, ৬ কেজি গাঁজা ও ১০ লিটার চোরাই মদ উদ্ধার হয় পুলিশী অভিযানে।
এসময় গ্রেফতার করা হয় ৩৬ জনকে। কলাপাড়া থানায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মোট ৩৩টি মামলা করা হয়। এসকল মামলার চার্জশীট ইতোমধ্যেই পুলিশ আদালতে দাখিল করেছে। গ্রেফতারকৃত এসকল মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও রয়েছে। অপরদিকে মহিপুর থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১লা জুন’২০১৬ থেকে ৩১ মে’২০১৭ পর্যন্ত ইয়াবা উদ্ধার হয় ৮৪৭ পিচ, গাঁজা ৬ কেজি, মদ ৩০ লিটার এবং ঝাওয়া উদ্ধার হয় ২৫০ লিটার। এসময় গ্রেফতার করা হয় ৫৭ জনকে। মহিপুর থানায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মোট ৩৬টি মামলা করা হয়।
এসকল মামলার চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। মাদক বহনকারী ও বিক্রেতারা প্রায়শ:ই আটক হলেও গডফাদাররা বরাবর থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এছাড়া মাদক মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দুর্বল তদন্ত রিপোর্ট ও স্বাক্ষী দুর্বলতায় অভিযুক্তরা জামিনে বেরিয়ে ফের জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন, দু’টি থানা শহর ও দু’টি পৌর শহরসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকার হাট-বাজার এবং প্রত্যন্ত জনপদের শতাধিক স্পটে সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি বিক্রী হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা ও চোলাই মদ। এছাড়া রাখাইন অধ্যুষিত হাড়িপাড়ার ৭টি স্পট, মধুপাড়ার ৩টি স্পট, পক্ষিয়াপাড়ার ১০টি স্পট, তুলাতলি পাড়ার ৪টি স্পট, কালাচাঁন পাড়ার ৭টি স্পট, মিশ্রী পাড়ার ৩টি স্পট, বেতকাটা পাড়ার ২টি স্পট, সোনা পাড়ার ৭টি স্পট, বৌলতলি পাড়ার ৩টি স্পট, আমখোলা পাড়ার ২০টি স্পট ও থনজু পাড়ার ২টি স্পটে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি বিক্রী হচ্ছে গাঁজা ও চোলাই মদ। দাম তুলনামুলক কম হওয়ায় আসক্তদের সংখ্যা ক্রমশ: বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপরদিকে উঠতি বয়সের যুবকরা আসক্ত হচ্ছে ইয়াবায়। প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রী হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা দরে। মোবাইল ফোনে আসক্তদের মাঝে বিক্রী করা হচ্ছে ইয়াবা। সম্প্রতি ধূলাসার ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ফিরোজ হাওলাদার তার ৪ সহযোগী নিয়ে ২৩০৪ পিচ ইয়াবা, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান’র পুত্র রাফায়েল মিষ্টি ও তার সহধর্মীনীকে ইয়াবা ও গাঁজা সহ এবং মহিপুর ইউনিয়ন আ’লীগ সম্পাদক নুরুল ইসলাম’র কন্যা সুমি ১১০ পিচ ইয়াবা সহ গ্রেফতারের পর তোলপাড় শুরু হয় কলাপাড়ায়।
এছাড়া প্রায় ৩৯৫০ পিচ ইয়াবা সহ আলীপুর মৎস্যবন্দর থেকে ফাতেমা নামের এক নারী গ্রেফতারের পর নেপথ্যে থাকা গডফাদারদের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে চলে আসে। এখন অপেক্ষার পালা পুলিশের তদন্ত শুধু গ্রেফতারকৃতদের দিয়ে শেষ হবে, না বরাবরের মত এর সাথে জড়িত নেপথ্যের গডফাদাররা থেকে যাবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শাহজালাল ভূঁইয়া সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, মাদক দব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান আরও জোরদার করা হবে। অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। মাদক বিক্রীর স্পট থেকে তাদের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।