মঙ্গলবার ● ২৭ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » গাজিপুর » কারাগারে ঈদের জামাতে শরিক হননি বাবর-সাঈদী
কারাগারে ঈদের জামাতে শরিক হননি বাবর-সাঈদী
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান (আতিক),গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১৩আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১৪মি.) গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ঈদুল ফিতরের জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য উপস্থিত হননি। তবে তারা দুজনেই একাকী নামাজ আদায় করেছেন।
অবশ্য ওই কারাগারে বন্দিদের জন্য আলাদাভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সুপার সুব্রত কুমার বালা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সেখানে বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, এমপি রানা ও ডেসটিনির মালিক মো. হোসেনসহ এক হাজারের মতো বন্দি রয়েছেন।
তাদের মধ্যে অন্তত ৮০ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত। এখানে ঈদের দিন বন্দিদের নামাজ আদায় করার জন্য আলাদাভবে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা জানান, কারাগারের অনেক বন্দিই ঈদের নামাজের জামায়াতে অংশ নিলেও সাঈদী ও বাবর শরিক হননি।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, সেখানে বন্দিদের জন্য ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২ নম্বর কারাগারে দুই হাজারের অধিক বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে একশ ৩৮ জন ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, সেখানে বন্দির জন্য দু’টি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারাগারের এক হাজার ছয়শ ৩৯ জনের মধ্যে ছয়শ’র মতো আসামি ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত।
গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. নেছার আলম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, সেখানকার কারাগারেও ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই কারাগারে নারী-পুরুষসহ এক হাজারের মতো বন্দি রয়েছে। তবে সেখানে ফাঁসির কোনো আসামি না থাকার কথা জানান তিনি।
গাজীপুরে কারাগারে বন্দিদের ঈদ উদযাপন
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: ২৬ জুন পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদে পরা হয় নতুন জামা কাপড়, রান্না হয় উন্নতমানের খাবার। সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে এ আনন্দ ভাগাভাগি করে দিনটি উদযাপন করেন। অনেকে নাড়ীর টানে শত ব্যস্ততার ও ভোগান্তির মধ্যেও ছুটে গেছেন গ্রামে বাড়িতে। অনেকে এ দিন স্বজন-বন্ধু বান্ধব নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বের হয়েছেন।
আর যারা কারাগারে বন্দি, তাদের এ সুযোগ নেই। তাদের ব্যাপারটা ভিন্ন। তাদের ঈদ উদযাপন করতে হয় কারাগারেই। তবে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের আনন্দ দিতে প্রতিবছরই বিশেষ খাবার, বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেয়। ঈদ উপলক্ষে গাজীপুরের কারাগারগুলো করা হয়েছে আলোকসজ্জা। এ ছাড়া অনেক বন্দির পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা তাদের সঙ্গে দেখা করছেন এবং বাড়ি থেকে রান্না খাবার দিয়েছেন।
গাজীপুরে রয়েছে পাঁচটি কারাগার। এর মধ্যে কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে চারটি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং অপরটি গাজীপুর জেলা কারাগার। কারাগারে দুই ধরনের বন্দি থাকেন। যারা সাজাপ্রাপ্ত তাদের বলা হয় কয়েদি, আর যাদের মামলা বিচারাধীন তাদের বলা হয় হাজতি।
গাজীপুর জেলা কারাগারের জেলার ফোরকান ওয়াহিদ জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কারাগারে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এ দিন সকাল ৭টার দিকে বন্দিদের দেওয়া হয়েছে নাস্তা। নাস্তায় ছিল পায়েস এবং মুড়ি। সকাল সাড়ে ৮ টায় কারাগারের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত। কারা কর্মকর্তা ও বন্দিরা এক সঙ্গে নামাজ পড়েছেন। দুপুরে দেওয়া হয়েছে ভুনা খিচুরি, মাছ ও ডিম। আর রাতে খাবার দেওয়া হচ্ছে পোলাও, গরুর মাংস, সালাদ, মিষ্টি, কোল্ড-ডিঙ্কস, পান সুপারি।
তিনি আরো জানান, বন্দিরা নিজেদের ইচ্ছামতো খেলাধুলা, সাংস্কুতিক অনুষ্ঠান করছেন। মঙ্গলবার এ কারাগারে অনুষ্ঠিত হবে স্টাফ-বন্দি প্রীতি ত্রিকেট ম্যাচ।
কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় করাগার-২ এর ডেপুটি জেলার মোঃ আবুল হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ফিন্নি আরা মুড়ি নাস্তা দেওয়া হয়েছে। দুপুরে দেওয়া হয় সাদা ভাত, আলুর দম, রুই মাছ। রাতে গরুর মাংস, মুরগির মাংস, পোলাও, ডিম, সালাদ, মিষ্টি ও পান সুপারি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে।
ঈদ উপলক্ষে রবিবার গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ডঃ দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ন কবীর জেলা কারাগার এবং কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের চারটি কারাগারে বন্দি হাজতি ও তাদের সন্তানদের কাপড় বিতরণ করেছেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, কয়েদিদের নির্ধারিত মান অনুযায়ী সরকার পোশাক দেয়। আর যারা হাজতি আছে, তাদের পোশাক দেওয়ার পদ্ধতিটা এখনও চালু হয়নি। পরিদর্শনে এসে দেখেন, তাদের পোশকের প্রয়োজন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঈদ উপহার হিসেবে হাজতিদের পোশাক বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে অনেকে হতদরিদ্র ও বাচ্চা আছে। লোকাল অভিভাবক হিসেবে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান তিনি।