শনিবার ● ১ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিলেটে বন্যায় ৪ উপজেলাবাসীর দুর্বিষহ জীবন যাপন
সিলেটে বন্যায় ৪ উপজেলাবাসীর দুর্বিষহ জীবন যাপন
সিলেট জেলা প্রতিনিধি :: (১৭ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় বেলা ১২.২৮মি.) সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পানি ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় মেইন টাউনের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় চরম অবনতি দেখা দিয়েছে।
এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ সুমন জানিয়েছেন, নারাইনপুর গ্রাম সহ ডাইকের বাজার সংলগ্ন রাস্তা ও বালাগঞ্জবাহী সুইচ গেইট এবং প্রদান সড়ক অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বাড়ীঘর সহ পানির নিচে তলিয়ে গেছে ও বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ার কারনে রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মানুষের বাড়ীতে রাস্তাতে পানি হওয়ায় পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
কয়েক দিনের টানা বর্ষনে গোলাপগঞ্জে সুরমা-কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পরেছে। কয়েক হাজার লোক পানি বন্ধি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপজেলার বুধবারীবাজার, আমুড়া, ঢাকাদক্ষিণ, ভাদেশ্বর উত্তর বাদেপাশা এবং শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের ব্যপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে হাওরাঞ্চল এলাকার রাস্তাঘাট, দোকানপাট এবং ফসলী জমি বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। উত্তর বাদেপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ জানান ইতিমধ্যে তার ইউনিয়নের শান্তির বাজার, সুপাটেক,জামিরা, আনন্দপুর, কালাইম, বাগলা, মিরেরচক, বাদেপাশা, বড়কান্দি, ইসমাইলকান্দি, মোল্লার চক, আমকোনা, খাগাইল, হাজির কোনাসহ প্রায় ১৫/২০টি গ্রামের মানুষ পানি বন্ধি রয়েছেন। শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের হাকালুকি হাওর সংলগ্ন রাংজিয়ল, ইসলামপুর, নুরজাহানপুর, কালিকৃষ্ণপুরসহ বেশ ক’টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।
শরীফগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান এমএ মুহিত হিরা, জানান বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। ইউপি সদস্য কবির আহমদ, কবিরুল ইসলাম ও উবায়দুল্লাহ জানিয়েছেন উল্লিখিত গ্রাম গুলোতে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দেয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিগত দিনে বন্যার পানিতে তাদের শেষ সম্বল ধানি জমি তলিয়ে যাওয়ায় সেখানকার কৃষক পথে বসেছে। কাচা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ্যামোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হয়ে সেখানকার মাছ এবং হাসের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হওয়ায় মৎস্যজীবিরা চোখে অন্ধকার দেখছে। বর্তমানে আবারো বন্যা দেখা দেয়ায় সর্বস্ব হারাতে বসেছে। অত্র এলাকাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দূর্গত এলাকা ঘোষনা দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়াও বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও বিয়ানীবাজার উপজেলার ৭ ইউনিয়ন পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বিয়ানীবাজার পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদি পশুও নিরাপদ স্থানে সরাচ্ছেন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা। বুধবারও সিলেটের সাথে বিয়ানীবাজারের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে দুই পয়েন্ট কমে বিপদ সীমার ২১ পয়েন্টের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের আরও বেশ কিছু অংশ তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে সিলেটের সাথে যোগাযোগের বিকল্প সড়ক বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কে আশি ভাগ অংশ।
৩০ জুন বৃহস্পতিবার বিয়ানীবাজার উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ও পৌরসভা পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু: আসাদুজ্জামান ও পৌর মেয়র আব্দুস শুকুর।
বন্যা কবলিত এলাকার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে সাড়ে ১ টন ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসনের কাছে এ ত্রাণ এসে পৌছাবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু: আসাদুজ্জামান।
সরেজমিন বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া, লাউতা, মুড়িয়া ও বিয়ানীবাজার পৌরসভার ৮০ভাগ এলাকার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছেন। এসব ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করা মানুষজন আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদি পশুগুলো উচু স্থানসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নিয়ে রাখা হচ্ছে। খাড়াভরা এলাকার বন্যা কবলিত মজির উদ্দীন বলেন, নদীর পানি তোড়ের ঘর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
বিয়ানীবাজারের মেওয়া এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। বন্যায় ৭ ইউনিয়ন ও পৌররসভার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুবাগ, শেওলা, লাউতা ও তিলপাড়া ইউনিয়নের অধিবাসীরা।
এদিকে, শুক্রবার সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহসড়কের যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। দূরপাল্লার বাস ও মাল বোঝাই ট্রাক সীমিত আকারে চলাচল করেছে। সড়কের বেশ কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়া অটোরিক্সা, মাইক্রো চলাচল করেনি। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রি। সড়কের ডুবে যাওয়া অংশ মানুষজন টেক্ট্রর ও পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে দেখা গেছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, বন্যার পরিস্থিতি দু-একদিনের মধ্যে উন্নতি হবে বলে আমাদের আশা। এরই মধ্যে নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, সরকারি ত্রাণ সামগ্রী আজকের মধ্যে পৌঁছে যাবে। আমরা চেষ্টা করবো দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে এসব ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার।
এছাড়া, জকিগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষও পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
সিলেটর চাঁর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতি হয়েছে। উপজেলাগুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। প্লাবিত অঞ্চল ছাড়াও পানিবন্দী কয়েক হাজার মানুষ যাদের বসতঘরে পানি ঢুকেছে তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। উপজেলাগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। হাট-বাজার বন্ধ রয়েছে। পূর্ব বাজারের রাস্তায় বুকসমান পানি। কাঁচা বাজার, মাছের বাজার বন্ধপ্রায়। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখা না গেলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটের সাথে পণ্যমূল্য বাড়বে। বাজারকে কেন্দ্র কর আরো কয়েকশ’ পরিবারের রুটি রুজির সংস্থান হয়। এসব পরিবারে এখন হাহাকার ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। বন্যায় চাঁর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।