বুধবার ● ৫ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাঙ্গুনিয়াতে ফের পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ৫ হাজার পরিবার
রাঙ্গুনিয়াতে ফের পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ৫ হাজার পরিবার
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :: (২১ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪০মি.) রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরেও পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরানো যাচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে গত দুই দিন ধরে ব্যাপক মাইকিং করে সচেতন করার চেষ্ঠা করা হলেও মৃত্যুর আতঙ্কের মাঝেও বসবাসকারী পরিবারগুলো নিরাপদে আশ্রয়ে যাচ্ছে না। সরকারিভাবে কোন আশ্রয়ন কেন্দ্র না খোলায় ঝুঁকিতে বসবাসকারীরা নিরাপদে আসতে পারছেন না বলে তারা জানায়। এভাবে এখনো পাহাড়ের পাদদেশে ফের মৃত্যু ঝুঁকিতে বাস করছে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার। আগের চাইতেও এখন টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তাই পুনরায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই উপজেলার গুমাই বিল, উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিসি সড়ক, পারুয়া ডিসি সড়ক, বোগাবিল সহ বিভিন্ন মাঠ-ঘাট পানিতে ভরে গেছে। ছোট-বড় পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে ইতিমধ্যেই ভেঙ্গে পড়েছে আভ্যন্তরিণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এভাবে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে ফের ব্যাপক প্রাণহানীসহ আরো বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় গড়ে তোলার সামর্থ্য না থাকায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরছে না বলে বসবাসকারীরা জানিয়েছেন।সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পোমরা, বেতাগী, পৌরসভার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল, চন্দ্রঘোনার বনগ্রাম, সরফভাটা, শিলক, পদুয়া, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, পারুয়া, হোছনাবাদ সহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন প্রায় ৫ হাজার পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও দরিদ্র পরিবার হওয়ায় বাধ্য হয়ে সেখানে থাকছেন বলে জানিয়েছেন তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকায় মাইকিং সহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এতেও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরছেন না বসবাসকারী জনসাধারণ। উল্টো সম্প্রতি পাহাড় ধসের ঘটনায় ঘর ছাড়া অনেক পরিবার আশ্রয়ন কেন্দ্র সহ নিরাপদ স্থান থেকে ফের পাহাড়ের পাদদেশেই ফিরে গেছে।পারুয়া ইউনিয়নের জঙ্গল পারুয়া এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আব্দুল কাদের সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ‘পাহাড়ের পাশ থেকে ইউপি সদস্য সহ বিভিন্ন সময় মাইকিং করে সরে যেতে বলছে। কিন্তু আমরা গরিব অসহায় পরিবার। পৈত্রিক ভিঠা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে এখানে থাকতে হচ্ছে। দিনের ভরণ পোষণ দিনেই জোগাড় করি। এই স্থান থেকে সরে অন্য কোথাও গিয়ে ঘর বেঁধে থাকবো সেই সামর্থ্য আমাদের নেই।’চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম কলাবাইজ্জা ঘোনা এলাকার বাসিন্দা নাছিমা আক্তার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ‘দীর্ঘ দিন যাবৎ আমরা পাহাড়ে ঘর বেঁধে বসবাস করছি। এখানেই আমাদের সবকিছু। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’ পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মৃত্যু আসলে সব জায়গাতেই আসবে। সরকার যদি আমাদের অন্য কোথাও বসবাসের জায়গা করে দেন তবে আমরা যেতে পারবো। মাইকিং করে সচেতন করলেও আমরা কোথায় থাকবো কিভাবে থাকবো, কি খাব সেই ধরণের কোন কিছু তো বলছে না।’
রাজানগরের বোগাবিল এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করা স্থানীয় দিন মজুর আব্দুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ‘দিন মজুরের কাজ করি আমরা। এখানে পাহাড়ের পাদদেশে কোন মতে ঘর বেঁধে থাকি। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কি করবো, যাব কোথায় ? নতুন জায়গা কিনে কিংবা ঘর ভাড়া করে থাকার সামর্থ আমাদের নেই। সরকার যদি আমাদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে মনে হয় তবেই আমাদের জীবন রক্ষা হবে।’ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ‘ আমি নিজে পাহাড়ি অঞ্চলে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝাচ্ছি। তাদের সরিয়ে নিতে কাজ করছি। মাইকিং করছি। ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের সচেতন করার কার্যক্রম চালাচ্ছি।’চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গতকাল (৪ জুলাই) থেকে পুনরায় ইউনিয়নে পাহাড় ধসে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক মাইকিং করা হয়েছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এদের কেউ কেউ সরে গেলেও অধিকাংশ বসবাসকারী মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে।’রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ‘রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউয়িনে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে কাজ করছে প্রশাসন। দিন-রাত বিভিন্ন স্পটে গিয়ে ও ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদে সরে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের সচেতন করতে মাইকিং সহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যহত আছে। সরকারি ভাবে উপজেলায় কোন আশ্রয়নকেন্দ্র না থাকায় আফাতত নিকটস্থ স্কুল-কলেজ সহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানে থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’