শুক্রবার ● ৭ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » শনিবার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে রাজন হত্যার : রায় কার্যকর নিয়ে শঙ্কা
শনিবার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে রাজন হত্যার : রায় কার্যকর নিয়ে শঙ্কা
হাফিজুল ইসলাম লস্কর, সিলেট প্রতিনিধি :: (২৩ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.০৫মি.) সিলেট’র ইতিহাসে ন্যক্ক্যার জনক হত্যাকান্ড। যে হত্যাকান্ড সিলেটবাসীর কপালে কলংক লেফন করে। বহুল আলোচিত শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল ৭ জুলাই শনিবার। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই চুরির অপবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেখপাড়ায় নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয় শিশু রাজনকে।
নিহত শিশু রাজন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) এর জালালাবাদ থানা এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। রাজনকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ছাড়ে নির্যাতনকারীরা। অতঃপর ঐ ভিডিও চিত্র প্রচারের পর সিলেটসহ দেশবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এরপর সকল আসামীকে স্থানীয়দের সহযোগীতায় গ্রেফতার করা হলে শুরু হয় বিচার কাজ। সর্বশেষ চলতি বছর ১১ এপ্রিল নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে রায় দেয় হাইকোর্ট। এতে প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন রায় কার্যকর না হওয়ায় আইনের ফাঁক দিয়ে আসামীদের বের হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে রাজনের পরিবার। পুত্র শোকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রাজনের মা লুবনা বেগম।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৮ জুলাই চুরির অপবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন শেখপাড়ায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বাদেয়ালি গ্রামের সবজি বিক্রেতা শিশু রাজনকে। লাশ গুম করার সময় ধরা পড়েন আসামী মুহিদ আলম। রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম ঘটনার পরই দ্রুত বিদেশে পালিয়ে যায়।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে ১৫ অক্টোবর সৌদি আরব থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনে পুলিশ। পরে দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে ওই বছরের ১৬ আগস্ট ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয় আদালতে। ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে এই মামলার বিচার শেষ করে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালত। ওই বছরের ৮ নভেম্বর দেয়া রায়ে মামলার প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন, ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল আহমদ। এছাড়া আসামি নূর মিয়ার হয় যাবজ্জীবন সাজা। কামরুলের এই সহযোগীই রাজনকে নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করেন, তারপর ছড়িয়ে দেন ইন্টারনেটে। কামরুলের তিন ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে সাত বছর করে দন্ড দেয় আদালত। এক বছর করে সাজা হয় দুলাল আহমদ ও আয়াজ আলীর। আসামিদের মধ্যে জাকির হোসেন পাভেল এবং কামরুলের ভাই শামীম আহমদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
এরপরই নিম্ন আদালতের ফাঁসির রায় ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। এরপরই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। দ্রুত প্রস্তুত করা হয় পেপারবুক। এরপরই শুনানির জন্য মামলাটি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি পেপারবুক পাঠের মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত এই শিশু হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি হাইকোর্টে শুরু হয়।
চলতি বছর ১১এপ্রিল শিশু রাজনকে হত্যার দায়ে প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল আহমদ। এ ছাড়াও যাবজ্জীবন দন্ড প্রাপ্ত আসামি নূর মিয়ার সাজা হ্রাস করে ৬ মাসের দন্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ রায় দেয়। পরে শাস্তি মওকূফের আবেদন করে আসামীরা উচ্চ আদালতে রিবিউ আবেদন করে। রিবিউয়ের রায় না হওয়ায় এখনো মামলা চলছে।
এ ব্যাপারে রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, সন্তান হারানোর ব্যথা এখনো তাকে তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিনিয়ত তিনি তার সন্তানের শূন্যতা অনূভব করেন। সন্তানের কষ্ট হবে ভেবে তিনি হাজারো কষ্টে থেকে তাকে কোথাও কাজ করতে দেননি। আর সেই ভয়ের কাছেই তাকে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এখনো তিনি রায় কার্যকর নিয়ে শঙ্কায় আছেন। যখন আসামীদের রায় কার্যকর হবে তখন তিনি মনে করবেন তার পুত্র হত্যার বিচার পেয়েছেন। তার পূত্র হত্যার বিচার এত দ্রুত অগ্রসর হওয়ার কারনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
তাদের কারণে আজ এ পর্যন্ত বিচার কাজ হয়েছে। তাছাড়াও তার এ দুর্যোগঘন মূহূর্তের সময় যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন তাদের কারণে তিনি সংসার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ক্যাপ ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত সিএনজির আয় দিয়ে আর চাকরির টাকা দিয়ে তার পরিবার ও পুত্র সাজনের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজনের মা লুবনা বেগম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, রাজন মারা যাওয়ার পর থেকে একটি রাতও তার ঘুম হয়নি । এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠে তার সন্তানের হাসি মুখ। তিনি কখনেই ভাবতে পারেননি তার আগে তার পুত্রকে হারাতে হবে। তার এখন একটাই দাবী যত দ্রুত সম্ভব তার সন্তান হত্যার বিচার যেন কার্যকর করা হয় । যে দিন রায় কার্যকর করা হবে সেদিনই তিনি মনে করবেন তার রাজন হত্যার বিচার পেয়েছেন। আর যেন তার মত কোন মা’কে এভাবে অকালে তার সন্তান হারাতে না হয়।