শনিবার ● ৮ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » জেনে নিন ইয়াবা কি ?
জেনে নিন ইয়াবা কি ?
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম :: (২৪ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩.২০মি.) ইয়াবা আসলে কী জিনিস : এর মূল শব্দ থাই থেকে উৎপত্তি । সংক্ষিপ্ত অর্থ পাগলা ওষুধ। অনেকে একে বলে ‘ক্রেজি মেডিসিন’ বলেন । মূল উপাদান মেথঅ্যামফিটামিন। ইহা একটি নেশা জাতীয় ওষুধ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইযাবা কে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন: হিটলার চকলেট, ক্রেজি মিডিসিন, হিটলারস্ ড্রাগ, সাবু, বুলবুলিয়া , ইন্ডিয়াতে বলে ভুলভুলাইয়া, ফিলিপাইনে ও ইন্দোনেশিয়ায় বলে শাবু,উওর থাইল্যান্ডে এর নাম চাকোস, সাউথ আফ্রিকায় বলে টিংকু, ব্রাজিলে বলে বালা ও বাংলাদেশে ও ভারতের কোন কোন এলাকায় ইয়াবাকে ”বাবা” ও বলে ইত্যাদি / ইয়াবা তে কি কি থাকে ? (মেথঅ্যাম্ফিটামিন ৩৫+ ক্যাফেইন ৬৫% = ( ইয়াবা বা হিটলার চকলেট)। ( Ingredients)
ইয়াবার মুল উপাদান হল মিথাইল অ্যামফিটামিন ৩৫% + এবং ক্যাফেইন – ৬৫% = ইয়াবা আবার মিথাইল অ্যামফিটামিন তৈরি করা হয় ephedrine ২১% + এবং psuedoephedrine ৩৫% থেকে । ephedrine হচ্ছে ফুসফুস থেকে কাশি বাহির করার একটি ঔষধ , অন্য দিকে psuedoephedrine তৈরি করা হয় Acetone + Rubbing and isopropyl alcohol + Iodine + Starter fluid (ether) + Gas additives (methanol)+ Drain cleaner (sulfuric acid)+ Lithium batteries+ Rock salt+ Matchbooks (red phosphorus) = psuedoephedrine যা আধুনিক ভাবে ১০০০ পিচ তৈরি করতে ৮ ঘন্টার প্রয়োজন হলে এই বিষাক্ত পদার্থ উৎপাদন করতে গিয়ে কার্বন লেভেল ৬ গুন বৃদ্ধি পায় ।
হিস্ট্রি অব মেডিসিন
একটু বেশী লিখলাম এই কারণে — বাংলাদেশে প্রতি বছর ড্রাগস লেভেল -এর আওতায় , শুধু ইয়াবাতেই ১০ লাখের ও বেশী ছেলে মেয়ের জীবন বিপন্ন হইতেছে- তাই সকলের জেনে রাখা ভাল বা জেনে শুনে কেউ যদি নষ্ট হয়, তখন মনে করব সে তার নিজের ইচ্ছাতেই নষ্ট হল- তবে ইউ কে তে ইয়াবার তেমন মার্কেট নাই ভিন্ন কারণে। সর্ব প্রথম ১৯১৯ সালে জাপানে এম্ফিটামিন থেকে ইয়াবা’র মূল উপাদান মেথএম্ফিটামিন তৈরি করা হয় ।যদি ও সে সময় এই দুটি রাসায়নিক (এম্ফিটামিন এবং মেথএম্ফিটামিন) নাকের ছিদ্র খোলা রাখার ঔষধ (Nasal Decongestant) এবং ব্রঙ্কিয়াল ইনহেলার (Bronchial Inhaler) হিসেবে ব্যাবহার করা হত –
পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন, জার্মানী এবং জাপান তাদের সৈনিকদের শ্রান্তি বিনোদনে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে জাগিয়ে রাখা সহ মানশিক পার্ফর্মেন্স কে উন্নত রাখার কাজে ভিন্ন ভাবে মেথএম্ফিটামিন ব্যবহার করা হয় (নিদ্রাহীনতা, মনকে উৎফুল, চাঙ্গা রাখার জন্য ) এবং এতে সেনারা হতো হিংশ্র, ক্লান্তিহীন ও আগ্রাসী এবং অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনকারীদের কে দিয়ে আত্মহত্যা জাতীয় সুইসাইড করানো হত, সে জন্য স্কোয়াড টিমের সেনারা ইয়াবাই বেশী ব্যাবহার করত।
প্রমান অনুসারে ইয়াবা আসক্ত হয়ে যুদ্ধ ফেরত সেনারা মানসিক অবসাদ গ্রস্ততায় ভুগে অনেকে আত্মহত্যা বা আরও অনেক হিংস্র কাজ করেছে বা অনেকেই নিজে নিজে গুলি করে মারা গিয়েছে । এরপর ই ১৯৫০ সালে মেথএম্ফিটামিন ট্যাবলেট জনগনের হাতের নাগালে চলে আসে। কারন তখনকার সময়ে শ্রমিক ঘাটতি ছিল প্রচুর , সে জন্য অনেক কেই বাধ্য হয়ে বাড়তি কাজ করতেই হত , আর তখন শ্রমিকরা ইয়াবা সেবন করতেন আলস্য, ক্ষুধা দূরে থাকা, নিদ্রায় না পড়া, যৌন শক্তি বৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য বা এর পর পর ই ছাত্র, এথলেটিক্স ও অন্যান্য পেশার সবাই ইয়াবা গ্রহণে আগ্রহ বেড়ে উঠে । এরপর – ধীরে ধীরে এর কুফল বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উদঘাটিত হতে থাকায় বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। বা এখন আর ইউরোপিয়ান বা অ্যামেরিকান দেশ সমূহে ইয়াবার বাজার নাই বলা যায় ।
সাউথ এশিয়ায় ১৯৮৯ সালে মিয়ানমারে জন্ম নেয়া ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (United Wa State Army বা UWSA) নামের একটি ইন্সারজেন্ট দল ও হিটলার সেনাদের মত কাজ করে বা সেখানে প্রথম একচাটিয়ে ব্যাবসা ও শুর করে এবং একক ভাবে সর্ববৃহৎ ইয়াবা প্রস্তুতকারী/সরবরাহকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় মিয়ানমার । এরপর ইহা কোকাং নামের আদিবাসী (এই গোষ্ঠীর লোকজন পূর্বে আফিম এবং হেরোইন উৎপাদন এর সাথে জড়িত ছিল বেশী) সম্প্রদায়ের মাধ্যমে থাইল্যান্ডে ছড়িয়ে পরে এবং সেখানে কয়েকশত কোম্পানি ও গড়ে উঠে (বা এখন ও ইয়াবার সর্গ স্থান থাইল্যান্ড কে বলা হয়) এরপর অতি সু কৌশলে ভারত ও বাংলাদেশে সেই বাজার ছড়িয়ে দেওয়া হয়, দেশের শীর্ষ কিছু কর্ণধারদের কে লোভ দেখিয়ে । , ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তী সময়ে ২০০০ সাল থেকে সীমান্তপথে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালান হয়ে তা দেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে কিন্তু দাম বেশী থাকায় সাধারণ পরিবারের ছেলে মেয়েরা কিনে সেবন করতে পারতনা বিধায় উচ্চ পরিবারের সন্তানরা ইয়াবার নেশায় আসক্ত হয়েছেন বেশী ।ইয়াবা কিভাবে কাজ করে ? এবং কেন সবাই খুবই সহজে আকৃষ্ট হয়ে যায় !
( ড্রাগস ক্রাইম অব সাউথ এশিয়া )
যেমন ঃ প্রথমে তার বিশেষ স্পর্শ কাতর বিষয় সমূহ বা অনুভূতি – যৌন উক্তেজনা, ঘুম, ক্ষুধা, চিন্তা মুক্ত থাকা – ইত্যাদির কথা বলে অন্যান্য বন্ধুরা খাওয়ানোর চেস্টা করে বা অনেকে মডার্ন পার্টি ডেন্সিং ইত্যাদির নাম করে সেখানে নিয়ে গিয়ে ভিন্ন মদ জাতীয় পানীয় সাথে মিশয়ে খাওয়ানোর চেস্টা করে,সে সময় বিশেষ কিছু ইতর ভদ্র মানুষের যৌন আকর্ষণ জাতীয় লোভ লালসা ঢোকে পড়লে, মহিলাদের কেই বেশী ট্রাপ করে । এরপর ও বিশেষ কিছু ড্রাগ ব্যাবসায়ি আছে যারা প্রথমেই সামাজিক ভাবে প্রতিস্টিত ব্যাক্তির ছেলে মেয়েদের অথবা ব্রিলিয়েন্ট ছাত্র/ ছাত্রী দেরকে ট্রাপ করার চিন্তা ভাবনা করে , এবং এতে করে উক্ত এরিয়ায় খুভ সহজেই ব্যাবসা প্রসারিত ও আধিপত ধরে রাখে, বা তাদের কে হেফাজত করতে ও দেখা যায় বড় বড় দেশ রক্ষাকারী ভক্ষকদের কে ও ! ইত্যাদি –
যারা প্রথম ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করে তাদের কাছে আঙুর, কমলা বা ভ্যানিলার ফ্লেভারের চকলেটের মতই মনে হবে, যার কারণে প্রথম সেবন কারী এর প্রচণ্ড ক্ষতিকর প্রভাবটুকু বুঝতে পারে না বরং – ৩০ মিনিট পর আস্থে আস্থে অন্যান্য স্পর্শ কাতর অনুভূতি সমূহ প্রকাশ পায় বা সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর পরিবেষে আছে মনে হবেই, ইয়াবার আনন্দ আর উত্তেজনা আসক্ত ব্যক্তিদের সাময়িকভাবে ভুলিয়ে দেয় জীবনের সব যন্ত্রণা। তারা বাস করে স্বপ্নের এক জগতে। এই ভয়ানক মাদক সেবন করলে মনে উত্ফুল্ল ভাব তৈরি হয়, মুড হাই হয়ে যায়।
তখন ! এভাবে দ্বিতীয় বারে, এমনিতেই তা সেবন করার ইচ্ছা জাগবেই এবং তৃতীয় বার থেকে আর কেউ বলা লাগেনা ইয়াবা সেবন করার জন্য – তখন আসক্ত কারী নিজে নিজেই খোঁজতে থাকবে বা এর জন্য যা যা করতে হবে সব কিছুই করে যাবে …অর্থাৎ সেই মরন নেশার জগত থেকে ফেরা ৯১% বেলায় অসম্বভ হয়ে পরে ।
৬০% মাদকসেবী ট্যাবলেটটি মুখেই গ্রহণ করে। অনেকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ওপর রাখা ট্যাবলেটের অপর প্রান্তে তাপ দিয়ে একে গলিয়ে ফেলে। এরপর সেখান থেকে যে বাষ্প বের হয়, তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে। আবার ট্যাবলেটটি গুঁড়ো করে, পানিতে মিশিয়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে শিরাপথে সরাসরি রক্তেও ঢুকিয়ে দেয় অনেকে | বেশি আসক্তরা শিরাপথেও এটা নিয়ে থাকে ।
ইয়াবা কিভাবে কাজ করে ? এবং সত্যি কি ইয়াবা যৌন শক্তি ও দেহের ওজন কমায় ?
ইয়াবা নাক দিয়ে টেনে গ্রহন করলে ৫/১৫ মিনিট এবং ট্যাবলেট বা ড্রিংকের সাথে সেবন করলে ৩০/৪০ মিনিট পর খুভ বেশী পরিমাণ অ্যাড্রেনালিন
(অ্যাড্রেনালিন হচ্ছে কিডনির গ্রন্থি নিঃসৃত এক ধরনের হরমোন। সাধারণত মানুষ ভীত বা রাগান্বিত হলে অ্যাড্রেনালিন হরমোন মানুষকে শান্ত ও স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। তবে অত্যধিক মানসিক চাপ বা অশান্তির সময় এ হরমোনের কারণে মানুষের চুলের রং পরিবর্তিত হয়ে যায়।)
এবং নরঅ্যাড্রেনালিনের (নরঅ্যাড্রেনালিনের নিউরোনে গমন প্রতিহত করে, ফলে বিসন্নতা কমে যায় এবং মনোভাবের উন্নতি ঘটে)
হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে এবং সেই সাথে মস্থিস্কের নিউরোট্রান্সমিটারে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন ঝরতে দেখা যায় বা মারাত্মক ভাবে উজ্জেবিত করে (ডোপামিন মস্তস্কের আনন্দ অনুভূতি বাড়িয়ে দেওয়ার একটি হরমোনের নাম), সেই ডোপামিন অন্যান্য এনজাইম কে প্রেস করে শক্তি যোগায় বা রিজার্ভ শক্তি থেকে তা বাড়িয়ে দেয়, সাধারণ উক্তেজনার চাইতে চাইতে ৬ গুন বেশী পরিমাণে ।
সে কারণে ড্রাগ সেবনকারীরা ইয়াবা সেবন করার পর নিজে নিজে ঘোড়ার মত শক্তি ও যৌনতা অনুভব করে বা সে সময় সে ৩/৪ দিন কিছু না খেলে ও তার তেমন অসুবিধা হয়না , তার কারন মেটাবোলিজম প্রক্রিয়া অন্যান্য সময়ের চাইতে ১০ গুন বেশী বৃদ্ধি পেয়ে লিভারের রিজার্ভ শর্করা ও ফ্যাট পুড়িয়ে দেয় , তাই উপস্থিত সময় দেখা যায় শরীরের মেদ কমে গেছে । বিষয় টি সত্য হলেও যখন পুনরায় খাবার ঠিকমত খেতে থাকে তখন লিভার আগের চাইতে দিগুণ ভাবে ফ্যাট ও শর্করা জমা করে রাখে তখন চামড়ার কোষ সমূহের ইলাস্ট্রিসিটি নষ্ট হয়ে স্থূলতা দ্রুত বৃদ্ধি পায় । তাই ওজন কমানোর নাম করে এ সব ড্রাগ সেবন করা মানেই নিজের ন্যাচারেল জিবন কে ধ্বংস করার সামিল –
ঠিক তদ্রূপ যৌন উক্তেজনা বাড়িয়ে দেয় সে কথা ও ঠিক কিন্তু কয়েকবার সেবনের ফলে আগের মত যৌন উক্তেজনা বৃদ্ধি পায়না । তখন ডোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হয় এবং ৩৭ মাসের ভিতরেই ৭৪% যৌন শক্তি হ্রাস পেয়ে এন্ড্রোজেন হরমোন সমূহ নিঃসরণ চিরস্থায়ী বন্ধ হতে দেখা যায় । অন্য দিকে ইয়াবা সেবনে ঘুম একেবারে কমিয়ে দেয় বা রিজার্ভ শক্তি বৃদ্ধির ফলে সাময়িক ক্লানিত চলে যায় তা ঠিক (কারন সিরাকার্ডিয়ান ক্লক বা বায়ো ক্লকের বাল্ব খুলে যায় বিধায় ঘুম হয়না এবং সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়) হলেও তা ক্ষন স্থায়ী , যত সময় ইয়াবার কর্ম ক্ষ্যামতা থাকবে ঠিক তথো সময় এর গুন থাকবেই অর্থাৎ সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী বরং ক্যাফেইন যোগ করার কারণে কোন কোন সময় কোকেন ও মিথাইল অ্যামফিটামিনের চেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপক , সে জন্য খুব তাড়া তাড়ি কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রের বেশী ক্ষতি কারক ।
রিসার্চ অনুসারে : একজন নতুন সেবনকারী ১০ মিগ্রা সমপরিমান (মেথঅ্যাম্ফিটামিন ) ইয়াবা ট্যাব্লেট সেবন করলে প্রথম ধাপেই সেই সুখ, শক্তি বা যৌন উক্তেজনা প্রবল ভাবে অনুভব করবেই কয়েক মিনিটের ভিতর যা কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে , দ্বিতীয় ধাপে মাত্রা কিছু বাড়াতে হয় ২৫/ ৫০ মিগ্রা তৃতীয় ধাপে ৬০ মিগ্রা এর উপরে এভাবে নতুন ড্রাগ সেবন কারী পুনরায় প্রথম ধাপে আর ফিরে আসতে পারেনা , যা ৮৭% বেলায় ২৮ থেকে ৯০ দিন ধরা হয় । ( প্রথম স্থরেই যদি উক্ত ড্রাগ সেবনকারীকে কঠিন নিয়মের আওতায় নিয়ে আসা যায় তা হলে ১০০% আসা করা যায় তার মস্থিস্কের নিউরোট্রান্সমিটার (মেথঅ্যাম্ফিটামিন ) ইয়াবার প্রতি আসক্তা কমানো সম্বভ ।
ইয়াবা সেবনে কি কি সমস্যা দেখা দেয়?
নতুন পর্যায়ে নেশাকারীদের যা দেখা যায় : ২য় থেকে ১২ সপ্তাহ )
বেশ কয়েক ঘন্টা পরে (৮/১০ ঘন্টা পর , নতুনের বেলায় ২৬ ঘন্টা ) ইয়াবা ব্যবহারকারীর যা অনুভব হয় ( সে সময় যদি ইয়াবা সেবন না করে) চিন্তা শক্তি হ্রাস, ক্ষুধা কমে যাওয়া , শ্বসন এবং হাইপোথারমিয়া (শরীরের তাপমাত্রা একেবারে নিম্নে চলে যাওয়া বা নর্মাল তাপমাত্রা বজায় রাখতে অক্ষম) সেই সাথে • আনন্দ-চঞ্চল অবস্থার স্থিরতা – অনিদ্রা– বিরক্ত এবং আগ্রাসনি মনোভাব — বমি বমি ভাব — খারাপ স্মৃতিচারণায়, শুকনো মুখ, এবং ঘাম– মস্তিষ্কের মধ্যে ছোট রক্তনালীসমূহ ড্যামেজ – বাড়তি সতর্কতার ভাব , অনিদ্রা, এবং মাংসপেশির ব্যাথা – অতিরিক্ত হৃদস্পন্দন, শিরার টান , রক্তচাপ, এবং শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত পরিবর্তন ইত্যাদি দেখা যায় ।
পুরাতন পর্যায়ে নেশাকারীদের যা দেখা যায় : (১৬ সপ্তাহের পর ) শরীরে কম্পন বা কাঁপুনি – উচ্চরক্তচাপ– হ্যালিকাশ (বিভ্রান্তি মূলক মায়া, কল্পনা, দৃষ্টি, মিথ্যা কল্পনা বা আশ্বাসে সান্ত থাকা ,বাজে প্রলাপ,এবং অহেতুক বানোয়াট মিথ্যা কথা বলা যার প্রাসঙ্গিক বিষয়ের উপর মিল থাকে না ইত্যাদি) – মানসিক বিভ্রান্তি – হিংসাত্মক আচরণ– হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ শরীরের তাপমাত্রা এবং খিঁচুনি কখন ও সে কারণে মৃত্যু হতে পারে) উদ্বেগ, এবং ভয়–উত্কণ্ঠা, মানসিক বিভ্রান্তি এবং সৃতি শক্তির ক্ষতি ও নার্ভাস হওয়া – চুল চিড়তে থাকা সহ
সিজোফ্রেনিয়া (ইহা মানসিক একটি ব্যাধি , জীবন নিয়ে মিথ্যা বা ভ্রান্ত বিশ্বাস , সিজোফ্রেনিক রোগীদের ৫০ শতাংশ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মারা যায়)
হ্যালুসিনেসান : ( ইন্দ্রিয়জাত কোন উদ্দিপকের উপস্থিতি ছাড়াই কোন কিছু উপলব্ধি করা, যেমন- গায়েবি কোন শব্দ,অবাস্তব কিছু দেখা, কোন কিছুর স্পর্শ ,স্বাদ বা ঘ্রান অনুভব করা। অনেকেই তার সঙ্গে শত্রুতা করছে। তারা অনেক সময় মারামারি ও সন্ত্রাস করতে পছন্দ করে। কারও কারও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, খিঁচুনি হয়। খিটখিটে ভাব, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুর, নার্ভাসনেসে ভুগতে থাকে ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা। )
অবশেষে স্থায়ী ভাবে মস্থিস্কের বিকৃতি ঘটে ৬০% বেলায় অথবা মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠে । সে সময় হেপাটাইটিস অথবা এইডস ভাইরাস ট্রান্সমিশন হওয়ার সম্বাভনা বেশী থাকে এবং অন্যান্য কঠিন অসুখের মধ্যে ফুসফুস, কিডনি অথবা লিভারের যে কোন মারাত্মক অসুখের সৃষ্টি ইয়াবা দিয়ে যারা নেশা করে তাদের চেনার লক্ষণ গুলি কি কি ?
ইয়াবায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে আসলে সঠিকভাবে চেনার কোনো উপায় নেই। তবে তার আচরণগত কিছু পার্থক্যের কারণে ধারণা করা যেতে পারে।
ইয়াবা হলো মেথাফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণ। মাদকটি একাধারে মস্তিষ্ক ও হৃদ্যন্ত্র আক্রমণ করে। জেনে নিন একজন ব্যক্তির ইয়াবা সেবনের ফলে যে ধরনের শারীরিক ও আচরণগত পার্থক্য দেখা দেয়।
শারীরিক ও আচরণগত পার্থক্য
১.মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মনোসংযোগ বিচ্ছিন্ন মনে হয়।
২.নিদ্রাহীনতা। একজন ইয়াবা সেবনকারীর ঘুম অস্বাভাবিক ধরনের হয়ে থাকে। এরা বেশ কয়েক রাত পর্যন্ত একেবারে না ঘুমিয়ে থাকতে পারে।
৩.শারীরিকভাবে খিঁচুনি দেখা দিয়ে থাকে।
৪.খাওয়ার রুচি একেবারেই থাকে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে মিষ্টির প্রতি এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়ে থাকে।
৫.মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেয়। অর্থাৎ এরা কখন কী কাজ করছেন তার কোনো ধারণা থাকে। স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এমনকি এরা মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন।
৬.অতিরিক্ত ইয়াবা গ্রহণ হাইপারথার্মিয়া বা উচ্চ শারীরিক তাপমাত্রার কারণ হতে পারে।
৭.ইয়াবা সেবনকারীরা প্রায় সময়ই হতাশায় ভুগে থাকেন।
৮.দীর্ঘদিন ইয়াবা সেবনকারী একজনের স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
৯.এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকেন।
১০.ইয়াবা শান্ত স্বভাবের কোনো ব্যক্তিকে হিংস্র ও আক্রমণাত্মক করে তুলতে পারে।
১১.ইয়াবা গ্রহণে হ্যালুসিনেশন ও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইয়াবা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত কেননা নিয়মিত ইয়াবা সেবনে একজনের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, শরীরে কিছু চলাফেরার অস্তিত্ব টের পাওয়া, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন-অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে।
প্রতিরোধ:
ইয়াবা আসক্তি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা অনেক সহজ। সুতরাং প্রতিরোধের উপর বেশি মনোযোগ দেওয়া সবচেয়ে উত্তম । সামাজিক ভাবে ড্রাগে আসক্তকারিকে যতটুকু পারেন সাহায্য করা তবে অবশ্যই ড্রাগ ব্যাবসায়ি বা জোগান দাতাদের কে সামাজিক ভাবে ঘৃণা এবং তিরিস্কার করা উচিৎ । আমার ব্যাক্তিগত মতে ড্রাগ ব্যাবসায়িরা শুধু অপরাধী নয় এরা দেশ ও জাতীর শত্রু । একজন ড্রাগ ব্যাবসায়ির ধারা একটা দেশে লক্ষ লক্ষ তরুন তরুণী বিপথগামী হয়ে থাকে, যা অনেক সময় একটা দেশের শীর্ষ মেধা শক্তি বিনষ্ট হয়ে যায় । সে জন্য কঠোর আইন ও সামজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি খুভ বেশী গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ ।
চিকিৎসা : ইয়াবা কোকেনের সমপর্যায়ে স্নায়ু বিক উক্তেজক ( নারকটিক্স ) ও হরমোন স্টিমউলেটর বিধায় অনুগ্রহ পূর্বক কোকেন অধ্যায়ে বিস্থারিত দেখুন — তবে ইয়াবা সেবন কারী কঠোর নিয়ম মেনে চলতে পারলে ৮০% ভাল হওয়ার আসা করা হয়ে থাকে এবং সে জন্য । মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করা উচিৎ । সেই সাথে সাইকোথেরাপি ও অন্যান্য উপায়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা এবং আত্মীয়স্বজন ও প্রকৃত ভালো বন্ধুরও এ সময় একান্ত প্রয়োজন । খেয়াল রাখবেন কোন অবস্থায় যেন পুরানো বন্ধু, যারা ড্রাগের সাথে সহযোগী অথবা বিক্রেতার দেখা না পায় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা অথবা প্রয়োজনে আগের পরিবেশ সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে। সংগ্রহিত।