শনিবার ● ৮ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » ময়মনসিংহে অব্যবস্থায় চরম আমন বীজ সংকটে আবাদে প্রভাব দৃশ্যমান, লুকিয়ে চড়াদামে বিক্রি
ময়মনসিংহে অব্যবস্থায় চরম আমন বীজ সংকটে আবাদে প্রভাব দৃশ্যমান, লুকিয়ে চড়াদামে বিক্রি
ময়মনসিংহ অফিস :: (২৪ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫২মি.) ময়মনসিংহে সঠিক তদারকি ও অব্যবস্থার কারণে আমন বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা সদরসহ ১৩টি উপজেলায় আমন ধানের বীজের কৃত্রিম সঙ্কটের পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্যে ধানের বীজ কৃষকদেরকে না দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কৃষকদের কাছ থেকে বেশী দাম আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ অঞ্চলের কৃষকরা দিনের পর দিন বিএডিসির বীজ বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে ধর্ণা দিয়েও বীজ পাচ্ছেন না। বীজধানের সংকটের নামে ওই কেন্দ্রের পাশের দোকানেই ৬ থেকে ৭ শ’ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বিএডিসির বীজ ধান। বীজ বিতরণ কর্তৃপক্ষ বিএডিসি ও ডিলারদের কারসাজির কারণে খেসারত গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। বিপাকে পড়ে কৃষকরা চাহিদা অনুযায়ী বীজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক এলাকায় ধানের বীজ না পেয়ে বিএডিসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেছেন তারা।
আবার কোথাও কোথাও বীজ পাওয়া গেলেও দ্বিগুনেরও বেশী দামে বিক্রি করছে বিএডিসির ডিলারগণ। কৃষক বীজ না পেয়ে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলাসহ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বীজ বিপনন কার্যালয়ে হন্যে হয়ে ঘুরছে। বিএডিসির বীজ বিপনন কেন্দ্র কর্মকর্তাসহ বীজ ডিলারদের লুকোচুরির কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ কৃষক পর্যায়ের।
ময়মনসিংহ বিএডিসি সুত্রে জানা গেছে, আসছে আমন মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যে এ অঞ্চলে বিতরণের জন্য (জাত ভিত্তিক) চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৫৫৫ মেঃ টন বীজ। যা গত বছরের আমন মৌসুমে বিক্রিত বীজের প্রায় সম পরিমান। চলতি আমন মৌসুমে উল্লেখিত চাহিদাপত্রের বিপরীতে এক হাজার ৪০২ দশমিক ৩ মেঃ টন বীজ বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। এ সকল বীজের মধ্যে বিআর-১১-৬০ মেঃ টন, বিআর-২২- ১৮২ মেঃ টন, ব্রিধান-৩২- ১শত মেঃ টন, ব্রিধান-৩৪- ৫ মেঃ টন, ব্রিধান ৩৯- ৮ মেঃ টন, ব্রিধান-৪৯- ৯৮৭ মেঃ টন, ব্রিধান-৫২- ২০ মেঃ টন, বিনা-৭- ৪০ মেঃ টন ও হাইব্রীড- ৩শত কেজি।
জেলায় বরাদ্ধকৃত আমন বীজের মধ্যে উপজেলা বীজ বিক্রয় ও ডিলার পর্যায়ে সদর উপজেলায় ১৩৪ দশমিক ৫০০ মেঃ টন, মুক্তাগাছায় ৯৪.৫৫, ফুলবাড়ীয়ায় ৮৭.৭৫০, ত্রিশালে ১০৭. ৭৫০. ভালুকায় ৯৭.৭৫০. গফরগাঁওয়ে ১৬৯.৫৫, নান্দাইলে ১০৪.০৫, ঈশ্বরগঞ্জে ১০৫.০৫. গৌরীপুরে ৭৬.৭৫০, ফুলপুরে ৮৩.৫৫, তারাকান্দায় ৫২.৭৫০, হালুয়াঘাটে ৮৪.৭৫০ এবং ধোবাউড়ায় ৯৯ মেঃ টন বিভিন্ন জাতের ধান বীজ বিপনন করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিপনেন জন্য চাহিদার সমপরিমান বীজ বিএডিসি থেকে বরাদ্ধ দেয়ার পরও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমন ধানের বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অনিয়মের সবচেয়ে বেশী অভিযোগ উঠেছে নান্দাইল,ভালুকা,ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলায় বীজ বিতরণ নিয়ে।
নান্দাইল উপজেলা পরিষদ চত্বরে গত ২ জুলাই বীজের দাবিতে কৃষকেরা মানববন্ধন করেছেন । বিষয়টি জানার পর ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ফোন করেন। পরে প্রশাসনের শক্ত হস্তক্ষেপে অতিমূল্যে বিক্রয়কারী খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪৭০ বস্তাা আমন ধানবীজ উদ্ধার করে সোমবার প্রকৃত কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হয়েছে। গফরগাঁও উপজেলায়ও অনিয়মের চিত্র প্রায় একই পর্যায়ে। এসব এলাকায় জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ময়মনসিংহ বীজ বিপনন বিভাগের উপ-পরিচালক থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়েও সঠিক বীজ বিক্রয়ে কোন তদারকি না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ভূক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ। কৃষকদের আরো অভিযোগ বিএডিসির কর্মকর্তাসহ ডিলার সিন্ডিকেটের সমন্বয়ে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে বীজ বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
এ ব্যাপারে বিএডিসি ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ পরিচালিক (বীজ বিপনন) মোঃ আইয়ুব উল্লাহ বলেন, আমন বীজের কোন সংকট নেই। তবে জাত ভেদে সংকট থাকতে পারে। চড়াদামে বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও এবং জাত ভেদে চড়াদামে বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। যা নিয়ন্ত্রণ করতে উপজেলা পর্যায়ে তদারকি জোরদার করা হয়েছে।