বৃহস্পতিবার ● ২০ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » হরিণাকুন্ডু তৈলটুপি গ্রাম এখন গরু পালনে স্বাবলম্বী
হরিণাকুন্ডু তৈলটুপি গ্রাম এখন গরু পালনে স্বাবলম্বী
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের তৈলটুপি গ্রামের প্রায় শতভাগ কৃষাণ-কৃষানী গরু মোটা তাঁজা করন প্রকল্প গ্রহন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। এ গ্রামের সাড়ে ৪শত কৃষকের মধ্যে চারশত কৃষকই গরু মোটা তাঁজা করন প্রকল্প গ্রহন করেছেন। কৃষকদের পাশাপাশি উপজেলার অনেক বেকার যুবকও গরু মোটা তাঁজা করনের কাজ করে ধিরে ধিরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। প্রতি বছরই একেক জন কৃষক একাধিক গরু মোটা তাঁজাকরনের কাজ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে আর সেই সাথে এনেছে সংসারে স্বচ্ছলতা। তাছাড়া গরুর গোবর জ্বালানীর পাশাপাশি জমিতেও ব্যবহার হচ্ছে জৈব সার হিসাবে। গরুর গোবর জমিতে সারের চাহিদাও পুরণ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক কৃষক পরিবার। হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের দারিদ্র নিপিড়ীত একটি গ্রাম তৈলটুপি। এ গ্রামের হতদরিদ্র প্রায় চার শতাধিক কৃষাণ-কৃষানী তাদের দারিদ্র জয়ের লক্ষ্যে দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে গরু মোটা তাঁজাকরনের কাজ করে আসছে।
স্থানীয় বিভিন্ন বাজার ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা গরুর বাচ্চা ক্রয় করে ১-৩ বছর ধরে লালন-পালন করে মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কোরাবানীর ঈদের হাটে বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভ করছে। সেই সাথে পুরন করছে স্থানীয় ও দেশের মানুষের মাংসের চাহিদার একাংশ। অধিকাংশ কৃষকই প্রতি বছর এক থেকে দুটি গরু কোরবানি ঈদের ৫/৬ মাস আগে থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে মোটা তাজা করতে ব্যস্ত থাকে। এ কাজে কৃষকদের সাথে কৃষানী ও তাদের ছেলে মেয়েরাও সহায়তা করে থাকে। উপজেলার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক চাকুরির আশায় না ঘুরে গরু মোটা তাজাকরণ পদ্ধতিকে পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছে। এ গ্রামে সবচেয়ে বেশী গরু লালন-পালন কারেন আদিল উদ্দিন জোয়ারদার। তার বর্তমানে ৩০-৩৫টি গরু ও ৩ জন রাখাল আছে। পাকা গোয়াল ঘরে গরু রাখেন তিনি। কোরাবানীর ঈদের হাটে বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভ করছেন তিনি।
গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সকিনা নামে একজন বিধবা মহিলা। ২৫ হাজর টাকা নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করে এখন তার পুজি ৩ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি ছেলেময়ে মানুষ ও সংসার চালিয়েছেন তিনি। নাজিম উদ্দীন জানান, ৩০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। ঔষুধ ও খাদ্যের দাম দিনদিন বাড়ছে। এতে লাভের পরিমান আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা ঠিকভাবে আসে না বলে তিনি জানান। গ্রামের গৃহিনীরা জানান, তারা তাদের বাড়ীর পুরুষদের গরু লালন-পালনে সহায়তা করে থাকেন। আদিল উদ্দিন জোয়ারদারের গোয়ালের শ্রমিক মাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন।
এ ছাড়াও গরুর বিষ্টা (গোবর) জ্বালানী পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার এর পরির্বতে গোবর জমিতে ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি সহ জর্মির উর্বরা শক্তির বাড়ছে এবং ব্যাপক ফসলের ফলন বাড়ছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, ঝিনাইদহ জেলায় প্রচুর গরু মোটা তাঁজা করন করা হয়। এর মধ্যে তেলটুপি গ্রামে বেশী হয়। এদেরকে সরকারীভাবে আর্থিক সাহায্য করা হলে দেশীয় বাজারের মাংশের চাহিদা পুরন করে বিদেশেও রপ্তানী করতে পারত। ফলে অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গ্রামটি সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারত। কৃষকেরা দাবী করে বলেন, কোন ধরনের সরকারী পৃষ্টপোশকতা তারা পায়না। তারা আশা পোশন করেন সরকার তাদের এ ব্যাপারে সহায়তা করলে তারা দেশীয় বাজারে মাংসের চাহিদা পুরন সহ অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারবেন।