শনিবার ● ২২ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » শিরোনাম » সিলেটে ৭শত বছর’র ঐতিহ্যবাহী ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব
সিলেটে ৭শত বছর’র ঐতিহ্যবাহী ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব
হাফিজুল ইসলাম লস্কর,সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেট শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের ৬৯৮তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে ২১ জুলাই শুক্রবার ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২১ জুলাই জুমার নামাজের পর দরগাহে মিলাদ শেষে ভক্ত-অনুরাগীরা শহরতলির লাক্কাতোড়া ও মালনিছড়া চা বাগানের টিলা থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করেন।
এ উপলক্ষে সকাল থেকে ‘লালে লাল- শাহজালাল’, ‘শাহজালাল বাবা কি- জয়’, ‘৩৬০ আউলিয়া কি- জয়’, ‘ওলি আউলিয়া কি- জয়’-এ রকম নানা স্লোগানে লাল গামছা বা চাদর গায়ে হাজার হাজার ভক্তরা মিছিলে নামেন সিলেটের সড়কে।
হজরত শাহজালালের (রহ.) দরগাহ থেকে শুরু করে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট, চৌকিদেখি হয়ে সোজা লাক্কাতোড়া চা-বাগান পর্যন্ত মিছিল করেন তারা। ফেরার পথে লাল গালিচার মিছিলে যুক্ত হয় গাছের সবুজ লতাপাতা।
ওরসের শিরনিতে ব্যবহৃত কাঠ সংগ্রহের ওই উৎসবকে লাকড়ি তোড়ার উৎসব বলা হয়ে থাকে। দরগাহের বার্ষিক ওরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি সংগ্রহের এ আনুষ্ঠানিকতায় আজ যোগ দেন হাজার হাজার ভক্ত।
সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল সহকারে ভক্তরা অংশ নেন।
৭০০ বছর ধরে ওই উৎসব চলে আসছে। শাহজালাল (রহ.)-এর জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সেই ঐতিহ্য এখনও অব্যাহত রয়েছে।
জনশ্রুতি আছে ৭০৩ হিজরির এই দিনে হজরত শাহজালাল (রহ.) তার সঙ্গীদের নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় শেষে কুড়াল হাতে পাহাড়-টিলাবেষ্টিত (বর্তমান লাক্কাতুরা চা-বাগানের নির্ধারিত টিলা) উত্তর প্রান্তের গভীর জঙ্গলের দিকে যেতে থাকেন। সঙ্গীরা তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। তিনি নিজ হাতে লাকড়ি সংগ্রহ করেন। পরে সেই জায়গার নাম হয় লাকড়ি তোড়ার (ভাঙা) টিলা। যা বর্তমানে লাক্কাতোড়া চা-বাগান নামেই প্রসিদ্ধ।
দরগাহের অফিস সূত্র জানায়, শাহজালালের (রহ.) জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সে ঐতিহ্য রক্ষা করে ৭০০ বছর ধরে উরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি তোড়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। সংগ্রহ করে লাকড়ি নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়। আর এসব লাকড়ি উরসে শিরনির রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
প্রতি বছর দেশের প্রত্যন্ত জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান সিলেটে লাকড়ি তোড়া উৎসবে যোগ দেন। ভক্তরা ও অনুসারীরা লাকড়ি তোড়ার ফয়েজ ও আকর্ষণ অনেক বেশি বলে মনে করেন তারা।