সোমবার ● ২৪ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » বহিরাগত সমস্যায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম
বহিরাগত সমস্যায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম
সিলেট প্রতিনিধি :: (৯ শ্রাবণ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.৫৮মি.) সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অবকাঠামোগত যেন সুরক্ষিত এক দুর্গ। টিলাভূমির মতো সাড়ে তিন একর জায়গা। পাশাপাশি ভবনগুলো দেখতে ইউকাঠামোর মতো। মাঝখানের ফাঁকা অংশ ক্যাম্পাস। আছে বিরাটাকার ফটকবিশিষ্ট সীমানা প্রাচীর।
সুরক্ষিত অবকাঠামোগত এমন সুরক্ষিত অবস্থার মধ্যেও কেন ঘন ঘন ঘটছে এই হামলা ও অনাকাংখিত ঘটনাগুলো। কেন অরক্ষিত থাকছে অবকাঠামোগত এই সুরক্ষিত যোন। অনুসন্ধানে জানাযায় সমস্যা একটাই, ‘বহিরাগত’।
‘মাধ্যমিক শিক্ষার গণ্ডিও মাড়ায়নি এমন অনেকে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ায়। আবার কলেজের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে বসে যথেচ্ছ আড্ডা দিতে দেখা যায় অনেককে। এ অবস্থায় আমরা বড় অসহায়।’ কথাগুলো বলছিলেন একজন শিক্ষক।
গত সোমবার দুপুরে শ্রেণিকক্ষ গুলিতে এক বহিরাগত নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে গেছে। এরপর থেকে কলেজ ফটকে পুলিশ পাহারা থাকলেও বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ ঠেকানোর স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে ওই শিক্ষকের মতো শিক্ষার্থীদের মনে ভর করেছ উদ্বেগ।
কলেজের ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুখে বহিরাগত নিয়ে নানা অভিযোগ আর অনুযোগ শোনা গেছে। সর্বশেষ শ্রেণিকক্ষে নিহত হওয়ার ঘটনায় উৎকণ্ঠা তাঁদের মনে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ২২ জুলাই পর্যন্ত পাঠদান স্থগিত করেছে। বহিরাগত দিন দিন বড় এক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতেও পারছে না।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বলতে না পারার কারণও রাজনৈতিক।
অভিযোগ আছে, ২০০৯ সালের পর থেকে কলেজে বহিরাগত উন্মুক্ত করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। এ কারণে কলেজের এ সমস্যা নিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলেও রয়েছে একধরনের মৌনতা। এই মৌনতা শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে এ বহিরাগত ব্যক্তির প্রাণ।
গত সোমবার কলেজের উপজেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় এক পক্ষ বহিরাগত ব্যক্তিদের কলেজে এনে শক্তি বাড়ায়। কলেজের ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে শ্রেণিকক্ষ পর্যন্ত বহিরাগত ব্যক্তিদের অবস্থান হওয়ায় ইংরেজি ভবনের শ্রেণিকক্ষে গুলির শব্দ শুনে গিয়ে দেখা যায় খালেদ আহমদ (২৭) নামের একজন বহিরাগত গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
যে কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে, সেটি একটি পাঠদান কক্ষ। মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। ঘটনার আলামত হিসেবে কক্ষটি তালাবদ্ধ কর রেখেছে পুলিশ। বাইরে রয়েছে পুলিশের সতর্ক পাহারা। ইংরেজি ভবনের এ কক্ষ দেখিয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণির এক শিক্ষার্থী খেদুক্তির সুরে বলেন, ‘আমাদের ক্লাসরুমে পড়া নয়, গোলাগুলিও যে হয়, তার প্রমাণ এখন এটি।’
কলেজ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বিয়ানীবাজার কলেজ ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারীকরণ হয় ১৯৮৮ সালে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে আট হাজার। সিলেট জেলার উত্তর-পূর্ব সাতটি উপজেলার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করছেন। চলতি বছর থেকে স্নাতক সম্মান কোর্স চালু হওয়ায় কলেজটি এখন উত্তর-পূর্ব এলাকার একমাত্র উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
২০১১ সালে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ। অধ্যক্ষ বলেন, শ্রেণিকক্ষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ‘অপ্রত্যাশিত’ আর বর্তমান বাস্তবতায় বহিরাগত সমস্যার সমাধান কর্তৃপক্ষ একা করতে পারবে না। রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব না। আর এ উদ্যোগ সবার আগে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল থেকে নিতে হবে।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। কিন্তু এরপরও গত এক বছরে অন্তত ২০ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক অবস্থা বলতে আছে ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত সাবেক নেতাদের নামে পক্ষ-বিপক্ষ।
বহিরাগত সমস্যা সমাধানে রয়েছে কলেজ ছাত্রলীগের কার্যক্রম বন্ধ। তবু বহিরাগত সমস্যা বন্ধ হচ্ছেনা। আর বহিরাগত সমস্যার কারনেই ঘটছে অহরহ সংঘাত, অনাকাংখিত দুর্ঘটনা। ফলে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম।