সোমবার ● ২৪ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিদ্দিকুরের উন্নত চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তার মা
সিদ্দিকুরের উন্নত চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তার মা
ময়মনসিংহ অফিস :: (৯ শ্রাবণ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.১৬মি.) ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বালিখা ইউনিয়নের ঢাকেরকান্দা গ্রামে রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের টিয়ার সেল নিক্ষেপের ঘটনায় দু’চোখে আঘাতপ্রাপ্ত তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের বাবার বাড়ি। ঢাকার ওই ঘটনার পর সিদ্দিকুরের বাড়িতে সহপাঠী, স্বজন ও গ্রামবাসী সমবেদনা জানাতে ভিড় করেন। তারা ওই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি দু’চোখে আঘাতপ্রাপ্ত সিদ্দিকের উন্নত সুচিকিৎসা নিশ্চিত করণ সেইসাথে দোষীদের বিচারও দাবি করেছেন।
এলাকায় ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত সিদ্দিকুর দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। তিন বছর বয়সে তিনি তার বাবাকে হারান। বিধবা মা সুলেমা খাতুন কিষানির কাজ করে ছেলেদের লেখাপড়া করান । কিন্তু মাধ্যমিক পাস করার পর অভাবের সংসারের কথা ভেবে পড়ালেখা ছেড়ে দেন বড় ভাই নায়েব আলী। হাল ধরেন সংসারের। রডমিস্ত্রির কাজ করে সংসারের পাশাপাশি সিদ্দিকুরের পড়ালেখার খরচ জোগাতে থাকেন।
সিদ্দিকুর স্থানীয় পশ্চিম ঢাকেরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭ম শ্রেণী পাস করে ময়মনসিংহ শহরের কৃষ্টপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিমে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। এরপর ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হলেও পড়াশুনার খরচ মেটানোর কঠিন হিসেব কষে শেষে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন ঢাকার তিতুমীর কলেজে। ভর্তির পর থেকে একটি দোকানে কাজ এবং টিউশনি করে পড়াশুনার খরচ যোগান। থাকেন রাজধানীর খিলক্ষেতের একটি মেসে । ছুটিতে বাড়ি এলে টিউশনির আয় থেকে জমানো টাকায় ভাতিজাদের জন্য লেখাপড়ার সামগ্রী কিনে নিয়ে আসতেন তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর।
সিদ্দিকুর রহমানের গ্রামের বাড়ি গিয়ে কথা হয় মাথায় হাত দিয়ে বাড়ির উঠানে বসে থাকা বড় ভাই নেছার উদ্দিন ও ভাবি সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে। এ সময় তাদেরকে সান্তনা দিচ্ছিলেন অন্য স্বজনেরা। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রতিবেশীদের ভিড় বেড়ে যায়। সবার চোখে মুখে ক্ষোভ। মেধাবী ছেলেটার জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো। অভাব-অনটনের সংসারের এখন হাসি ফোটানোর আশায় ‘গুড়েবালি’।
সিদ্দিকুরের ভাবী সাবিনা ইয়াসমিন কান্না করতে করতে বলেন, ১৯৯৪ সালে শ্বশুর তহুর উদ্দিন মারা যাবার পর তিন ভাইবোনের সংসারের হাল ধরেন তার স্বামী নায়েব আলী। অভাব অনটনের সংসারে খুব কষ্ট করে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার চালান। ইতিমধ্যে বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। মাঝে মাঝে পড়ার খরচ বাবদ দেবরের জন্য কিছু টাকা পাঠান নায়েব আলী।
বালিখা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দুদু জানান, “দরিদ্র্র পরিবারে জন্ম নেয়া সিদ্দিকুর বেশ মেধাবী। অভাব-অনটনের সংসারে এ ছেলেটি ছিল আশার বাতি।” লেখা পড়া শেষে চাকরী করে বিধব মায়ের মূখে হাঁসি ফুঠানো আর হলো না।
ঢাকায় হাসপাতালে অবস্থানরত বড় ভাই নায়েব আলী জানান, পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকরি করে আমার ভাই সংসারের হাল ধরার কথা। শিক্ষামন্ত্রী তার ভাইকে দেখতে এসেছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে দু’চোখ ভালো করার দাবি জানিয়েছেন।
সিদ্দিকুর রহমানের মা ছুলেমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় তার ছেলের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে এটাই তার একমাত্র দাবি।
প্রশঙ্গতঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে গত ২০ জুলাই এ বিক্ষোভ করে। এরই একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
সিদ্দিকুর ও তার সহপাঠিদের দাবি, পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে আহত হন তিনি। এরপর তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।