বৃহস্পতিবার ● ৩ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » অন্তঃসত্বা রোগীকে বের করে ফটকে তালা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পলায়ন
অন্তঃসত্বা রোগীকে বের করে ফটকে তালা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পলায়ন
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১৯ শ্রাবণ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৩১মি.) গাজীপুরের শ্রীপুরে রুমা আক্তার (২৩) নামে অন্তঃসত্বা মুমূর্ষ এক রোগীকে জোরপূর্বক বাইরে বের করে দিয়ে ফটক তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২ আগস্ট বুধবার রাত ১০টায় উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায় দি নিউ পদ্মা হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামক বেসরকারী হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
পরে রোগীকে তার স্বজনরা এম্বুলেন্সযোগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। রাত ১২টা নাগাদ হাসপাতালে পৌছেন তারা। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মৃত সন্তান প্রসব হওয়ার পর ওই নারী সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বামী।
রুমা আক্তার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা মধ্যপাড়া এলাকার আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী।
আব্দুস সাত্তার টেলিফোনে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, গত ৩১ জুলাই তার গর্ভবতী স্ত্রীকে মাওনা চৌরাস্তার শাপলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে গত ১ আগস্ট হাসপাতালের পরীক্ষা নিরীক্ষায় গর্ভের বাচ্চা মৃত তথ্য পেয়ে রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে পরামর্শ দেয় তারা। ওই দিন দুপুরে দি নিউ পদ্মা হাসপাতালের দালাল রঙ্গীলা বাজার এলাকার পল্লী চিকিৎসক নাসির হোসেনের সাথে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে প্রসব করিয়ে দেওয়ার জন্য ১৬হাজার টাকা চুক্তি করে রুমার পরিবার। চুক্তির পর ওই দালাল রোগীকে পার্শ্ববর্তী দি নিউ পদ্মা হাসপাতালে ভর্তি করে। ২ আগস্ট বুধবার সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে রোগীর অবস্থা আশংকাজনক মনে হলে তাকে খুব দ্রুত অন্য কোন হাসপাতালে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে দি নিউ পদ্মা হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে কর্তৃপক্ষ। তারা বের হতে না চাইলে হাসপাতালের স্টাফ ও মালিকেরা তাদের জোরপূর্বক গেটের বাইরে বের করে দিয়ে মূল গেটে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় মূল গেটের বাইরে শতাধিক মানুষের জটলা। রোগীর বিক্ষোব্ধ স্বজনরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে গেটম্যানের সহযোগিতায় তালা খোলে ভেতরে প্রবেশ করেন। ভেতরে গিয়ে হাসপাতালের কেবিনে লিজা ও সাবিনা নামের ২জন রোগীকে পাওয়া যায়। একটি কক্ষে আবাসিক ডাক্তার নাভীদ তানজিমকেও পাওয়া যায়। হাসপাতালের মালিক ও স্টাফরা কোথায় আছে এমন কিছু জানেন না বলে জানান তিনি। হাসপাতালের গেটে তালা দেওয়ায় আতংকিত অবস্থায় দেখা যায় ভেতরে অবস্থানকৃত রোগী ও তাদরে স্বজনদের।
আবাসিক ডাক্তার নাভীদ তানজিম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, স্ত্রী রোগ প্রসূতি ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডা. সেলিনা আক্তার লিপি এই রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ সন্ধ্যায় ডাক্তার হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। পরে ওনার অনুপস্থিতিতে তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত সন্তানের অস্তিত্ব পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডা. সেলিনা আক্তার লিপির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অপর দিকে হাসপাতালের মালিক জানে আলম, নূরে আলম, রফিকুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিনের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক(এসআই) আবুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, রোগীর স্বজনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।