রবিবার ● ৬ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » গিনেস বুকে রেকর্ড গড়তে চান ৬৬ বছরের সাতারু মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যে
গিনেস বুকে রেকর্ড গড়তে চান ৬৬ বছরের সাতারু মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যে
ময়মনসিংহ অফিস :: (২২ শ্রাবণ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৩৭মি.) ৬৬বছর বয়সে ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতরিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন পূরণে আবারও সাঁতারে নেমে পড়লেন নেত্রকোনার মদন উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। এই কৃতী সাঁতারুর ইচ্ছা বিরতিহীনভাবে ১৪৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দূরপাল্লার সাঁতারে নতুন এক রেকর্ড গড়ার। ময়মনসিংহের ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা, দুর্গাপুর, নেত্রকোনা সদরসহ ১০ উপজেলা হয়ে কংশ নদী দিয়ে ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতরে নিজ উপজেলা মদনের মগরা ব্রিজে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তাকে অনুসরণ করে দ’টি নৌকায় নিজ স্বজন, চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন লোকজন যাচ্ছেন। সাঁতার অবস্থায় দেখতে হাজার হাজার উৎসুক জনতা রাতদিন নদীর দু’পাশে দাঁড়িয়ে ভিড় করছেন।ময়মনসিংহের ফুলপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমএ হাকিম সরকার এবং নেত্রকোনা জেলার মদন পৌরসভার সাবেক মেয়র মদন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।
৪ আগষ্ট শুক্রবার সন্ধা ৬টা ৫০মিনিটে সাঁতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএনও মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান, ফুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও সার ডিলার সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তুজা তালুকদার (লাল মিয়া)।
ফুলপুর উপজেলার কংস নদের সরচাপুর সেতু থেকে সাঁতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর ক্ষিতিন্দ্রর সাঁতার দেখতে এই দীর্ঘ পথের নদীর দু’পাড়ে হাজার হাজার দর্শক ভিড় জামাচ্ছেন। তিনি মদন উপজেলার মগড়া নদীর বালই সেতু পর্যন্ত পৌছে গেছেন এবং সর্বশেষ ১৪৬ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করার অদম্য ইচ্ছায় পথ চলছেন। ৬৬ বছর বয়সে আবারো সাঁতারে নেমে ১৪৬ কিলোমিটার নদীপথ বিরামহীনভাবে পাড়ি দিলেন তিনি। এই পথ পাড়ি দিতে তিনি সময় নেন ৪৪ ঘণ্টা।
রবিবার ঘড়ির কাঁটা যখন বেলা দুইটা বেজে এক মিনিটে তখন তিনি নেত্রকোণার মদন উপজেলা সদরের দেওয়ান বাজারের ঘাটে মগড়া নদী থেকে উঠে এলেন ডাঙ্গায়।
এ সময় নদীর দুই তীরে হাজারো মানুষ কৃতী এই সাঁতারুকে দেখার জন্যে ভিড় জমান। সাঁতার শেষ করার সাথে সাথে তাকে স্থানীয় সুমাইয়া হেলথ কেয়ারে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর সুস্থ্য অবস্থায় তিনি উপজেলা সদরের বৈশ্যপাড়ায় নিজ বাড়িতে ফিরেন।
তিনি ধারনা করে ছিলেন,টার্গেট পূরণ করতে পারলে তার নাম গিনেজ বুকেও উঠে যেতে পারে। কারণ, ৬৬ বছর বয়সে ৩৫ ঘণ্টায় কোনো বিরতি ছাড়াই ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতরানোর কোনো রেকর্ড নেই।
অরুণ কুমার নন্দীর বিরতীহীন সাঁতার দেখে ১৯৭০ সালেই মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়নকেন্দ্রের পুকুরে তিনি ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে এলাকায় আলোচিত হন। এটিই তার প্রথম সাঁতার। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারি হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করায় ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে ক্ষিতিন্দ্র্র জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুরপাড়ে স্মারক ফলক নির্মাণ করে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, মদন উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং নেত্রকোনা পৌরসভার পুকুরে ক্ষিতিন্দ্রের একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভারতেও দূরপাল্লার সাঁতার প্রর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে মাত্র ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগীরথী নদীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুরে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের বাড়ি। বাবার নাম ক্ষিতীশ চন্দ্র বৈশ্য ও মা নাম সুপ্রভা রাণী বৈশ্য। ১৯৫২ সালের ২৩ মে জন্ম নেয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। পদার্থবিদ্যা বিষয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট থেকে সম্মাননাও পেয়েছিলেন তিনি। তা ছাড়াও সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।