সোমবার ● ৭ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ৪০ বাড়ী বিলীনের পথে
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ৪০ বাড়ী বিলীনের পথে
ময়মনসিংহ অফিস :: (২৩ শ্রাবণ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.২২মি.) ময়মনসিংহ সদরের কুষ্টিয়া ইউনিয়নের হৈয়ারকান্দি, রূপাখালি ও বেগুনবাড়িসহ তিন গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ক্রমাগত ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবছর বছরে ন্যায় এবারও ভাঙন দেখা দেয়ায় প্রায় ৪০টি পরিবার ভাঙন-আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে । এর আগে গত তিন বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ২০ পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেলেও প্রশাসন ভাঙনরোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ জানান ভূক্তভোগীরা।
ভাঙন কবলিত মানুষের অভিযোগ, ব্রহ্মপুত্র নদের এ এলাকায় ছয় বছর আগে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। ওই বছর একটিমাত্র বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরপর দুই বছরে আর ভাঙন দেখা যায়নি। তিন বছর ধরে বর্ষাকাল এলেই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। বার বার বিষয়টি জানানোর পরও সরকারিভাবে ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রূপাখালি গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আছর আলী বলেন, বাপ-দাদার ভিটা চোখের সামনে নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। দেখেও কিছু করার নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও বসতভিটা রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনা।
স্থানীয়রা জানান, রূপাখালি গ্রামের কমপক্ষে ১০টি বাড়ির আঙ্গিনা ঘেঁষে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গ্রামের ছাইদুলের ইসলামের বাড়িটি এবার বিলীন হয়ে গেছে। অন্য কোনো জমি না থাকায় নদীর পারে ভাঙন ঘেঁষে ছোট দু’টি ঘর তুলে তিনি বসবাস করছেন। এরই মধ্যে বাড়ির আঙিনায় দেখা দিয়েছে ফাটল।
ছাইদুলের মা ফজিলা খাতুন বলেন, ‘রাতের বেলা ভয়ে বুক কাঁপে। আমাদের অন্য কোনো জমি নাই। তাই এখানে ভয়ে ভয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।’
রানু বেগম নামের একজন নারী বলেন, হৈয়াকান্দি গ্রামে ছিল তাদের বাড়ি। দুই বছর আগে সেই বাড়ি নদীতে বিলীন হয়। এরপর থেকে পাশের বেগুনবাড়ি গ্রামে নদীর পারে নতুন বাড়ি করে বসবাস করছেন। এই বাড়িটিও ভাঙনের হুমকিতে আছে।
রূপাখালি গ্রামের মোনতাজ আলী (৭০) বলেন, তিন বছরের ভাঙনে এ গ্রামের ১০টি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। অনেকেই অন্য এলাকায় বাড়ি করেছেন। আবার কয়েকটি পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
ওই তিন গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রূপাখালি গ্রামেই সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েকটি বাড়ির একেবারে ধার ঘেঁষে দেখা দিয়েছে ভাঙন। কয়েকটি পরিবার ভাঙনের ভয়ে রাতে অন্যের বাড়ি গিয়ে থাকে। গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাঙনকবলিত তিনটি গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের ফসলি জমিও কম। তাই তারা বাড়ি সরিয়েও নিতে পারছেন না।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, হৈয়ারকান্দি গ্রামের একটি মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থানের ধার ঘেঁষে দেখা দিয়েছে ফাটল। গ্রামবাসী সরকারের কাছে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, নদীভাঙনের জায়গা পরিদর্শন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃৃপক্ষের কাছে জমা দেয়াও হয়ে গেছে।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ সদর আসনের এমপি বেগম রওশন এরশাদের সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে। তিনিও বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন’ বলে আরও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী।