বুধবার ● ১৬ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙনে সর্বস্বান্ত নদীপাড়ের মানুষ
সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙনে সর্বস্বান্ত নদীপাড়ের মানুষ
সিলেট প্রতিনিধি :: (১ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.৪৮মি.) সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ভয়াল থাবায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে উপজেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলের ঘরবাড়ি, দালান কোঠা, স্কুল কলেজ, মসজিদ মাদ্রাসা, হাটবাজার ও কৃষি জমি। নদী ভাঙনের ফলে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন এসব অঞ্চলের জনগণ।
শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে আজ ভিটে মাটি ছেড়ে ভবঘুরের মতো জীবনযাপন করছেন।
এসব এলাকাবাসীর অভিযোগ ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন ও নদীর পারে ব্লক না থাকাই এ সর্বনাশের কারণ। নদী তীরের মানুষের ভাঙন যেন নিত্য দিনের সঙ্গী। এ সমস্যা সমাধানের কোন আদৌও দেখা যাচ্ছেনা।
উপজেলার সুরমা তীরবর্তী বাঘা ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়ি সুরমা নদীর গর্ভে চলে গেছে। এ ইউপির শুধু রুস্তমপুর এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি সুরমার ভাঙণের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। গেল এপ্রিল মাসে দুই দিনের ব্যবধানে এই গ্রামের সাতটি বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যায়। সেই সাথে গরুর গোয়ালা টিউবওয়েল ও গাছগাছালিও তলিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।
এলাকাবাসী জানান, শুধু তারাই নয়, ঐ গ্রামের মাস্টার আব্দুর রহমান, মাস্টার আব্দুছ সুবহান, মজির উদ্দিন, মছব্বির আলী ও ডাক্তার আমির উদ্দিনের বসটভিটা ও গাছগাছালি সুরমা নদী গ্রাস করে ফেলেছে। অসহায় এসব লোকজন যে যেদিকে সম্ভব হয়েছে অন্যত্র চলে গেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায় , রুস্তমপুর পুরান জামে মসজিদ, হাতিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা, রুস্তমপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা, রুস্তমপুর পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ, স্থানীয় গোরস্তান ও নদীপারের রাস্তাটি রয়েছে অতি ঝুঁকির মধ্যে। এরমধ্যে এসব স্থাপনার কোন কোন স্থানের বড় একটি অংশ বিলীন হয়ে গেছে। নদী পারের রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ দিন থেকে সুরমা নদীর ভয়াবহ তাণ্ডবলীলায় একের পর এক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি সহ বিভিন্ন স্থাপনা।
বাঘা এলাকার মাওলানা জামাল আহমদ জানান, শুধু রস্তমপুর এলাকা নয়, পাশ্ববর্তী এলাকা ঘনশ্যাম ও শুকনা এলাকাও অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে।
এ ইউনিয়নের প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাঘা গোলাপনগর মাদ্রাসা, পূর্ব বাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ নদী পারের সবকটি বসতবাড়ি রয়েছে সুরমার ভাঙণের ঝুঁকির মধ্যে।
সুরমা নদীর প্রবল স্রোতে উপজেলার ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি একাডেমি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তর পাশ ও রাণাপিং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরে বিশাল ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে যে কোনো সময় এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ ভবনসহ প্রতিষ্ঠান বিলীন হতে পারে।
এদিকে কুশিয়ারার নদী ভাঙ্গনে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউনিয়ন। কুশিয়ারার অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের কারণে এ ইউপির নদীর তীরবর্তী অসংখ্য বাড়িঘর এবং কয়েকটি গ্রাম পড়েছে হুমকির মুখে।
নদী ভাঙ্গনে আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে ইউপির বসনপুর, কদুপুর,
খাটকাই, পনাইচক, মেহেরপুর, পানিআগা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ জনপদ। নদীর তীর ঘেষা খাটকাই-মেহেরপুরের ব্যস্ততম সড়কটি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে পথচারীদের। কখন যেন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ব্যস্থতম ওই সড়কটি এমন আশংকা সাধারণ মানুষের।
ইতি মধ্যেই পনাইচক জামে মসজিদ ও উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকটস্থ রাস্তাটি পুরোপুরি নদী গর্ভে চলে গেছে। এ রাস্তাটি নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় বেপাকে রয়েছেন পনাইর চক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সে সব এলাকার মানুষজন।
শরিফগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান এম এ মুহিত হিরার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,পনাইর চক স্কুলের নিকটবর্তী রাস্তাটি নদী ভাঙ্গনে পুরোপুরি নদী গর্ভে চলে গেছে। অন্য পাশ দিয়ে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ পনাইর চক উচ্চ বিদ্যালয়টিও। খুব শিগগির নদী ভাঙ্গন রোধে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ইউপির স্থানীয় লোকজন জানান, ইতিমধ্যে কুশিয়ারা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে খাটকাই-পনাই চক গ্রামের শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেকেই বাড়িঘর হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করে আসছেন। নদী তীরবর্তী ফসলের জমি হারিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য গাছপালা চলে গেছে নদী গর্ভে। নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে আরো অসংখ্য বাড়িঘর ও স্থাপনা বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।নদীতে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় ইউপির এসব এলাকার লোকজন আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। এ ইউপির মেহেরপুর বাজার (কালাবাজার), কাদিপুর বাজার,নয়া বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজারের দোকান কুশিয়ারা নদীতে ধসে পড়েছে।
কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনে প্রায় বিলীন হওয়ার পথে এসব বাজার। এতে নদী তীরবর্তী মার্কেটের ব্যবসায়ীরা রয়েছেন আতংকে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গণ অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে জোর দাবি সংশ্রিষ্ট এলাকাবাসীর।