বৃহস্পতিবার ● ১৭ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » রাখাইন রাজ্য আবারো নির্যাতনের অভিযোগ : সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার
রাখাইন রাজ্য আবারো নির্যাতনের অভিযোগ : সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার
উখিয়া প্রতিনিধি :: (২ ভাদ্র ১৫২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪০মি.) আবারো মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে কয়েকশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তারা জানায় অন্তত: ৫শত রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছে গত কয়েকদিনে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় এপারেও বর্ডার গার্ড বিজিবির উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে বলে টেকনাফে বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম।
রাখাইন রাজ্যের পুলিশ প্রধান কর্নেল সেই লুইন সেনা মোতায়েনের সত্যতা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেছেন, রাখাইনে বিদ্রোহীরা কিছু মুসলিম ও বৌদ্ধকে হত্যা করেছে। তাই সেনাবাহিনী নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।
প্রায় চার মাস বিরতির পর এক সপ্তাহে প্রায় দুইশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতারা নিশ্চিত করেছেন। তবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। এদিকে প্রতিবেশি দেশকে না জানিয়ে নিজেদের সীমান্তে সৈন্য মজুত করায় মিয়ানমারের কাছে জবাব চেয়েছে বাংলাদেশ।
গত কয়েক দিনে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর নাকচ করে বিজিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, “মাঝে মাঝে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা হলে পুশব্যাক করা হচ্ছে। গেল জুলাই মাসেও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে আনুমানিক দুই শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বোঝাই ২২টি নৌকা প্রতিহত করা হয়েছে।”
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, “আবারও নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।”
মিয়ানমারের ছিডং তামির এলাকা থেকে দুদিন আগে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন আবু তাহের। তিনি বলেন, “সেনারা জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও অস্ত্র খোঁজার নামে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে। আমি এবং আমার পরিবার নির্যাতিত হওয়ার পরে পালিয়ে এপারে চলে এসেছি।”
রাখাইনে নতুন সেনা অভিযানকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক তৎপরতার ‘ব্যর্থতার ফল’ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াসহ এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে বিভিন্ন দেশকে যুক্ত করে কূটনৈতিক তৎপরতার জোরদার করার পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা।
অভিবাসন ও শরণার্থী আসিফ মুনীর সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, “মিয়ানমার কোনো নমনীয় অবস্থান দেখাচ্ছে না। আমরা চাই দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হলে, ত্রিপক্ষীয় কিংবা বহু পাক্ষিক আলোচনা হোক। দুঃখজনক হলেও সত্য আন্তর্জাতিক মহল এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ভূমিকাই রাখছে না।”
রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারের অজুহাতে মিয়ানমার গত শুক্রবার রাথিডং, বুথিডং ও মংডুতে প্রায় হাজার খানেক সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে মিয়ানমারের কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে। গত সোমবার মায়ু নদীর আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে সেনাবাহিনী। রাখাইনে চরমপন্থী সংগঠন আল ইয়াকিন বা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বারবার বলে আসছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
গত বছরের ৯ অক্টোবরে সেনা চৌকিতে হামলার জের ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। প্রাণে বাঁচতে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রাখাইনে সেনা সমাবেশ কমালেও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কথা বলে ফের ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছে।
টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের সভাপতি দুদু মিয়া সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, “গত তিন দিনে রাখাইন থেকে অন্তত ৫০ পরিবারের প্রায় দেড় শ রোহিঙ্গা টেকনাফ পৌঁছেছেন। এরা শিবির ও আশপাশের গ্রামে আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন।”
উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের সভাপতি আবু সিদ্দিক সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, সেখানে গত দুই দিনে আশ্রয় নিয়েছেন নতুন আসা প্রায় ৫০ জন রোহিঙ্গা। এদিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর থেকে নতুন বাস্তবতার শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। গত রোববার স্বামী ও তিন সন্তানসহ শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর লেদা বস্তিতে মরিয়াম নামে এক নারীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন রহিমা খাতুন।
তিনি বলেন, অনেক খোঁজাখুজির পরে তিনশ টাকা ভাড়ায় পলিথিনের তৈরি ছোট্ট ঘরটি পেয়েছি। সন্তানদের নিয়ে আমি কোনোমতে থাকতে পারলেও আমার স্বামীকে বাইরে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে সে মসজিদেও থাকে।“ওপারে জীবনের ভয়, এ পারে বাঁচার লড়াই এই হচ্ছে আমাদের জীবন,” বলেন তিনি।