রবিবার ● ২০ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » মিনি সুন্দরবনে বন্য প্রাণীরা হুমকির মুখে
মিনি সুন্দরবনে বন্য প্রাণীরা হুমকির মুখে
বাগেরহাট প্রতিনিধি :: (৫ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৪৪মি.) রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা না মিললেও চিত্রার চরে মিনি সুন্দর বনে রয়েছে অসংখ্য মেছোবাঘ। এ বন জুড়ে রয়েছে তাদের রাজত্ব। দিন-রাত বনের এদিক-ওদিক দাপিয়ে বেড়ায় তারা। সুযোগ পেলে আশপাশের লোকজনের বাড়িতে হানা দিয়ে হাঁস-মুরগি তুলে নিয়ে যায়। ফলে গ্রামবাসি ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক সময় এদের হত্যা করে থাকে। এতে করে খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয় স্থলের অভাবে চিত্রা পাড়ের মিনি সুন্দরবনে মেছোবাঘসহ অন্যান্য প্রাণিরা এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, চিত্রাপাড়ের মিনি সুন্দরবনটি রক্ষার ব্যাপারে বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নানা ধরণের উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে এখনো কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। এ বনে নানা ধরণের প্রাণি ও পাখিদের ব্যাপক আনা-গোনা থাকলেও এসব প্রাণিরা এখন চরম হুমকির মুখে। প্রতিনিয়ত লোকজনের হাতে বিভিন্ন ভাবে মারা পড়ছে নানা প্রজাতির প্রাণি ও পাখি। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সুন্দরবনের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় শত কিলোমিটার উত্তরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া চিত্রানদীর দু’পাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নিয়েছে সুন্দরী, কেওড়া, গরান, ওড়া এবং গোলপতাসহ সুন্দরবনের নানা প্রজাতির গাছপালা। আর এসব গাছপালা জন্ম নেওয়ার কারণে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এখানকার নদীপাড়ের রায়গ্রাম, শুড়িগাতী, খিলিগাতী, ডুমুরিয়া,আরুলিয়া, খড়িয়াসহ আশপাশের প্রায় ১০-১৫ টি গ্রাম এখন বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিলুপ্ত প্রজাতির অনেক প্রাণীর দেখা মেলে এ বনে। বনবিড়াল, মেছোবাঘ, খাটাশ এবং কুমির আকৃতির বড় গুইসাপের উপস্থিতি এখানে চোখে পড়ার মত। এসব প্রাণিরা দিনে-রাতে খাদ্যের অভাবে অনেকের বাড়িতে এসে হানা দেয়। ফলে গ্রামবাসির হাঁস-মুরগি তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণে অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হত্যা করছে। এছাড়া এখানকার গাছ-পালায় ঘুঘু, শালিক, দোয়েল, বাঁদুর, বক, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির হাজার-হাজার পাখি এসে আশ্রয় নিয়েছে। পাশাপাশি শীত মৌসুমে অনেক পরিযায়ী পাখি এখানে আশ্রয় নেয়। আর সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু লোকজন ফাঁদ পেতে ও বন্দুক দিয়ে বিভিন্ন সময় এসব পাখি শিকার করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া চিত্রা নদীতে নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় এবং উপযুক্ত আশ্রয়স্থলের অভাবে ডলফিনসহ অন্যান্য প্রজাতির প্রাণি এখন হুমকির মুখে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল হতাশা প্রকাশ করেছেন। দ্রুত এ বনকে যথাযত ভাবে সংরক্ষণ ও প্রাণিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বনকর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, চিত্রাপাড়ের মিনি সুন্দরবনে যাতে কেউ কোন প্রাণি হত্যা করতে না পারে সে ব্যাপারে তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া এ বনকে রক্ষণা-বেক্ষণসহ প্রাণি ও পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা হবে বলে আশ্বাস দেন।
এ বিয়য়ে প্রাণি ও পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, যেহেতু অনেক প্রাণিই এখন বিলুপ্তির পথে সেহেতু বন্যপ্রাণি রক্ষা করা খুবই জরুরি। এর জন্য আমাদের সকলের সচেতনতা দরকার।
জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, বন্যপ্রাণি ধরা এবং হত্যা করা আইনাত দন্ডনীয় অপরাধ , কেউ যাতে এদের হত্যা করতে না পারে সে ব্যাপারে সচেতনা বৃদ্ধিসহ সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।