শুক্রবার ● ২৫ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » রাষ্ট্রপতি চাইলেই প্রধান বিচারপতিকে বরখাস্ত করতে পারেন না
রাষ্ট্রপতি চাইলেই প্রধান বিচারপতিকে বরখাস্ত করতে পারেন না
অনলাইন ডেস্ক :: রাষ্ট্রপতি চাইলেই প্রধান বিচারপতিকে বরখাস্ত করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওই সাক্ষৎকারে ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি যা লিখেছেন তাতে অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে। তবে তার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার ও সরকারি দলের মন্ত্রী, নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন, সেগুলোকে আমলে নেয়ার কিছু নেই। সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন থেকে যে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে সেটাও শুধু কথার কথা।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে সংবিধান ও আইনের বাইরে গিয়ে কথা বলছেন। অনেক কথাই হচ্ছে। তা নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। এটাকে আমি গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক দিক মনে করি। কারণ অনেক কথা হলেই ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অনেক কথাই বলেন, দেশটির আদালতও অনেকের বিরুদ্ধে রায় দিচ্ছে। কিন্তু সেদেশে গণতন্ত্র কিন্তু হুমকির মুখে পড়ছে না। তেমনি আমাদের দেশেও ষোড়শ সংশোধনীর রায় ঘিরে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ মুখোমুখি হওয়ায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার পরিণতি কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘পরিস্থিতি বাইরে যতটা উত্তপ্ত মনে হচ্ছে, আসলে ততটা উত্তপ্ত নয়। অনেকে অনেক কথা বলার কারণে গণতন্ত্র আরো সুসংহত ও সুদৃঢ় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
রাষ্ট্রপতি চাইলে প্রধান বিচারপতিকে বরখাস্ত করতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে বরখাস্ত করতে পারেন না। এমনকি সংসদের হাতেও সেই এখতিয়ার নেই। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়ায় এই ক্ষমতা হারিয়েছে জাতীয় সংসদ। সরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন পিয়ন বা ড্রাইভারকেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত বরখাস্ত করা যায় না। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান বিচারপতির মতো একটি পদের কাউকে বহিষ্কার করতে সংসদ নেতা প্র্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ লাগবে। রাষ্ট্রপতি সরাসরি তাকে বরখাস্ত করতে পারেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সংবিধানই রাষ্ট্রপতিকে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়নি। যেমন তিনি কোনো মন্ত্রীকেও বরখাস্ত করতে পারেন না।’
শাহদীন মালিক বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীরতে সরকারের আমিত্ব ভাব রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। সরকার বারবার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করতে চেয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে ‘আমিত্ব’-কে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই দেশটা আমাদের সবার। স্বাধীনতার পর এদেশের সংবিধান শুরু হয়েছে আমরা দিয়ে। যদি ষোড়শ সংশোধনীতে ‘আমি’ রাখা হয়, তাহলে আইয়ুব খানের জমানায় ফিরে যাওয়া হবে। কারণ সে সময় তিনি পাকিস্তানের সংবিধান শুরু করেছিলেন ‘আমি’ দিয়ে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আইনসভাকে সার্বভৌম বলার ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু আমাদের দেশের জাতীয় সংসদ সার্বভৌম নয়। জনগণ সার্বভৌম। এ দেশের সংসদের ক্ষমতা সংবিধানে সীমিত করা আছে। আর সংসদের কোনো কিছু সংবিধানের বাইরে না।’
তিনি বলেন, ‘এদেশে বারবার বিনা নোটিসে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, যা অশ্রদ্ধার শামিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বল্প সময় নিয়ে সংশোধনীর কাজ করা হয়েছে। কেবল সুরঞ্জিত বাবুর সংবিধান সংশোধন কমিটি একটু সময় নিয়েছিল। সেটার একটা খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে তিনি ২৫ জুন বড় অফিসে গিয়েছিলেন (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে), সেখানে সেটা বাদ দেওয়া হয়। পরের দিন ২৬ জুন ওই প্রতিবেদনের উল্টো প্রতিবেদন তৈরি করে সংবিধান সংশোধন করা হয়।’
সূত্র: বাংলা