শুক্রবার ● ২৫ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » ময়মনসিংহে দু’দফা বন্যায় ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ
ময়মনসিংহে দু’দফা বন্যায় ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ
ময়মনসিংহ অফিস :: (১০ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ দুপুর ১২.৩৩মি.) ময়মনসিংহে দু’দফা বন্যায় ৫০ হাজার পরিবারের সোয়া দু’লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । এসময় অতি বৃষ্টিতে ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ময়মনসিংহের ছয়টি উপজেলাসহ দু’টি পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়।
বন্যার পানি গত ২২ আগষ্ট ধোবাউড়ার নেতাই নদীতে বিপদসীমার ২.৪২সেঃ মিঃ উপরে এবং ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১ সেঃ মিঃ বেড়ে যাওয়ার পর বর্তমানে বিপদসীমার .৪৭ মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি স্থির থাকায় নিচু ও চর এলাকা এখন প্লাবিত হচ্ছে। এতে দু’টি পৌরসভাসহ ২৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের ২ লাখ ২৮ হাজার ৯শ’৪৮জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এদের মধ্যে ১৭ হাজার ৭শ’৭২টি পরিবার স¤পূর্ণ এবং ৩১ হাজার ৪শ’৭৬টি পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় সাড়ে ৭ শ’ ঘরবাড়ি হারা মানুষজন ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র্রে ঠাই নিয়েছে। এ সকল ক্ষতিগ্রস্থ ও আশ্রয়কেন্দ্র্রে ঠাই পাওয়া অসহায়দের মাঝে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি অবস্থায় ৬৪ মেঃ টঃ চাল, ১০ হাজার ৫শ’৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার ত্রাণ নগদ বিতরণ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্র জানায়।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা গেছে, অতি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধোবাউড়ার নেতাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ময়মনসিংহ পৌর এলাকার বলাশপুর আবাসন ও গফরগাঁও পৌরসভাসহ ২৮টি ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এ সব উপজেলা গুলো হচ্ছে ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ সদর, মুক্তাগাছা। এসব উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে। এ এলাকার নদ-নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে .২১০ কিঃ মিঃ বাঁধ স¤পূর্ণ ও ১২ কিঃ মিঃ বাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এ সব এলাকায় ১শ’৬৯ কিঃ মিঃ কাচা রাস্তা স¤পূর্ণ এবং ৪শ’১৬ কিঃ মিঃ রাস্তার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।একই সাথে বন্যাদুর্গত এলাকার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মাছের পুকুরসহ দু’টি হ্যাচারি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের মতে, বন্যায় প্রায় দেড় শতাধিক গবাদি পশু ও সাত হাজার হাস-মুরগি মারা গেছে।
এই সময়ে পানিতে নিমজ্জিত এবং পানি দ্রুত না সরায় (স্থির থাকায়) সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে। একই সাথে ২শ’২৯ হেক্টর বীজতলা, ২শ’৩২ হেক্টর সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানির ছোঁয়া না পেলেও অতি বৃষ্টি ফলে জেলার অন্য ছয়টি উপজেলার ২ হাজার ৭৮৯ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত ও ৫০ হেক্টর সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে।
এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠায় এ সব দুর্গত এলাকায় ৬২টি প্রাথমিক ও ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এতে এসব এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা থমকে গেছে। চর এলাকা ও নদের ধারে নিম্নাঞ্চল এলাকায় বসতি গড়ে উঠায় ৪ হাজার ১শ’৮৬টি ঘরবাড়ি স¤পূর্ণ এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার বসতবাড়ি।
জেলা প্রশাসনের জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন জানান, অতি বৃষ্টি আর উজানের পানি ধেয়ে আসায় ব্রহ্মপূত্র ও নেতাই নদীর পানি বাড়ছে। ফলে প্রতিদিন নিম্নাঞ্চলসহ চর এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে পানি বিপদসীমার অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেইসাথে বর্তমানে পানি স্থির রয়েছে।
তিনি আরোও জানান, জেলায় ৩শ’ মেঃ টঃ চাল ও নগদ ১৩ লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া গেছে। ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত রয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন। ৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭শ’৫৪জন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ বসবাস করছেন। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে ৬৪ মেঃ টঃ চাল, ১০ হাজার ৫শ’৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার ত্রাণ নগদ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এসব মানুষজনের জন্যে চাহিদামত ত্রাণ সামগ্রী দিতে জেলা প্রশাসন সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।