শুক্রবার ● ২০ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » আলীকদমে পাহাড়ে কমলার বাম্পার ফলন
আলীকদমে পাহাড়ে কমলার বাম্পার ফলন
হাসান মাহামুদ, আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি::পাহাড়ে নতুন করে বিসত্মার লাভ করেছে কমলার চাষ৷ এতে চাষিরা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে চাষির মুখে হাসির বদলে চোখে হাতাশার ছাপ৷ বিগত কয়েক বছরের তুলনার এবছর পার্বত্য বান্দরবানের আলীকদমে এবার কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে স্থানীয় বাজারে পাঁকা কমলা বিকিকিনি শুরু হয়েছে ৷ তবে কমলার বাম্পার ফলনেও বাগান মালিকদের মুখে হাঁসি নেই ৷ বাগান থেকে কমলা আহরনের পদ্ধতি, হিমাগারের অভাব, পরিবহন ব্যবস্থা এবং একই পণ্যের উপর একাধিকবার টোল আদায়সহ বিভিন্ন সদস্যার কারণে বাগান মালিকরা দেখতে পারছেনা লাভের মূখ৷ অন্যদিকে দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের কবল থেকেও রেহাই পাচ্ছেনা এক শ্রেণীর চাষি৷ আর এতে সারা বছর পরিশ্রম করেও পাহাড়ের কমলা আবাদকারী উপজাতি-বাঙ্গালী কমলা বাগান মালিকদের কোপালে চিন্তার রেখা মুছে না৷ অভাব লেগে থাকে বছর ধরে৷
সিলেটের ছাতকের পর পার্বত্য বান্দরবান সুস্বাদু কমলার স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে অনেক আগে৷ পাহাড়ে ঢালে জুম চাষ বাদ দিয়ে উপজাতিরা কমলা, আম, আর আমের বাগান৷ একই সাথে গড়ছে ফলদ, বনজ গাছের বাগান ৷ গত এক দশক ধরে কমলার চাষ বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে ৷ এখন এসব পাহাড়গুলোতে থোকায় থোকায় দেশীয় জাতের কমলায় ভরপুর৷ প্রতি বছর কমলার মৌসুমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমানে কমলা সরবরাহ করা হয়৷ তবে কমলা গাছ পরিচর্যা, গাছ থেকে কমলা আহরণ, সংরক্ষণ ও বাজার-যাত করণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে বাণিজ্যিক ভাবে কমলা বাগানের প্রতি আরও উত্সাহ পেত বলে জানান উপজাতি-বাঙ্গালী কৃষকরা৷ কৃষি বিভাগের অসহযোগিতার কথা জানিয়ে একাধিক কমলা বাগানের মালিক জানান, উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দূর্ঘম এলাকার বাগান মালিকরা কোন সহযোগিতা পাননা৷ ভাল বীজ, কীটনাশক ঔষধ ও সার যদি সুলভ মূল্যে পাওয়া যেত৷ বাগান মালিকরা আৰেপ করে বলেন, কমলা আহরণের তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই পচন ধরে৷ কিন্তু জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে উত্পাদিক পণ্য সংরক্ষনের জন্য কোন হিমাগার না থাকায় মারাত্মক বিপাকে পড়তে হয় চাষিদের৷ বাধ্য হয়ে স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করতে হয় মাথার ঘাম পাঁয়ে ফেলে উত্পাদন করা এসব পণ্য৷
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য আবাদের চেয়ে কমলা বাগানে অনেকাংশে ঝামেলা কম ও পাহাড়ের মাটি ক্ষয় রোধে সহায়ক৷ লাভ বেশি হওয়ায় বর্তমানে অনেকে এ আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন৷ বছরের মে থেকে জুন মাস কমলা চারা রোপনের উত্তম সময়৷ সাধারণত চারা লাগানোর ৫-৬ বছর পর থেকে কমলা উত্পাদন শুরু হয়৷ মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে ফুল থেকে ফল এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে ওই ফল পাঁকতে শুরু করে৷ এখানকার পাহাড়ের মাটি, আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী৷ এ কারণে বাঙ্গালীদের দেখাদেখি উপজাতিরা জুম চাষের সাখে সাথে বাণিজ্যিক ভাবে কমলা বাগান করছেন৷ এক একটি কমলা গাছে ৫শ থেকে ১হাজারটি কমলা ধরে এবং ১৫ বছর পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে৷
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আলীকদম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মামুন ইয়াকুব এপ্রতিবেদককে বলেন, কমলা চাষে খুবই উপযোগি৷ এখানকার পাহাড়ের মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে এসিডিক রযেছে৷ কমলা চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় জুম চাষিরা জুম চাষ থেকে বেরিয়ে এসে ধীরে ধীরে কমলা বাগান করার দিকে ঝুঁকে পড়ছে৷ পার্বত্য এলাকায় এখনো হাজার হাজার হেক্টর পাহাড়ি ভূমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে৷ এই বনায়নে সরকারি ঋণ সহজ করা হলে কমলা, আম সহ লাভবান ফলজ বাগানের দিকে স্থানীয়রা এগিয়ে আসতেন৷