সোমবার ● ২৮ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঘুমধুম সীমান্তে জলপাইতলিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের আটকিয়ে দিয়েছে বিজিবি
ঘুমধুম সীমান্তে জলপাইতলিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের আটকিয়ে দিয়েছে বিজিবি
পলাশ বড়ুয়া, ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ফিরে :: কক্সবাজারের উখিয়া ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ক’দিন ধরে প্রচন্ড গুলিবর্ষণ করায় প্রাণভয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় শত শত রোহিঙ্গা। কড়া পাহারায় বিজিবি জওয়ানরা।
২৭ আগষ্ট রবিবার সরেজমিন ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলি, ঘুমধুম লাল ব্রিজ, তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার রোহিঙ্গা কাটা তারের ওপারে আহাজারি করছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমারের সহিংতায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাটাতারের বেড়ার সন্নিকটে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যে করে বিরতিহীন ভাবে গুলি চালিয়েছে বিজিপি। বিজিপির গুলিতে ঢেকিবনিয়া এলাকার মাওলানা এরশাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
এছাড়াও ফকিরাবাজার এলাকার আব্দুর রহিম (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যায় বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।
এদিকে বিজিবি’র কড়া পাহারায় জীবন বাঁচাতে ঝুকি নিয়ে কাটা তারের বেড়া পার হয়ে নদীতে ঝাপ দিচ্ছে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ,শিশু,কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা
৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মনঞ্জুরুল হাসান খাঁন জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত জুড়ে ব্যাপক গুলি শব্দ শোনা যায় শনিবার দুপুরে। এতে সীমান্তে অবস্থানকারী স্থানীয়রাও আতংকে পালিয়ে যাচ্ছে অন্যত্রে। তারপরও বিজিবি’র রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে।
ঘুমধুম বিজিবি’র নায়েক সুবেদার জাকির বলেন, সীমান্তের জলপাইতলি এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় প্রায় ৫শতাধিক রোহিঙ্গাদের আটকানো হয়েছে। তাদেরকে সুযোগ বুঝে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। ওপারে গুলিবর্ষণ করছে। এপারে বিজিবিও কঠোর নজরদারীতে রেখেছে। তবুও প্রাণের রক্ষার্থে রাতের আধারে অনুপ্রবেশ কালে বাধা দিলে নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছে অনেকে।
কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ শামদ্দোজা বলেন, সীমান্তে বিজিবি’র পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে প্রতিরোধে কাজ করছে। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যায় ৬৭ জন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশের সময় আটক করা হয়।
ঘুমধমু জলপাইতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যান্তরে চলে আসা টেকিবনিয়া এলাকার বাসিন্দা লোকমান হাকিম (৫০) ও তাঁর ভাই মো. নোমান (৪৫) বলেন, তারা স্ত্রী,পুত্র,জায়গা-জমি,গরু,ছাগল,হাঁস,মুরগী ফেলে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে বিজিবি’র হাতে আটক অবস্থায় রয়েছে এরা।
বয়োবৃদ্ধ আনু মিয়া (৮৫) অস্পষ্ট কন্ঠে বলেন, বিজিপির গুলিতে তাঁদের এলাকার হাবিবুল্লাহর ছেলে মাওলানা এরশাদ মারা গেছে। একই এলাকার জয়নাল আবেদীন(৩৩) বলেন, শনিবার দুপুরে অতর্কিত অবস্থায় প্রচন্ড গুলি শব্দ পেয়ে সে স্ত্রী ছৈয়দা খাতুন (২৯) ছেলে হাসান (৭) মো. ইছা (৫) মেয়ে মাহিদা (২)কে নিয়ে কাটা তারের বেড়ার উপর দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছে।
এসময় ঢেকিবনিয়ার মোহছেনা বেগম ও রুহুল আমিন দম্পতির ১০ দিন বয়সী কন্যা সন্তানের সাথে দেখা মেলে সীমান্তে !
অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা মো. আলম জানান, তাঁদের গ্রামের আব্দুর রহিম নামের এক যুবক বিজিপি’র গুলিতে গুরুতর আহত হলে তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা বাংলাদেশে নিয়ে আসার সময় ওয়ালিদং পাহাড়ের চিককুম এলাকায় পৌছলে সে মারা যায়। তার মৃতদেহ এখনও পর্যন্ত সেখানে আছে বলে জানায়।