বৃহস্পতিবার ● ৩১ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » রোহিঙ্গাদের আরাকানে স্বাধীনতার ডাক
রোহিঙ্গাদের আরাকানে স্বাধীনতার ডাক
প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন লামা প্রতিনিধি :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানে অন্তত ৮শতাধিক মানুষের বেশী মৃত্যু হয়েছে ৷ কয়েক দশক ধরে চলা রোহিঙ্গা নির্যাতনের পর এবার মিলছে প্রতিরোধের আভাস৷ শুধু পালিয়ে বেড়ানো নয়, অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা ৷ এমননী তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ।
২৫ আগষ্ট থেকে মায়ানমার সেনাবাহিনী নির্বিচারে দমন শুরু করে রোহিঙ্গাদের উপর তাঁদের দাবী বিদ্রোহীরা তাঁদের ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে । এতে বাহিনীর অন্তত ১২ জন সদস্য তাতে নিহত হন৷তবে রয়টার্স জানায় অভিযান চলা কালে সাধারণ রোহিঙ্গাদের পাল্টা হামলায় অনেক সেনা নিহত হয়েছে ফলে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় আগের তুলনায় বেশী নিপীড়ণ ও নির্যাতন শুরু করে বার্মা আর্মি ।
ফলে সীমানা পেরিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা৷ তবে বরাবরের মতোই বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ফেরত পাঠাচ্ছে রোহিঙ্গাদের৷ ফলে নো ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা৷
তবে এবার শরণার্থীদের ঢলে একটু পরিবর্তন দেখছেন বিজিবি সদস্যরাও৷ অন্যান্যবার পুরো পরিবারসহ রোহিঙ্গারা পালিয়ে এলেও এবার শরণার্থীদের দলে তরুণ ও মাঝ বয়সী পুরুষদের সংখ্যা একেবারেই কম বলে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা ৷
‘‘পুরুষদের কী হয়েছে, জিজ্ঞেস করলে (রোহিঙ্গা নারীদের) তাহারা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান লড়াই করার জন্য পুরুষরা রয়ে গেছে,” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন প্রতিনিধিকে।
নতুন সহিংসতায় পালিয়ে আসাদের ভাগ্য সহায় না থাকলেও সন্তানসম্ভবা হওয়ায় আয়েশা বেগম স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশে কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পে৷ তবে সন্তানের জন্ম দেখতে পারছেন না তাঁর স্বামী৷ রোহিঙ্গাদের হয়ে যুদ্ধ করার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইনেই রয়ে গেছেন তিনি৷
‘‘আমাদের তিনি (আয়েশার স্বামী) নদী পাড়ে এনে বিদায় দিয়েছেন৷ বলেছেন, বেঁচে থাকলে দেখা হবে স্বাধীন আরাকানে, মারা গেলে পরপারে ৷”
কী এই এআরএসএ?
আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি (এআরএসএ)৷ অক্টোবর হামলার দায় স্বীকারের পর থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠেছে এআরএসএ৷ দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নির্যাতনের শিকার হলেও সাধারণ রোহিঙ্গারা এতদিন সহিংসতা এড়িয়ে চলছিল৷
কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে এবং চলমান সেনা অভিযানের পর সাধারণ রোহিঙ্গারাও হাতে তুলে নিচ্ছেন অস্ত্র ।
সীমান্তে আসা রোহিঙ্গা নেতা শাহ আলম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আশেপাশের তিন গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ জন যুবক ‘স্বাধীনতার যুদ্ধে’ যোগ দিয়েছে এআরএসএতে৷ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘তাদের কীই বা করার ছিল! পশুর মতো খুন হওয়ার চেয়ে লড়াই করে মারা যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা৷”
মিয়ানমারের নেতা অং সান সুচি এআরএসএকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন বলে উল্লেখ করেছেন৷ সংগঠনটির বিরুদ্ধে শিশু যোদ্ধা ব্যবহারের অভিযোগও করেছেন তিনি৷ তবে এআরএসএ এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে৷
আনুষ্ঠানিকভাবেই এখন বিশ্বজুড়ে এআরএসএকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত করানোর উদ্যোগ নিয়েছে মিয়ানমার সরকার৷ কঠোর বিবৃতি এবং এআরএসএর গুলিতে ও হামলায় নিহত বেসামরিক নাগরিকদের ছবি প্রকাশ করে বিশ্বে জনমত গড়ে তোলারও চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার৷
কিন্তু পালটা প্রচার চালাচ্ছে এআরএসএ-ও৷ শুধু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যেই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের কাছেও পৌঁছে গেছে যুদ্ধের ডাক৷
অস্ত্র নেই, তাতে কী?
এআরএসএ বিদ্রোহীদের ভারী অস্ত্র বলতে কিছুই নেই৷ এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ রাইফেল , ছুরি, ঘরে তৈরি বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র৷ফলে মিয়ানমারের সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে কতটুকু টিকতে পারবে বিদ্রোহীরা, সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে৷
কিন্তু তাতে দমছেন না রোহিঙ্গারা৷ ‘‘আমাদের শত শত যোদ্ধা পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে৷ আমরা আরাকানকে রক্ষায় শপথ নিয়েছি, সেটা চাকু এবং লাঠি দিয়ে হলেও আমরা করবো,” সীমান্তে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন এক রোহিঙ্গা যোদ্ধা৷
কুতুপালং ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবকের মন্তব্য ছিল এমন – ‘‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে৷ আমাদের তরুণরাও চিন্তা করছেন যুদ্ধে যোগ দেয়ার৷অনেকে সীমানা পার হয়ে চলে গেছেন এখন আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, প্রথম সুযোগেই আমরা সীমান্ত অতিক্রম করবো৷”
হাজেরা বেগমের তিন ছেলেকে নিয়ে গত মাসে সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসেছেন৷ তাঁর আরো দুই ছেলে রয়ে গেছেন যুদ্ধ করবেন বলে৷ বাংলাদেশে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর আরেক ছেলেও যোগ দেন লড়াইয়ে৷
প্রতিবেদক কে তিনি বলেন, ‘‘ওরা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) আমাদের এমনিতেই মারবে৷ এরা (এআরএসএ) আমাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে৷ আমি আমার ছেলেদের পাঠিয়েছি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে৷”
তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার সন্তানদের উৎসর্গ করেছি, আরাকানের জন্য৷”
ছবিতে নব্য গঠিত হওয়া এআরএসএর কয়েকজন স্বাধীনতাকামী ছবি ।