রবিবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » কালীগঞ্জে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে গরম রডের ছেঁকা দিয়ে স্তন কেটে দিল স্বামী
কালীগঞ্জে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে গরম রডের ছেঁকা দিয়ে স্তন কেটে দিল স্বামী
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্ত্রী মরিয়ম বেগমের (৩৬) যৌনাঙ্গে গরম রডের ছেঁকা দিয়েছে স্বামী তমিজ উদ্দিন (৫০)। এ ঘটনার পর স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নির্যাতিতা স্ত্রী বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নং ৬) দায়ের করেছে।
ওই মামলায় ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলেও অর্থের অভাবে সেখান থেকে ফিরে এসে কালীগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মরিয়ম বেগম।
আটক তমিজ উদ্দিন উপজেলার কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কের নাভানা কারখানার পাশে চায়ের দোকান করতো। আর নির্যাতিতা মরিয়ম বেগম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর গ্রামের তৈয়ব আলীর মেয়ে। সম্পর্কে তারা আপন মামাতো-ফুপাতো ভাই বোন।
নির্যাতিতার মা খোশ আক্তার জানান, প্রায় দেড় যুগ আগে তার ভাইয়ের ছেলে তমিজ উদ্দিনের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। বিয়ের পর তাদের সংসারে তামিম (১৭), শামীম (১৬), রামীম (১৩) ও ইয়ামিম (১১) নামের চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। চার সন্তান আর স্বামী-স্ত্রী মিলে বড় পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল তমিজ উদ্দিন। তাই প্রায় চার বছর আগে স্বামীর সম্মতিতেই লেবাননে নারী শ্রমিকের কাজে যায় মরিয়ম। সেখানে প্রায় দুই বছর অবস্থান করে দেশে ফেরেন তিনি। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। পরে অবশ্য তা মিটেও যেত। মরিয়ম ছিল তার প্রথম স্ত্রী। কিন্তু প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে সে (তমিজ উদ্দিন) আরও ৫টি বিয়ে করে। বর্তমানে প্রথম স্ত্রী ছাড়া কেউই নেই তার সঙ্গে।
তিনি আরও জানান, ঈদের একদিন পর গত সোমবার ঘরের ভেতর আটকে রেখে টানা ৪ দিন নির্যাতন করে তমিজ উদ্দিন। এসময় কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকেই মারতে যায় সে। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনা। কিন্তু পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হলে বড় ছেলে তামিম গত বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ থানায় পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে মরিয়মকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার এবং স্বামী তমিজ উদ্দিনকে আটক করেন। মরিয়মকে আহত অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। আর স্বামীকে থানায় পাঠায়।
নির্যাতিতা মরিয়ম ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হাও-মাও করে কেঁদে এই প্রতিবেদককে বলেন, তার স্বামী লোহার রড গরম করে যৌনাঙ্গ (গোপনাঙ্গ) ছাড়াও হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়। এই সময় তার দুটি স্তনের মাথা কেটে ফেলে এবং সমস্ত শরীর রক্তাক্ত জখম করে।
তিনি জানান, ২০০৯ সালে তমিজ তার চাচা আনোয়ার হোসেনের হত্যা মামলারও এজাহারভূক্ত আসামী। ওই মামলায় সে জেলও খেটেছে। কিন্তু বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে ।
সরেজমিনেও মিলেছে ঘটনার সত্যতা। ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বেডে গিয়ে পাওয়া গেল আগুনে পুড়ে গরম করা রডের ছেঁকায় দগ্ধ মরিয়মকে।
স্ত্রীকে কেন নির্যাতন করা হয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের কাছে স্বামী তমিজ উদ্দিন বলেন, এটা তার পাপের প্রায়শ্চিত্য।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, মরিয়মকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার অবস্থা শংকটাপন্ন দেখে ঢামেকে পাঠানো হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান জানান, তিনি নির্যাতন এবং বিবস্ত্র অবস্থায় মরিয়মকে উদ্ধার ও তমিজ উদ্দিন আটক করা হয়েছে। তার স্ত্রী বাদী হয়ে স্বামী তমিজ উদ্দিনকে প্রধান করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছে। সেই মামলায় তার স্বামীকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।