রবিবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » হালুয়াঘাটের জঙ্গলে ১০বছর ধরে শতবছরের বৃদ্ধা মা
হালুয়াঘাটের জঙ্গলে ১০বছর ধরে শতবছরের বৃদ্ধা মা
ময়মনসিংহ অফিস :: (২৬ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.৫৮মি.) ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের জঙ্গলে ১০বছর ধরে অবহেলিত এক বৃদ্ধা মা বসবাস করছেন। বয়সে নব্বইয়ের কোঠা পেরিয়ে যাওয়া ওই বৃদ্ধা মায়ের জমি-জমা লিখে নিয়ে সন্তানরা এখন আর তার খোঁজ নেয় না। প্রায় ১০ বছর ধরে জঙ্গলে ভাঙ্গা একটি ঘরে বসবাস করছেন এই মা। দিনের বেলা বহু কষ্টে হাঁটু দিয়ে ক্ষানিক চলাচল করতে পারলেও রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে আশেপাশের সাপ-শেয়াল তার নিত্যসঙ্গী।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার নড়াই ইউনিয়নের বাঘমা গ্রামের মৃত স্বামী দুবরাজ হাজীর স্ত্রী সমলা খাতুন এই দুর্বিসহ অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন। ওই এলাকার মানুষের মুখে মুখে এখনো হাজীর ধন সম্পদের সুনাম রয়েছে। একদিন এই মায়ের সব ছিল। তবে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই কষ্ট নেমে আসে এই মায়ের জীবনে। দুঃখকে নিত্যসঙ্গী করে চলছেন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মা।
জঙ্গলের ভেতরে এখন যে ঘরে এই বৃদ্ধা বাস করছেন সেখানে পানযোগ্য পানি নেই। ভাঙ্গা পাত্রে জমে থাকা বৃষ্টির পানিই তার ভরসা। একবেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা না খেয়ে দিন কাটে। অসুস্থ হলেও খোঁজ নেবার নেই কেউ। প্রতিনিয়তই তিনি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে চলেছেন।
এলাকাবাসিরা জানান, ব্যক্তিজীবনে চার সন্তানের জননী এই মায়ের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তবে দুই ছেলে বেঁচে না থাকায় মেয়েরাই তার শেষ ভরসা। তবে এই মেয়েরা মায়ের দেখাশোনা করে না। রাতে বৃদ্ধ মায়ের কারণে ঘুমোতে কষ্ট হওয়ায় মেয়েরা তার মা’কে বাড়ির পেছনের জঙ্গলে থাকতে দিয়েছে। সেখানে বিদ্যুতের আলো না থাকায় অন্ধকারেই দিনপার করতে হচ্ছে সমলাকে। মেয়েদের ঘরে বিদ্যুতের আলো জললেও অভাগী মা’কে থাকতে হয় জঙ্গলের অন্ধকারে।
বৃদ্ধার দুই মেয়ের নাম আকলিমা ও হালিমা। কৌশলে মেয়ের জামাইরা ওই বৃদ্ধা’র জমি-জমা লিখে নেয়ার পর থেকে বছরের পর বছর সেখানে থেকে রোগে-শোকে জর্জরিত তিনি।
তারা আরও বলেন,বৃদ্ধার মেয়ের জামাতা নুরুল হালিম কৌশলে বৃদ্ধার কাছ থেকে সকল সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকেই তারা আর দেখাশোনা করতে রাজি নন বৃদ্ধা মায়ের। দুই-মেয়ে ও তাদের জামাতারাই এখন ভোগ করছে সব সম্পত্তি। এমনকি বৃদ্ধা মায়ের বয়স্ক ভাতার টাকাটাও তুলে নেয় মেয়েরা।
তবে বৃদ্ধার মেয়ে আকলিমা সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, মায়ের ইচ্ছেতেই মা ওই জঙ্গলের ঘরটিতে থাকেন। মা সেখানেই থাকতে পছন্দ করেন। তবে প্রতিদিনই সেখানে গিয়ে মা-কে খাবার ও পোশাক পালটে দিয়ে আসার দাবি করে আকলিমা। তাছাড়া মায়ের চিৎকারে রাতের বেলায় কেউ ঘুমোতে পারে না, এজন্য তাকে ওই ঘরে রাখা হয়েছে বলে জানায় আকলিমা।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন এ বিষয়ে বলেন, অতিসত্ত্বর সেখানে লোক পাঠিয়ে যাবতীয় খোঁজ-খবর নিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে যাতে সন্তানদের অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার না হন সে জন্য দেশে (২০১৩ সালে পাস হয়) পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন রয়েছে। ওই আইনটিতে সন্তানদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি অপরাধ, দন্ড ও বিচারব্যবস্থার বিষয়েও বিধান দেয়া আছে। সকলকে এ বিষয়টি মেনেই চলতে হবে।