মঙ্গলবার ● ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হবে : প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হবে : প্রধানমন্ত্রী
উখিয়া প্রতিনিধি :: (২৮ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৪০মি.)
মিয়ানমার সমস্যা সৃষ্টি করেছে, সমস্যার সমাধানও তাদের করতে হবে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ না হওয়া পর্যন্ত এ দেশে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তাদের নাম, ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশ্রিত সকল রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষ, রোহিঙ্গাদের পাশে আমরা আছি। রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনসহ মানুষ হিসেবে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিশ্বের সকল মুসলিম দেশের পাশাপাশি দাতা দেশসহ, জাতিসংঘ এবং ওআইসি’র সহযোগিতা নেওয়া হবে।
মিয়ানমার সরকার সম্মানজনক ভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলে আমরাও কঠোর হবো বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১.৫২ মিনিটে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণ ও সংক্ষিপ্ত সভাস্থলে ১৩ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গারা এদেশে শরণার্থী হিসেবে অনুপ্রবেশ করেছিল। কূটনৈতিক তৎপরতায় তাদেরকে আমরা সম্মানজনক ভাবে ফেরত পাঠিয়েছিলাম। এবারও তার ব্যতয় ঘটবে না। ধারাবাহিকতায় তাদেরকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে বর্তমান সরকার দাতা দেশ গুলোকে সাথে নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ধৈর্য্য ধারণের আহবান জানিয়ে বলেন, সমস্যা থাকবে, সমাধানও আছে। এদেশে রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় আচরণ করার জন্য সকলের প্রতি উধার্ত আহবানও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে এখানে আশ্রয় দিয়েছি। ১৯৭১সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীও আমাদের উপর এ রকম নির্যাতন করেছিল। তখন আমাদের বাড়ি ঘর সহ পুড়িয়ে দিয়েছিল। তখন আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। রিফিউজি হয়েছিলাম আমরাও।
নির্যাতিত রোহিঙ্গারা তারা কষ্ট করে আজ আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা না করে। ১৬ কোটি মানুষকে আমরা খাবার দেই। তার সঙ্গে এরকম আরও ২, ৪, ৫ লাখ লোককে খাবার দেওয়ার মত শক্তি বাংলাদেশের রয়েছে। আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাব।
মিয়ানমারে যে ভাবে গণহত্যা চালিয়েছে তাতে আমি মর্মাহত। আমি নিজেও স্বজনহারা। স্বজনহারার বেদনা কত যে কঠিন সেটা আমি বুঝি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্যাতন এমন পর্যায় গেছে যে ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। নৌকাডুবিতে নারী-শিশুর লাশ নাফ নদীতে ভাসছে। মাথা ও বুকে গুলি খাওয়া লাশ ভেসে আসছে। মেয়েদের অত্যাচার করা হচ্ছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা তো মানুষ, আমাদের ভেতর তো মনুষ্যত্ব আছে। আমরাও তো রিফিউজি ছিলাম। রিফিউজি হিসেবে থাকা কতটা কষ্টের তা আমরা বুঝি। আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমার সরকারকে বলব- এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে রিফিউজি হিসেবে থাকা মোটেও সম্মানজনক নয়।’
তিনি বলেন, মানবিক কারণে তাদের জায়গা দিচ্ছি। কারণ আমরা তো অমানুষ হতে পারি না, অমানবিক হতে পারি না। তাই আশ্রয় নেওয়া সকল রোহিঙ্গাদের আবাসন, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা সেবায় যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে। মানবিক বিবেচনায় সরকার, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষকে যে যার অবস্থান থেকে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাদে, চীফ হুইফ আসম ফিরোজ, হুইফ ইকবালুর রহিম, কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সায়মুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদি, কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, এমপি আবু রেজা নদভী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্ণেল ফোরকান আহমদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপি, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী প্রমুখ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
সভাশেষে ২ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। সমাবেশ শেষে গাড়ী যোগে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে উখিয়া ত্যাগ করেন।