মঙ্গলবার ● ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » কৃষি জমিতে অবৈধ ভাবে যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা : দেখার কেউ নেই
কৃষি জমিতে অবৈধ ভাবে যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা : দেখার কেউ নেই
পার্বতীপর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :: (২৮ ভাদ্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৫৮মি.) দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কৃষি জমিতে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় পাল্লাদিয়ে ইটভাটা তৈরীর কাজের হিড়িক পরেছে।
যত্রতত্রভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা বন্ধের তদারকি করার যেন কেউই নেই ? গত ৬ সেপ্টম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্বতীপুর উপজেলার ৯নং হামিদপুর ইউনিয়নের ১৫টি ইটভাটার মধ্যে ৯টির নামকেআস্তে কাগজপত্র থাকলেও ৬টিরই কোন কাগজপত্র নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রসাশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এসব ভাটা মালিকরা নির্বিঘ্নে ভাটা তৈরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
হামিদপুর ইউনিয়নের ঢেরের হাট এলাকার সমতা ব্রিক্স ভাটা মালিকের ছোট ভাই সোহাগ জানান, তাদের দু’টি ভাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার কাগজপত্র পায়নি।
অথচ কৃষি আবাদি জমি ভরাট করে এরই মধ্যে ইট তৈরীর প্রস্তুতি চালাতে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। মেসার্স সমতা ব্রিক্স’র প্রোঃ সুলতান মাহমুদ ও আকতারুজ্জামান স্বপন মাস্টার কৃষি জমির উপর অবৈধভাবে কয়লা মজুদসহ ইট তৈরীর সরঞ্জামাদী, খলান ও মেশীন প্রস্তুত করেছে। একই ইউনিয়নের সুলতানপুর এলাকায় নজরুল ইসলাম ও মমিন এফ.এস.বি নামে কৃষি জমিতে অবৈধ ভাবে ভাটা গড়ে তুলছে।
নীতিমালা অনুযায়ী ইটভাটা স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের দেওয়া লাইসেন্স বা (ছাড়পত্র) ছাড়া কোন ব্যক্তিই ইটভাটা তৈরী করতে পারবে না। সেই সাথে পরিবেশ অধিদপ্তরের ও ছাড়পত্র প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়াও ইটভাটা স্থাপন ও ইট তৈরীর ক্ষেত্রে কৃষি জমি/আবাদী জমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, নদী-নালা, দীঘি, খাল বিল, খাড়ি এবং পতিত জমি থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন কিংবা গ্রামীন রাস্তা ব্যবহার করে ভাড়ী যানবাহন দিয়ে ইট বা ইট তৈরীর কাঁচামাল পরিবহণ করা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ।
এসব ভাটার অন্তত ১শত গজের মধ্যে সহস্রাধীক জনগনের বসবাসসহ একটি সুপ্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্টান হাজ্বী সানাউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে । এতে ইট পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টরের বিকট আওয়াজে শব্দ দূষনসহ বেপরোয়া চলাচলে গ্রামীন রাস্তায় বেহাল দশার সৃষ্টি হচ্ছে।
এসব ইটভাটা স্থাপনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীসহ ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বর মোকছেদ জানান, সরকারী দপ্তরে অভিযোগ করার পরেও ভাটা বন্ধের জন্য কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করছে না প্রশাসন। হামিদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ভাটা মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ইটভাটার অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে হামিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ছাদেকুল ইসলাম জানান, আমার ইউনিয়নে একাধীক ভাটা হওয়ায় এলাকার পরিবেশ হুমকীর মুখে। এসব ভাটা বন্ধ না হলে এ এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে উঠবে। ইটভাটার ইট তৈরীতে জমির ফসল উৎপাদনের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। ইটভাটা হতে নির্গত বিষক্ত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণসহ মানুষ, পশু পাখি, উদ্ভিদ ও জীব বৈচিত্রের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। খাদ্য শস্যসহ বিভিন্ন ফসলাদি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। সরকারী বিধি-বিধানের কোন তোয়াক্কা না করে কতিপয় ধনাঢ্য ব্যক্তি কোন এক অদৃশ্য শক্তির জোরে আবাদী জমিতে ও আবাসিক এলাকার সন্নিকটে প্রতিযোগীতামূলক ভাবে ইটভাটা গড়ে তুলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ মো. রওশান কবির বলেন, এ বছর উপজেলায় আমন ধনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৪ শত হেক্টর। ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে আইন বিধি-বিধান কোনটিই মানা হচ্ছে না। আমি কোন ইটভাটাকে কোন প্রকার প্রত্যয়ন পত্র দেইনি। কিভাবে এসব ভাটা তৈরী হচ্ছে তা আমার জানা নেই। সরকারী বিধান অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করতে গেলে প্রভাবশালী নেতাদের চাপে অনেক বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়।
অবৈধ ভাবে ইটভাট স্থাপনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয় অফিস হতে এসব ভাটা মালিকরা কোন প্রকার কাগজ পাবে না বরং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে এসব ভাটার বন্ধ করে দেয়া হবে।
সচেতনমহল এসব আবাদী জমি উদ্ধারসহ এলাকার নির্মানাধীন ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ বিশেষভাবে কামনা করেছেন।