বুধবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » কালীগঞ্জে স্বামীর নির্যাতনের শিকার মরিয়মের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ইউএনও
কালীগঞ্জে স্বামীর নির্যাতনের শিকার মরিয়মের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ইউএনও
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান (আতিক), গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্বামীর বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহবধু মরিয়ম বেগমের (৩৬) চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন কালীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
তিনি ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেলে ওই গৃহবধূকে দেখতে কালীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি নির্যাতিতার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তাঁর উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ ছাদেকুর রহমান আকন্দ জানান, পুলিশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মরিয়ম বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তার যৌনাঙ্গে ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে রড গরম করে ছেকা দিয়েছিল স্বামী। তার স্তনের বোটাও কেটে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া শরীর জুড়ে ক্ষত রয়েছে। ভর্তির পর উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে সে আবার এ হাসপাতালে ফিরে এসেছিল। এখানে তার উপযুক্ত চিকিৎসা হচ্ছিল না। জানতে পেরে সোমবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ব্র্যাকের লিগ্যাল সাপোর্ট প্রতিনিধিসহ মরিয়মকে দেখতে আসেন। পরে তিনি টাকার ব্যবস্থা করে নির্যাতিতাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠিয়েছেন।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন জানান, বিষয়টি খুবই অমানবিক। স্থানীয়ভাবে ওই নির্যাতিতার চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা অফিসের পক্ষ তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তাছাড়া চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে ইউএনও স্যারের সহযোগীতায় তাকে সোমবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ব্র্যাক কালীগঞ্জ শাখার প্রতিনিধি মোঃ রাশেদুল হক জানান, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর চিকিৎসা ও আইনি সহায়তায় কাজ করছেন তারা।
এ ব্যাপারে ব্র্যাকের লিগ্যাল সাপোর্টে গাজীপুর জজ কোর্টে লিগ্যাল এইডে নির্যাতনকারী স্বামী তমিজ উদ্দিনের (৫০) বিরুদ্ধে নারী ও শিশু অধিকার আইনে নারী নির্যাতন মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুঃ মুশফিকুর রহমান জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানার সাথে সাথে তাকে দেখতে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।
নির্যাতিতার মা খোশ আক্তার ও স্বজনরা জানান, প্রায় দেড়যুগ আগে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর গ্রামের তৈয়ব আলীর মেয়ে মরিয়ম বেগমের সঙ্গে তার মামাত ভাই তমিজ উদ্দিনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্থানীয় এক কারখানার পাশে তমিজ উদ্দিনের চায়ের দোকান রয়েছে। সংসারে অভাব অনটন মেটাতে প্রায় চার বছর আগে স্বামীর সম্মতিতেই তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী লেবাননে নারী শ্রমিকের কাজে যায়। সেখান থেকে দুই বছর পর দেশে ফিরে আসে সে। প্রথম স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তমিজ উদ্দিন আরো ৫টি বিয়ে করে। তবে সেগুলো টিকে নি। এদিকে প্রথম স্ত্রী দেশে ফিরে আসার পর পারিবারিক নানা বিষয়াদি নিয়ে তার সঙ্গে স্বামীর প্রায়শঃ ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। এর জের ধরে মরিয়ম বেগমকে নির্যাতন করে তার স্বামী তমিজ উদ্দিন।