বুধবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » রোহিঙ্গাদের ত্রাণ যাচ্ছে স্থানীয়দের ঘরে
রোহিঙ্গাদের ত্রাণ যাচ্ছে স্থানীয়দের ঘরে
সোহেল রানা, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফিরে :: (৫ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৪মি.) ত্রাণের গাড়ি দেখলেই ছুটে আসছে হাজারও রোহিঙ্গা শরণার্থী,স্থানীয়রা ও পুরাতন রোহিঙ্গারা । হাত পেতে গাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে। কখন উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলবে খাবার,পোশাক। এমনটাই যখন চিত্র কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং অস্থায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ও টেকনাফ সড়কে। ঠিক তখনই লজ্জার আরেক চিত্র রোহিঙ্গাদের থেকে স্থানীয়দের ত্রাণ কেঁড়ে নেওয়ার দৃশ্য। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রোহিঙ্গাদের পাশাপশি স্থানীয়রা, ও পুরাতণ রোহিঙ্গাও ত্রাণ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এমনকি রোহিঙ্গাদের হাত থেকেও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ত্রাণের বস্তা। স্থানীয়রা ত্রাণ সংগ্রহ করে তা আবার বিক্রি করার দৃশ্য দেখা যায়।
এদিকে, শনিবার (১৬ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যার আগে কুতুপালং অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফেরার সময় দেখা যায় আরেক চিত্র একটি সংগঠন একটি ট্রাক নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্র্যাণ বিতরণ করতে যাচ্ছে টিক তখনই ট্রাকটির সামনে ও পিছনে ছুটছে হাজারও স্থানীয় ও পুরাতন ও নতুন রোহিঙ্গা ।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে ও টেকনায় সড়কে বৃষ্টিতে ভিজে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য দেখা যায় স্থানীয় ও পুরাতান রোহিঙ্গা। স্থানীয় আব্দুল আলিম নামের এক যুবক বলেন বৃষ্টিতে যে ব্যাক্তিরা ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে তার অধিকাংশ স্থানীয় ও পুরাতান রোহিঙ্গা। অপর দিকে বৃষ্টিতে ভিজে শিশু কোলে নিয়ে কয়েক জন রোহিঙ্গা দাড়িয়ে রয়েছে তারাই মুলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশা নতুন রোহিঙ্গা।
এদিকে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দাঁড়িয়ে থাকা একটি ত্রাণের ট্রাক ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল শত শত শরণার্থী। এক পর্যায়ে যখন উপর থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছিল ত্রাণের বস্তা, তখন দেখা যায় আশপাশেরে দোকান থেকে কিছু যুবক বের হয়ে এসে রোহিঙ্গাদের উপর জোর প্রয়োগ করে ত্রাণ কেঁড়ে নিচ্ছে। রোহিঙ্গা শিশুদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় ত্রাণের বস্তা।
অপরদিকে, কয়েক জন যুবকে দেখা যায় ত্রাণের বস্তা নিয়ে পাশের দোকান ও বাড়িতে নিয়ে রাখছে। ঘটনাটি দেখে সাংবাদিকরা সেখানে হাজির তখন ঐ যুবকরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
খুলনা থেকে ত্রাণ দিতে আসা জামান আহমেদসহ অনেকেই জানান, ‘যারা ত্রাণ দিতে এসেছে। কিন্তু আমাদেরসহ অনেক গাড়ি ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। এখানকার স্থানীয় কিছু লোক বললো যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিষেধ করেছে ভেতরে ত্রাণ নিয়ে যেতে। তাই আমরা এখানে বন্টন করেছি। কিন্তু যা দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে স্থানীয়রাই ঘরে নিয়ে নিচ্ছে ত্রাণ।’
এ বিষয়ে অধিকাংশ স্থানীয়রাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, ঘটনা স্থলে উপস্থিত একজন বলেন, ‘এই চিত্র আসলেই আমাদের লজ্জা দেয়। আমাদের চোখের সামনেই কিছু লোক এ হীন কাজ করছে। বাধা দিলেও পরে কোন লাভ হচ্ছে না।’
স্থানীয় কুতুপালং গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ নুর টিটু ও আব্দুল আলীম জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ত্রাণ স্থানীয়রা ও পুরাতন রোহিঙ্গারাই পাচ্ছে কারণ রাস্তার পাশে যাদের দেখা যায় তারা অধিকাংশই স্থানীয় ও পুরাতন রোহিঙ্গা। তাই প্রকৃত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প অনেক ভিতরে তাই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ত্রাণ স্থানীয়রাই পাচ্ছে। নতুন রোহিঙ্গারা কিছুটা বোকা তাই তারা রাস্তার পাশে ভয়ে আসেনা। আমাদের অনুরোধ যারা ত্রাণ দিতে আসবে তার যেন একটু কষ্ট করে হলেও ভিতরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে ত্রাণ দেয়। আর রাস্তার পাশে যাদের দেখা যায় তারাই বার বার ত্রাণ পাচ্ছে ভিতরের রোহিঙ্গার কোন ত্রাণ পাচ্ছে না ।
কিছু দিন আগে,মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিপন্ন জীবনের করুন পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে আর্থিক সহায়তার আর্তি জানিয়ে পোষ্ট দেন ইত্যাদি খ্যাত সমাজকর্মী সাংবাদিক মামুন বিশ্বাস।
এরপর দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫ লাখ ৭ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়। পরে সোমবার সকালে ৫০২ জন অসহায় রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে নদগ ১হাজার করে অর্থ বিতরণ করেন সাংবাদিক মামুন বিশ্বাস। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য নামাজ ঘর তৈরীর করতে নগদ ৫ হাজার টাকা তুলে দেন তিনি।
এদিকে রোহিঙ্গাদের নদগ অর্থ সহায়তার জন্য সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরে সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের উদ্যোশে রওনা দিয়ে শনিবার সকালের দিকে পৌছায়। এরপর উখিয়া উপজেলার কুতুবপালং ও পশ্চিম লম্বাশিয়ার বিভিন্ন টিলা ও দুর্গম অঞ্চলে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের খোজ খবর নেন।
এরপর রবিবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে টোকেন সরবরাহ করা হয়। পরে সোমবার সকালে রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে নদগ অর্থ বিতরণ করা হয়। এসময় বিপর্যস্ত রোহিঙ্গরা নগদ অর্থ পেয়ে উদ্যোক্তা মামুন বিশ্বাসসহ দেশ-বিদেশের ফেসবুক বন্ধুদের জন্য মহান আল্লাহুর নিকট দোয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ফেসবুক আইকন সাংবাদিক মামুন বিশ্বাস বলেন, আপনরা যারা ত্রাণ দিবেন প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে পারেন অথবা যারা ত্রাণ দিবেন প্রকৃত মানুষ গুলো হাতে দিতে পারলে আপনার কষ্টটা কাজে লাগবে।
তাই যারা ত্রাণ দিবেন একটু দয়া করে পায়ে হেটে কষ্ট কর রোহিঙ্গা অস্থায়ী ক্যাম্পে ভিতেরে যারা আসে তাদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমি এই তিন দিন রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ঘুরে যতটুকু দেখেছি রাস্তার পাশে যাদের দেখা যায় তারাই বার বার ত্রাণ নিচ্ছে ভিতরের রোহিঙ্গারা ত্রাণ পাচ্ছে না ঠিকমত।