বৃহস্পতিবার ● ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » উখিয়াসহ ১৩৩টি বৌদ্ধমন্দিরের বাড়তি নিরাপত্তা
উখিয়াসহ ১৩৩টি বৌদ্ধমন্দিরের বাড়তি নিরাপত্তা
উখিয়া প্রতিনিধি :: (৬ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় দুপুর ১.২৮মি.) রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা পরবর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের এসব নির্যাতন, নিপীড়নের সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রচারের পর সর্বহারা রোহিঙ্গাদের জন্য সোচ্চার হচ্ছেন মানবতাকামী মানুষগুলো। ওপারে সেনা সরকার ও যুবকদের হাতেই রোহিঙ্গারা নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রচার পাবার পর বাংলাদেশে বসবাসকারি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মিয়ানমার পাঠিয়ে দেয়া সহ হামলার করার কথাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। আসছে নানা মন্তব্য।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র যাতে দেশে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, সে লক্ষ্যে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের উপসনালয়সহ পাড়ার নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফের ৫৩টি বৌদ্ধ বিহারে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। জেলার ৭ উপজেলার ১৩৩টি বৌদ্ধমন্দিরের নিরাপত্তায় বিহার সুরক্ষা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্য উখিয়ার প্রতিটি বিহারে পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান উখিয়া উপজেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা কমিটির সভাপতি প্রভাষক প্লাবন বড়ুয়া।
পুলিশ প্রশাসন সূত্র জানায়, সারাদেশের ন্যায় উখিয়ায়ও প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে নিরাপত্তা জোরদার ও বিহার সুরক্ষা কমিটি গঠন করার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ দপ্তর থেকে পত্র প্রেরণ করা হয়। এর আলোকে উখিয়ার ৩৮ ও টেকনাফের ১৫টিসহ পুরো জেলার ১৩৩টি বৌদ্ধ বিহারের অধিকাংশ বিহারের সুরক্ষা কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাঈন উদ্দিন বলেন, সীমান্তে সহিংতার কারণে কোন সম্প্রদায়ের মানুষের শংকিত হওয়ার কারণ নেই। সব সময় পুরো দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা, নাশকতার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে শংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
উখিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, সীমান্তে সহিংসতা পরবর্তী রাত্রিকালীন উখিয়ার সব মন্দির ও বিহারে পুলিশের বিশেষ টহল জোরদার করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, মিয়ানমার সহিংতা নিয়ে আমাদের দেশে যেন কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য জনপ্রতিনিধিরা এলাকার লোকজনদের সচেতনতায় কাজ করছে। তাছাড়া প্রতিরাতে পুলিশ প্রশাসন সহ গ্রাম পুলিশের বিশেষ টীম কাজ করছে।
উখিয়া ভিক্ষু সমিতির সাধারণ সম্পাদক, জ্যোতিঃ প্রিয় ভিক্ষু জানান, ইতোমধ্যে উখিয়ায় বিহার গুলোতে নিরাপত্তা জোরদার ও সুরক্ষা কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। পুরাতন রুমখা ত্রিরতœ বিহারেও ২১ জনের একটি সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও রাতে পাহারা দেয়ার জন্য বড়ুয়া ছেলেদের নিয়ে ১৬ জনের একটি কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তাদের পাশাপাশি প্রতি রাতে পুলিশের বাড়তি টহলও আসে বলে উল্লেখ করেন এ ভিক্ষু।
উখিয়া পাতাবাড়ি কেন্দ্রীয় আনন্দ ভবন বৌদ্ধ বিহারের পরিচালক প্রজ্ঞাবোধি থের বলেন, ২০১২ সালের অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে রাত এলেই অজানা শংকায় থাকেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এজন্য তিনি সন্ধ্যার পর বিহার থেকে পারত পক্ষে বের হন না। যতক্ষণ জেগে থাকেন চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মূখপাত্র আফরোজুল হক টুটুল বলেন, কোন দেশে কি হচ্ছে এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের লক্ষ্য এবং চাওয়া হলো আমাদের দেশের সব ধর্মের নাগরিক দেশের আইন মেনে একাত্ম হয়ে বাস করবো। ধর্মের চেয়ে একে অপরকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে একে অপরের সুবিধা-অসুবিধায় দাঁড়ানোটাই বড় কর্তৃব্য। পুলিশের নির্দেশনায় বিহার সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা শুধু নয় সব নাগরিকের দায়িত্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষা এবং সম্মান অক্ষুন্ন রাখা। সবার সহযোগিতায় দেশে শান্তির ধারা অব্যহত থাকবে এবং এটায় আমাদের সবার চাওয়া।