মঙ্গলবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাঙ্গুনিয়াতে খুরুশিয়া খালে ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায়তে ৩৫ হাজার মানুষের কষ্ট
রাঙ্গুনিয়াতে খুরুশিয়া খালে ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায়তে ৩৫ হাজার মানুষের কষ্ট
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :: (১১ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.২৭মি.) রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া খুরুশিয়া দ্বারিকোপ উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ। পূর্ব খুরুশিয়া গ্রামের প্রায় হাজেরখানেক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন দীর্ঘ কয়েকমাইল হেঁটে খুরুশিয়া খাল পার হয়ে বিদ্যালয় দুটিতে আসা-যাওয়া করতে হয়। হাটু সমান কাদা ও কোমর সমান পানিতে খাল পার হতে গিয়ে তাদের বই খাতা ও কাপড় ভিজে যায়। বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল উপেক্ষা করে খাল পার হতে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়তে হয় তাদের। খুরুশিয়া খালের উপর একটি ব্রিজের অভাবে দিনের পর দিন জীবন ঝুঁকিতে স্কুলে যাতায়াত করছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ইউনিয়নের ১০ গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার জনসাধারণের কষ্ট হচ্ছে। ২০১৩ সালে ব্রীজ নির্মাণে সরকারি পক্ষ থেকে বরাদ্ধ এলেও খুঁটি স্থাপনের পর তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিদিনকার দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে খুরুশিয়া খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের রাজারহাট থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে পূর্ব খুরুশিয়া,পশ্চিম খুরুশিয়া ও দ্বারিকূপ ওয়ার্ড। এই ৩ ওয়ার্ডে ফকিরাটিলা, ঘোচাক গ্রাম, মাইজপাড়া,গাইনি বাড়ি,গীতা পাড়া, বড়জুম, খালিপাড়, ছিপছড়ি, কমলাছড়ি সহ ১০ গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামগুলোর মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে খুরুশিয়া খাল। বৃহৎ এই জনসাধারণের জন্য রয়েছে খালের পশ্চিম পাড়ে খুরুশিয়া-দ্বারিকূপ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। খালের পূর্ব পাশের গ্রামের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন খুরুশিয়া খালে হাটু সমান কাদা ও কোমর সমান পানিতে ভিজে হেঁটে পার হয়। ভাঙা কাঁচা সড়কে দীর্ঘ পথ হেঁটে খাল পার হয়ে আবারো এক কিলোমিটার হেঁটে শিক্ষা অর্জন করার মানসিকতা ও শক্তি লোপ পেয়ে যায় শিক্ষার্থীদের। বছরের ১ মাস শুকনো থাকলেও ১১ মাস কোমর সমান পানি থাকে এই খালে। বর্ষা মৌসুমে খালের পানিতে সৃষ্টি হয় পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোত। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় এই খাল পার হয় প্রতিদিন ১০ গ্রামের জনসাধারণকে যেতে হয় তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে।খালের উপর একটি ব্রিজ বদলে দিতে পারে গ্রামের সার্বিক চিত্র।সরেজমিন করে দেখা যায়,পদুয়ার খুরুশিয়া-দ্বারিকূপ উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ মেঠো পথ হেঁটে পশ্চিম খুরুশিয়া গীতা পাড়া ও পূর্ব খুরুশিয়া ফকির টিলা এলাকার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খুরুশিয়া খাল পার হয়ে স্কুলে যাচ্ছে। পায়ে হেঁটে খাল পাড় হতে গিয়ে তাদের কাপড়,বই-খাতা ভিজে গেছে। ছেলে শিক্ষার্থীরা খালের পাড়ে কাপড় খুলে অপর পাড়ে গিয়ে আবার তা পড়ে নিতেও দেখা যায়। একদিকে ভাঙা-বিপর্যস্ত সড়ক পায়ে হেঁটে অন্য দিকে খাল পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা হাপিয়ে ওঠছে। এভাবে শুষ্ক মৌসুমেও কখনও গলা কখনও বুক সমান পানি পেরিয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে হয় বলে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানান। খুরুশিয়া দ্বারিখূপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইদ্রিছ জানান,খুরুশিয়া খালের পূর্ব পাশে বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর ওপারের প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ হয়ে যায়। এতে এলাকার শিশুরা শিক্ষায় আরো পিছিয়ে পড়ে।
২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সুমন হোসেন জানায়,খাল পার হয়ে স্কুলে যেতে খুব ভয় লাগে। সময়ে স্কুলে যেতে পারি না। অপর শিক্ষার্থী সুশ্মিতা দাশ জানায়,আমাদের সাথে স্কুলে আসতে গিয়ে অনেক সময় ছোটরা নদীতে ঠাঁই পায়না। তখন বড়রা কোলে করে তাদের পার করে। মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামে এক অভিভাবক জানান, প্রতিদিন ভিজা কাপড়ে বিদ্যালয় যাতায়াতের কারণে আমাদের সন্তানরা পানিবাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়। সাবেক ইউপি সদস্য মো. আব্দুল জলিল জানান, এই সমস্যা উত্তোরনে খালটির উপর ২০১৩ সালে একটি ব্রিজ নির্মাণে বরাদ্ধ দেওয়া হয়। ৪২টি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছিল। তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। কৃষক রুহুল আমিন (৫০) জানান,কয়েক বছর আগে ব্রীজ নির্মাণে খুঁটি স্থাপন,লোহার রড,সিমেন্টের বস্তাসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনলে খুব আশাবাদি হয়েছিলাম। কিন্তু পানির ঢলেই ভেসে গেছে এসব সামগ্রী। ব্রিজ আর হলো না।
বর্তমান ইউপি সদস্য মো. নুরুল আবছার তালুকদার জানান,আমি ইউনিয়ন পরিষদে এই ব্যাপারে নিয়মিত বলে আসতেছি। ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো.শাহজাহান জানান,আমরা এলাকাবাসীর দাবির সাথে একাত্বতা ঘোষণা করছি। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে আবেদন জানাবো। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান,ব্রিজ নির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।