বুধবার ● ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » উখিয়ায় আশ্রিত হিন্দু শরণার্থীদের মাঝে কান্নার রোল
উখিয়ায় আশ্রিত হিন্দু শরণার্থীদের মাঝে কান্নার রোল
উখিয়া প্রতিনিধি :: (১২ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সকাল ৮.২০মি.) মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি মতে, ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার রাখাইন রাজ্যে একটি হিন্দু গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এতে কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া হিন্দু রোহিঙ্গাদের মাঝে স্বজনদের মৃত্যুর খবরে কান্নাররোল পড়েছে। মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি চোখে পড়েছে। অনেকে স্বজনদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়ে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতে দেখা গেছে।
উখিয়ার হিন্দু পল্লীতে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ফকিরা বাজার এলাকার সতীন্দ্র শীলের পুত্র সুনীল শীল (বিশেষ পোষাক পরিহিত) বলেন, রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়ে স্বামী-স্ত্রী পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও মা লক্ষ্মী বালা সহ পরিবারের অপরাপর ৪ সদস্যকে মেরে ফেলার খবর নিশ্চিত হয়েছেন।
এদিকে গণকবরের সন্ধানের পরে আত্ময়ী স্বজনের আত্মার শান্তি কামনায় হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে কর্ম অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন অনেকে।
এদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর উখিয়া রোহিঙ্গা হিন্দু ক্যাম্প থেকে ১১ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে ৪ দফায় ৯জন আহত অবস্থায় ফিরে আসলেও নিখোঁজ ২ জনের মধ্যে রবীন্দ্র পাল নামে একজনের বিকৃত মরদেহের সন্ধান মেলে। এ ঘটনায় ছিকনছড়ি এলাকার নিরঞ্জন পাল (৬০) এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিখোঁজের স্ত্রী অমিকা বালা।
নিখোঁজ রবীন্দ্র পালের বিকৃত মরদেহ পাওয়া গেলে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদনে সাদা পোষাক ও মাথা ন্যাড়া করে রবীন্দ্র পালের ৩ পুত্র জগদীশ পাল, রাজেশ কুমার, দীলিপ কুমার বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের পুজোর তালা নিয়ে ব্যস্ত। এ সময় জানতে চাইলে তারা বলেন, সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়া পিতার লাশের সন্ধান পাওয়া গেলে তাঁর পারলৌকিক শান্তি কামনায় কর্ম যজ্ঞ চলছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুখোশধারীদের নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেও আমার বাবা বাঁচতে পারেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পৃথক ভাবে জড়ো হয়ে অনেকে কান্না করছেন আবার অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণকবরের ছবি দেখছে।
এদিকে আজ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পুজা শুরু হয়েছে। পুজায় অংশ গ্রহণের বিষয়ে শত ইচ্ছা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা বাইরে যেতে পারছে না। তাদের ক্যাম্পের বাইরে পুলিশের টহল লক্ষ্য করা গেছে।
মিয়ানমারের ছিকনছড়ি এলাকার নিরঞ্জন পালের স্ত্রী অমিকা বালা পুজায় যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়ে বলেন, সরকার নিরাপত্তা দিলে আমরা পুজায় অংশগ্রহণ করবো।
একই কথা জানালেন, ফকিরা বাজারের স্বামী হারা পুজা (১৮)। স্বামীকে মেরে ফেলেছে মুখোশধারীরা। তিন বৎসরের শিশু সন্তান নিয়ে বেশ কষ্টে আছে পুজা।
বাংলাদেশ পুজা উদ্যাপন পরিষদ উখিয়া শাখার সদস্য ও হিন্দু শরণার্থীদের দায়িত্বরত সেবক অজিত শর্মা বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া পরবর্তী স্থানীয় ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা পেলেও এখনো পর্যন্ত নিবন্ধনের আওতায় আসেনি হিন্দু রোহিঙ্গারা। পায়নি ত্রাণ সহায়তাও। সর্বশেষ মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১০ পরিবারের ৫৪৫জন হিন্দু শরণার্থী কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে বলেও তিনি জানান।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুরা আরও জানান, যে গ্রামে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে সেই জায়গাটিই তাদের গ্রাম। ফলে, কবর থেকে উত্তোলন করা মৃতদেহগুলো তাদের কোনও না কোনও স্বজনের। তাই স্বশরীরে মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে মৃতদেহগুলো শনাক্তের সুযোগ দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এসব হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কুতুপালং একটি মুরগির খামারে আশ্রয় নেন। আশ্রয় নেওয়া হিন্দু পরিবারগুলো বলছে, রাখাইনে মুসলিমদের পাশাপাশি তাদেরও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। মুখোশ পরিহিত কিছু লোক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িতে লুটপাট চালাচ্ছে। ৮৬ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।