বুধবার ● ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » পর্যটন শিল্প হতে পারে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বেকারত্ব বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার
পর্যটন শিল্প হতে পারে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বেকারত্ব বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: (১২ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ১১.০৩মি.) আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। পর্যটন সবার কাছে পরিচিত করে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি ও জনপ্রিয় করার জন্য পর্যটন দিবস পালিত হয়। পর্যটন খাতটি আমাদের দেশে কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও কিছু মৌলিক কারণে এ খাত বিকশিত হতে পারছেনা। আমরা জানি পর্যটন খাতের আয় দিয়ে বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশ এগিয়ে আছে।
বাংলাদেশ থেকে তেমন দুরে নয়, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে ভারত, ভূটান, নেপাল, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালেশিয়া ইত্যাদি।
বাংলাদেশ ভ্রমন করার হাজার-হাজার বৈদেশীক পর্যটকদের ইচ্ছা থাকা সত্বেও ভিসা জটিলতা, বিমান বন্দর গুলিতে যাত্রী হয়রানি এবং নিরাপত্তার কারণে বিদেশী পর্যটক দিনে দিনে হ্রস পাচ্ছে। সরকার শত চেষ্টা করেও পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারছে না।
রাঙামাটি জেলায় যদি পর্যটন খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় তাহলে যেসব দেশী পর্যটক মুখ ফিরিয়ে অন্য পর্যটন স্থানে বা জেলায় চলে যাচ্ছে তারা আবার রাঙামাটি মুখি হবেন বলে আশা করা যায়। রাঙামাটি জেলায় যে সব শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক- যুবতিরা রয়েছে তাদের কর্মসংস্থান রাতারাতি হয়ে যাবে যদি স্থানীয় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সকল প্রশাসন এবং জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ জেলায় বৈষম্যেহীন পর্যটন নীতি গ্রহন করে। রাঙামাটি জেলার শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত যুবক- যুবতিদের চাকুরী করতে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি জমাতে হবে না, লক্ষ-লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকুরী খোঁজ করার প্রয়োজন হবে না। এ জেলার মধ্যেবিত্ত ও গরিব পরিবারের সন্তানদের প্রিয়জনদের দুরে রেখে করতে হবে না বিভিন্ন মিল কারখানায় চাকুরী।
আমাদের দেশের অনেক বড় রাজনৈতিক নেতা,আমলা ও ব্যবসায়ীরা কারণে অকারণে দেশের অর্থ বিদেশে খরচ করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদের চেয়ে সিঙ্গাপুর ছোট, সে দেশটির প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে পর্যটন শিল্প। ছোটছোট দেশ যদি পর্যটন নিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে পারে তাহলে সেসব ছোট দেশের সমান আয়তনের বাংলাদেশে শত শত পর্যটন স্পট নিয়ে আমরা কেন উন্নয়ন করতে পারবোনা ?
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৭ সালের আগষ্ট পর্যন্ত রাঙামাটি জেলায় শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতি সংখ্যা ৩ লক্ষাধীক।
আজ পর্যন্ত রাঙামাটি জেলায় পর্যটন শিল্পের ওপর সরকারী যে সব প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত না করার ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি কাগজে কলমে মাঠ পর্যায়ে ফলাফল শুন্য। বেসরকারী পর্যটন শিল্প উদ্যোক্তারা হতাশ, কারণ জেলার নেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, চাঁদাবাজের উপদ্রব, প্রায় সময় লোকজনদের অপহণ করা হয়, নিরাপত্তার অভাব সর্বপুরী স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পর্যটন শিল্পের প্রতি উদাসিনতা।
পর্যটন শিল্প বিকাশে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সরকারী ভাবে ৬শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়াধীন এবং ভারত সরকারে মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেবার অরগানাইজেশন (আইএলও) রাঙামাটি জেলা পরিষদকে পরীক্ষামূলক যে প্রকল্প দিয়েছে তাও স্থানীয় দুইটি এনজিও বাস্তবায়নের কাজ করছে তাও কাগজে পত্রে। মাঠ পর্যায়ে এই প্রকল্পের ফলাফল শুন্য। পরিক্ষামূলক এই প্রকল্পে টুরিষ্ট গাইডদের প্রশিক্ষণ প্রদান, পর্যটন শিল্পের অর্থ ব্যয় করা হয়েছে লেকচার,পিকচার ও ভাউচার এর জন্য।
রাঙামাটি পর্যটন শিল্প বিকাশে দেশের নাম করা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসার কথা কিন্তু পরিবেশ এবং পরিস্থীতির কারণে এ খাতে বেসরকারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে না আসার মুল কারন।
একজন ব্যবসায়ী তার অর্থ ব্যয় করবেন মুনাফার জন্য কিন্তু পার্ক, হোটেল, মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মান করতে প্রয়োজন হবে ভূমি বা জায়গা বরাদ্ধ। পার্বত্য চুক্তির কারণে ভূমি বরাদ্ধ দেয়ার সুনির্দিষ্ট কোন প্রশাসন জেলায় আছে বলে মনে হয় না। এইটি হচ্ছে রাঙামাটি জেলায় পর্যটন খাতে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। বেসরকারী উদ্যোক্তারা পর্যটন শিল্প উন্নয়নে এগিয়ে আসলে পর্যটন শিল্প হতে পারে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বেকারত্ব বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার।
রাঙামাটি জেলা দর্শনীয় স্থান : বাংলাদেশের মধ্যে যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে তারমধ্যে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা অন্যতম।
দৃষ্টি নন্দন সবুজে ঘেরা পাহাড়ের ভাজে ভাজে কাপ্তাই হ্রদের অপরুপ দৃশ্য, এক পাহাড় থেকে উকি দিলে অন্য পাহাড় দেখা যায়, আকা-বাকা পথ বেয়ে চলা, কখনো পাহাড়ের উপড় আবার কখনো পাহাড়ে নীচে, পাহাড়ে গায়ে মেঘ, বৈচিত্রময় ও ঐতিহাসিক মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি এবং পাহাড়ে বসবাসকারী বহুভাষার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে রাঙামাটি জেলার ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি ডুবে যায় এবং কাপÍাই হ্রদের সৃষ্টি হয় যার আয়তন ২৫৬ বর্গমাইল। বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ বর্গমাইল পর্যন্ত আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, কাপ্তাই হ্রদ। এছাড়া রয়েছে, রাজবন বিহার, শুভলং ঝর্ণা, বীর স্রেষ্ট মুন্সী আব্দুর রউফ এর সমাধীস্থল,রাজা জং বসাক খানের দীঘি ও মসজিদ, রাজা হরিশ চন্দ্র রায়ের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ, পর্যটন ঝুলন্ত সেতু, বুদ্ধদের প্যাগোডা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যাদুঘর, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, পেদা টিং টিং, টুকটুক ইকো ভিলেজ, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার ১টি ইউনিয়ন সাজেক ভ্যালি, কাপ্তাই বাঁধ, সাপছড়ি ফুরোমন পাহাড়, ঠেগামুখ স্থল বন্দর, বনবিহার গুহা ইত্যাদি।
লেখক : নির্মল বড়ুয়া মিলন
প্রধান সম্পাদক
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম