সোমবার ● ২ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » মধ্যযুগীয় কায়দায় স্ত্রীকে নির্যাতন : স্বামী আটক
মধ্যযুগীয় কায়দায় স্ত্রীকে নির্যাতন : স্বামী আটক
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১৭ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.১৬মি.) গাজীপুরের কালীগঞ্জে যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে স্বামী রতন মিয়া (২৫)। স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নির্যাতিতার পিতা মো. মাসুদ বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নং ১(১০)১৭) দায়ের করেছে। ওই মামলায় আজ ২ অক্টোবর সোমবার দুপুরে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
স্বামী রতন মিয়া উপজেলার কালীগঞ্জ পৌর এলাকার উত্তর ভাদার্ত্তী গ্রামের মোজাম্মল হক মুজার মেঝো ছেলে। সে স্থানীয় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করেন। আর নির্যাতিতা গৃহবধু খাদিজা আক্তার (১৯) উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোম গ্রাম বাবুর্চী বাড়ীর মো. মাসুদ মিয়ার মেয়ে।
নির্যাতিতার পিতা মো. মাসুদ মিয়া জানান, প্রায় নয় মাস আগে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার উত্তর ভাদার্ত্তী গ্রামের মোজাম্মল হক মুজার ছেলে রতন মিয়ার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। গত ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার গভীর রাতে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্যে মেয়ের শ্বশুর মুজা ও তার বড় ছেলে মানিক তাকে ঘরের ভেতর আটকে রেখে হাত পা বেঁধে লোহার রড় দিয়ে তার মাথা, হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। পরে স্বামী রতন আমার মেয়ের গোপনাঙ্গে (যৌনাঙ্গ) লোহার রড ঢুকিয়ে দেয়।
এ ছাড়াও ঘাতক স্বামী খাদিজার ঘাড়ে বৈদ্যুতিক শক দেয়। তারা তার কোন চিকিৎসা না দিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ীতে ফেলে রাখে। শনিবার দিবাগত রাত ৯টায় খাদিজার শ্বশুর মুজা আমাকে মোবাইল ফোনে জানায় আপনার মেয়ে অসুস্থ্য আপনি এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সংবাদ পেয়ে দ্রুত মেয়ের বাড়ী এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দেখে বলেন সরকারি হাসপাতালে অনেক কিছুই নাই। জরুরী ভিত্তিতে তাকে কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলেও অর্থের অভাবে ফিরে এসে কালীগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
২ অক্টোবর সোমবার সকালে সরেজমিনেও মিলেছে ঘটনার সত্যতা। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে গিয়ে পাওয়া গেল নির্যাতিতা গৃহবধু খাদিজাকে। এ সময় খাদিজা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হাও-মাও করে কেঁদে বলেন, আমার স্বামী, শ্বশুর ও ভাসুর আমাকে মেরে ফেলতে চেয়ে ছিল। স্বামী রতন আমার ঘাড়ে অনেক বার বৈদ্যুতিক শক দেয়। হাত-পা বেঁধে আমার গোপনাঙ্গে (যৌনাঙ্গ) লোহার রড ঢুকিয়ে দেয়। এছাড়াও তার মাথা, হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, তাকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার অবস্থা শংকটাপন্ন দেখে জরুরী কিছু পরীক্ষা করার জন্য ঢামেকে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মো. ছাদেকুর রহমান আকন্দ জানান, তারা তাদের সাধ্যমত নির্যাাতিতা ওই নারীর চিকিৎসা করছেন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
কালীগঞ্জ থানার এসআই মো. গোলাম মাওলা বলেন, খাদিজা আক্তারকে রড ঢুকিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী রতনকে গ্রেফতার করে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘটনার অন্য আসামীদের খুঁজছে পুলিশ।
এসআই মো. গোলাম মাওলা অঅরো জানান, খাদিজাকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় খাদিজার পিতা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছে। সেই মামলায় স্বামী রতন মিয়াকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।