বৃহস্পতিবার ● ৫ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কোনদিকে যাবে বৌদ্ধ সমাজ ?
কোনদিকে যাবে বৌদ্ধ সমাজ ?
নয়ন বড়ুয়া, রাউজান প্রতিনিধি :: (২০ আশ্বিন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.৩৩মি.) আজ ৫ অক্টোবর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রবারণা পূর্ণিমা। এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ফানুস উত্তোলন। শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নয়, এই ফানুস উড়ানোকে কেন্দ্র করে হিন্দু, মুসলিম. খৃষ্টান সহ সব ধর্মের মানুষ এক কাতাড়ে এসে আনন্দ উপভোগ করে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতো অন্য ধর্মাবলম্বীরা ও অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য, যেমনটি অপেক্ষা করে অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী সব ধর্মের মানুষ দূর্গাপূজার জন্য।
কিছুদিন আগে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কতৃক মিয়ানমার সেনা ছাউনি হামলার শিকার হয়। তারই জের ধরে মিয়ানমার সরকার সেদেশে জাতিগত নিপীড়ন শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আসে বাংলাদেশে । রোহিঙ্গা শরণার্থীর মধ্যে বেশির ভাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী হলে ও বেশ কিছু আছে যারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী এরাও মিয়ানমার সরকারের জাতিগত নিপীড়নের স্বীকার। মিয়ানমার সরকার বরাবরই দাবী করছে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসি, এদিকে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের এই অন্যায্য দাবী বারবার প্রত্যাখান করে আসছে।
বৌদ্ধ সমাজের নেতৃবৃন্দ বলছেন বুদ্ধ ধর্ম মৈত্রীর ধর্ম। যেখানে গৌতম বুদ্ধ আজ থেকে ২৫৬১ বছর আগে সকল প্রাণীর প্রতি মৈত্রী ভাব পোষণ করে ধর্ম প্রচার করে বলেছেন জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক। শুধু মানুষের সুখের কথা বলেন নাই সমস্ত প্রাণীর সুখের কথা বলেছেন, তাই আমরা সেই গৌতম বুদ্ধের অনুসারী হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অভুক্ত অবস্থায় আছেন তাদের উদ্দেশ্যে এইবার ফানুস উত্তোলন বাদ দিয়ে সেই টাকা দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াঁনোর আহব্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমাজের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সরকারী দলের নেতৃবৃন্দ কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব হীন ভাবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উত্তোলনের জন্য আহব্বান জানান। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত সেখানে হুট করে যদি ফানুস উড়ানো বন্ধ করা হয় তাহলে বহিবিশ্বে বাংলাদেশ সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাছাড়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের হাজার বছরের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ফানুস উড়ানো, তা কোন যুক্তিতে বন্ধ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
একদিকে সরকারী দলের নেতৃবৃন্দ আর একদিকে বৌদ্ধ সমাজের নেতৃবৃন্দ, কোন কোন দিকে যাবে বৌদ্ধ সমাজ ? দু’দিকের টানা পোড়নে বৌদ্ধ জাতি আজ দ্বিধাবিভক্ত । বিভিন্ন বিহার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় কিছু কিছু বিহারে ফানুস বানানো হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আহব্বানে সাড়া দিয়ে আবার কিছু বিহারে ফানুস বানানো বনধ রেখেছে বৌদ্ধ সমাজের নেতৃবৃন্ধের আহব্বানে সাড়া দিয়ে। হাজার বছরের ইতিহাসে এইরকম সমস্যার সম্মুখীন আর হয়নি বাংলাদেশের বৌদ্ধ জাতি।
একদিকে সরকারী দলের নেতাদের ফানুস উড়ানোর আহব্বান, আর একদিকে বৌদ্ধ নেতাদের বারণ : কোনদিকে যাবে বৌদ্ধ সমাজ ?