বুধবার ● ১৮ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » অব্যবস্থাপনার কারণে ঐতিহ্য হারিয়েছে চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতাল
অব্যবস্থাপনার কারণে ঐতিহ্য হারিয়েছে চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতাল
মাইকেল দাশ, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :: (৩ কার্তিক ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় দুপুর ২.৩৪মি.) চিকিৎসা সেবার নামে হয়রানি সহ নানা রকম অনিয়ম,অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠ চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রুগীরা।শুধু চন্দ্রঘোনা নয় পার্শ্ববর্তী রাংগুনিয়া, কোদালা, শিলক, পদুয়াসহ কাপ্তাই এলাকায় এক সময় নির্ভরযোগ্য হাসপাতাল ছিল এটি। দিনের পর দিন চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম এর কারণে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণাবেড়েই চলেছে এখানে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এই এলাকার নিরীহ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা। শিলক থেকে হাসপাতালে রুগী নিয়ে আসা মো. আবুল খায়ের সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল চন্দ্রঘোনা,রাঙ্গুনিয়ার অতি পরিচিত হাসপাতাল। আগে সেবার মানও ছিল অনেক ভাল। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যেত। রোগীদের আস্থা ছিল বেশি।
বর্তমানে সেবার মান কতটুকু তা নিজে রোগী না নিলে বুঝা সহজ হতো না। গত ৭ অক্টোবর বিকালে রোগী ভর্তি করলাম জেনারেল বেডে। ভর্তির সময় ২০০০ টাকা নেন। রাত্রে পর্যন্ত কোন ডাক্তারের সাথে রোগীরা দেখা হয়নি। নার্সরা প্রাথমিক সেবা দেন। অনেক সিষ্টারেরা ব্লাড প্রেশার পর্যন্ত মাপতে জানেনা। আমার রোগীকে একটি ইনজেকশান দেওয়ার পর বমি ও টয়লেটে যেতে হলো বার বার। রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক কষ্টে রাত্রে ছিলাম। সকালে অফিসে ডাক্তারের সাথে কথা বললে তারা বলল বরিবার ডাক্তার আসবেনা,অবাক হয়ে বললাম আমার রোগীর অবস্থাতো খরাপ আমি কি করবো ? আমরা চলে যাবো অন্য হাসপাতালে ? ওরা আমাকে রিলিস দিতে রাজি না। বার বার বলার পর একটি সাদা কাগজ দিলো সাইন করতে! আমি লিখতে বাধ্য হলাম চিকিৎসার অভাবে রোগী নিয়ে যাচ্ছি। তাও মানতে রাজি না। আমাকে বলছে ওরা যা বলে তা লিখতে হবে। অনেক কথা কাটা কাটির পর আমি লিখলাম আমার ইচ্ছায় রোগী নিয়ে যাচ্ছি। তখন সকাল ১১টা,সকাল থেকে এ পর্যন্ত বিল আসলো ২৭৬০ টাকা। কি কি টেস্ট করালো তা ঐ সিষ্টারেরাও জানে না। তারা টেস্টের রিপোর্ট ও দেননি। কোন পুরুষ স্টাফও ছিলনা হাসপাতালে। কোন প্রকার চিকিৎসা নেই। শুধুমাত্র আগের সাইন বোর্ডটি আছে।।অপরদিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে শিশু প্রসব নিয়ে চলছে এইখানে রমরমা বানিজ্য।
স্থানীয় লোকজন, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) নামে একটি স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত জরিপ রিপোর্টেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিকিৎসা বিজ্ঞান বা বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় সর্বোচ্চ ১০-১৩ ভাগ শিশুর প্রসবে অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা দিলে জরুরি ক্ষেত্রে সিজারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক হাসপাতালগুলোর সঙ্গে চন্দ্রঘোনা মিশনারিজ হাসপাতালেও প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ শিশুর প্রসব ঘটানো হয় সিজারের মাধ্যমে। স্থানীয় বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব নেই বললেই চলে। হাসপাতালটিতে ৮০ ভাগ শিশুর প্রসব ঘটানো হয় সিজার অপারেশনের মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ৮ জনের শিশুর ভূমিষ্ঠ হয় সিজারে।
ভোক্তভোগিরা অভিযোগ করে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, বর্তমানে চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালের আয়ের প্রধান উৎস সিজার অপারেশনে সন্তান প্রসব। এটা ছাড়া হাসপাতালটিতে অন্য জটিল রোগির উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা মেলে না। সেখানে নেই গাইনি বিশেষজ্ঞ, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার জনগণ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে ১শ’ শয্যার ওই হাসপাতালে সব মিলিয়ে নানা অব্যবস্থপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম একেবারে বেসামাল হয়ে পড়েছে। আজ ১৮ অক্টোবর বুধবার শিক্ষক অর্পণ বড়ুয়া সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন,অামার বাবাকেও নিয়ে গিয়ে ছিলাম বেশ কিছু দিন অাগে একই চিকিৎসা রোগিরা ভূগছেন চরম ভোগান্তিতে। কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া অব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কারণে শতবর্ষ পুরোনো চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভোক্তভোগি সাধারণ মানুষ।