শনিবার ● ২১ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » রোহিঙ্গাদের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন : টেকনাফের ৭টি সংরক্ষিত বন ধ্বংস
রোহিঙ্গাদের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন : টেকনাফের ৭টি সংরক্ষিত বন ধ্বংস
উখিয়া প্রতিনিধি :: (৬ কার্তিক ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.২৫মি.) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এতে সাধারণ রোহিঙ্গার সাথে প্রবেশ করেছে আরসা সদস্য। এদিকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহযোগীতার নামে উখিয়া-টেকনাফে দেশী বিদেশী অপশক্তিগুলো মিলছে প্রতিনিয়ত। সক্রিয় রয়েছে নারী-শিশুপাচারকারী চক্র। আবার এইডস সহ নানা সংক্রামক রোগ-ব্যাধির জীবাণু বহন করছে রোহিঙ্গারা। হাজার হাজার একর বনভুমি ও পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, জ্বালানি হিসেবে সামাজিক বনায়ন ধ্বংস, যততত্র পয়ঃ নিষ্কাশনের ফলে পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে লাখো রোহিঙ্গা।
তথ্য বাতায়ন সুত্রে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখের কাছাকাছি। আন্তর্জান্তিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) মতে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা। যা স্থানীয়দের মতে ১২ লাখের উর্ধ্বে। বিপুল পরিমাণ লোকের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারছে না স্থানীয় বাজারগুলো। ফলে স্থানীয় হাট বাজার গুলোতে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন ভাবে বাড়ছে।
জেলা জুড়ে যানযট সহ বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবহন ভাড়া। ৬ লক্ষের কাছাকাছি অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। এনজিও কিংবা শ্রম বাজারেও রোহিঙ্গাদের প্রাদুর্ভাব।
দক্ষিণ কক্সবাজারের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ উখিয়া কলেজে সেনাবাহিনী ও বিজিবির অস্থায়ী ক্যাম্প এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর ত্রাণ সংক্ষণাগার করায় শ্রেণি কক্ষের স্বল্পতা ও পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে উপস্থিতির হার কমে গেছে বলে জানিয়েছে উখিয়া কলেজ অধ্যক্ষ ফজলুল করিম।
এছাড়াও যানযট সমস্যা এবং অতিরিক্ত ভাড়ার যোগান দিতে পারছে না অভিভাবকরা। নিরাপত্তা সহ নানা কারণে উদ্বীগ্ন অনেক অভিভাবক।
এক কথায় রোহিঙ্গাদের কারণে সবদিক দিয়ে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। এদিকে উখিয়া-টেকনাফের ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম। ফলে পাসপোর্ট ইস্যু, ভিসা সংক্রান্ত কাজে, চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশ যেতে বাধাগ্রস্থ রোগীরা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চাকরিতে, নতুন ভোটার তালিকা নাগাদে, নবজাতক শিশুর জন্মনিবন্ধন সহ প্রবাসে অবস্থানরতরা পড়েছে বিপাকে।
মালেয়শিয়ায় অবস্থানরত বিপন বড়ুয়া মুঠোফোনে বলেন, পূর্বে হাতের লেখা জন্ম নিবন্ধন আছে তার। নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে ডিজিটাল এবং ইংরেজী ভার্সনে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে এ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে। একই অভিমত ব্যক্ত করেন ফ্রান্স প্রবাসী সুজন বড়ুয়ার।
হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে অতি স্বত্ত্বর এ কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে বলে রেজিষ্টার জেনারেলের বরাত দিয়ে তিনি জানান। তিনি বলেন, শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম ছাড়া পরিষদের অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ শহীদ এটিএম জাফর সড়কের দুপাশে অধিকাংশ জায়গা জুড়ে ছিলো সবুজ বনানী। যা কেটে কালো পলিথিনের সারি সারি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে কলঙ্করেখা এঁকে দিয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। যতই দিন যাচ্ছে, বাড়ছে ঝুপড়ি ঘরের সংখ্যা।
কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বনভুমি দখল। রোহিঙ্গাদের দখলে যাওয়া পিএফ ও রিজার্ভ বনাঞ্চলের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার একর। বন মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির তথ্যমতে শুধুমাত্র বাগান এবং বনাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি ১৫০ কোটির উর্ধ্বে বলেও তিনি জানান।
সুত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফের ৭টি সংরক্ষিত বন ধ্বংস করেছে। এরমধ্যে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, বালুখালীর ঢালা, বাঘঘোনা ও তানজিমার ঘোনা এবং টেকনাফের পুটবনিয়া ও কেরণতলীর সংরক্ষিত পাহাড় উজাড় করেছে।
রোহিঙ্গারা অশিক্ষিত। তাদের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। এরা যেখানে খাবার খায় তারই পাশে মূত্র ত্যাগ করে। যেখানে ঘুমায় সেখানেই ময়লা ফেলে। এরা পাহাড় কেটে, মূত্র ত্যাগ করে, আর্বজনা ফেলে পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে দাবী পরিবেশবাদীদের।
প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পরিদর্শনে আসছে সরকারের মন্ত্রীসহ দেশি-বিদেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। সড়ক গুলোতে দেখা দিচ্ছে পরিবহন সংকট। প্রোটোকলের কারণে সে চাপ আরও বাড়ছে। ফলে যানজট লেগে থাকছে দীর্ঘসময়। বাড়ছে ভাড়াও। অন্যদিকে কক্সবাজার-টেকনাফে সড়কটি এমনিতেই আঁকাবাকা এবং সরু। ত্রাণ তৎপরতায় নিয়োজিত প্রচুর ট্রাক, বাস ও প্রাইভেট গাড়ির কারণে চাপ বেড়ে গেছে এ সড়কে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গা স্রোতের সাথে কিছু দুষ্কৃতিকারী আসতে পারে। তবে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে ক্যাম্প গুলোতে পুলিশ টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এবিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ডায়রিয়া সহ অন্যান্য রোগ বালাই মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। সরকারি-বেসরকারী এনজিও সংস্থা গুলো নিয়মিত চিকিৎসা সেবায় কাজ করছে। যাতে রোগ বালাই মহামারি রূপ নিতে পারে। তবে সবচেয়ে জরুরী পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবহার নিশ্চিত করা।