শনিবার ● ২১ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়কটি যেন স্থানীয়দের জন্য মরন ফাঁদ
ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়কটি যেন স্থানীয়দের জন্য মরন ফাঁদ
লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: (৬ কার্তিক ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৫৩মি.) বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং-বানিয়ারছড়া সড়ক এখন স্থানীয়দের জন্য মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। কার্পেটিং, ইট, বালু, খোয়া উঠে খানাখন্দে পরিণত, বড় বড় গর্ত হয়ে ছোট ছোট পুকুর ও খালে পরিণত হয়েছে। অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি সড়ক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল দূরের কথা, বর্তমানে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র সড়কটির দূরবস্থায় স্থানীয়রা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ প্রথমত ব্যাপক যানবাহন চলাচল, আবার ফাইতং ইউনিয়নে স্থাপিত অন্তত ১৫টি ইট ভাটা থেকে বড় বড় ট্রাক যোগে ধারণ ক্ষমতার বেশি ইট, পাথর, বালু ও গাছ পরিবহনের কারণেই খোয়া ও বিটুমিন উঠে পুরো সড়ক জুঁড়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে।
গত ছয় মাস ধরে সড়কের এ বেহাল অবস্থা বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্ভোগ লাঘবে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়কের বেশির ভাগ স্থানে প্রয়োজনীয় জায়গা এবং মাটি না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে ফাইতং ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষকে। সড়ক সংস্কার না হলে, এমন দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করেন তারা। কখনো বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের মাটি গড়িয়ে সড়কের ওপর পড়ার কারণেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। সড়কের ওপর দিয়ে ধারণ ক্ষমতার বেশি যানবাহন চলাচল বন্ধসহ দ্রত সংস্কারের দাবী জানান স্থানীয়রা।
আজিজনগর এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন সিএইচটি মিডিয়া টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিকে বলেন, প্রতিবছর সংস্কার কাজ করে কোনো লাভ নেই। সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজন নকশার পরিবর্তন ও ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
এলাকাবাসী জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বানিয়ারছড়া থেকে উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়কটি প্রায় ২০ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মাণ করে। এটি দুর্গম এলাকার পাহাড়ীদের যাতায়াতের একমাত্র ও অত্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। ফাইতং ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের আজিজনগর ও গজালিয়া ইউনিয়নের জনগণ এবং মালামাল পরিবহনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। এই আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় হাজারো ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে।
দেখা যায়,সড়কটির বেশির ভাগ অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। পুরো সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের কিছু অংশ ধসে রাস্তার পাশে নিচে পড়ে গেছে। এ অবস্থায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রাক, জীপ, সিএনজি, মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। সড়কের ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়, ফাইতং প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফাইতং বাজারস্থ অস্থায়ী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এতে এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে যানবাহন খানাখন্দে আটকে পড়ে।
স্থানীয় সিএনজি চালক সাইফুল ইসলাম আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, আরকান সড়ক থেকে ফাইতং যেতে যেখানে বড়জোর ১৪-১৫ মিনিট সময় লাগার কথা, সেখানে সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে সময় লাগছে প্রায় এক ঘন্টা।
রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহনের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন এ সড়কে ছোট খাট দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে, যে কোন সময় এই সড়কে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
ফাইতং মৌজা হেডম্যান উম্রামং মারমা বলেন, সড়কটির এমন করুণ অবস্থা বিরাজ করছে যে, একদিন বৃষ্টি হলে এই সড়কের ভাঙাচেরা অংশে সপ্তাহ খানেক পানি জমে থাকে। এতে যান বাহন চলাচল দুরের কথা, পায়ে হাঁটাও কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে।
এই ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের লামা উপজেলার সার্ভেয়ার মো. জাকির হোসেন মোল্লা জানান, ভারি যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সড়কটির এই করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তাছাড়া ফাইতং এলাকায় স্থাপিত ইটভাটাগুলো থেকে মাত্রাতিরিক্ত ইটসহ বালু, পাথর ও গাছ পরিবহনের কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন করা হলে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।