বুধবার ● ২৫ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » রাঙামাটি শহরে যত্রতত্র অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ
রাঙামাটি শহরে যত্রতত্র অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (১০ কার্তিক ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.০০মি.) রাঙামাটি শহরে যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং ও বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা।
তিনি আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্ট সকলকে রাঙামাটি শহরের সৌন্দর্য্য বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। চেয়ারম্যান দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন সেসব জেলাগুলোতে যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং এবং জাতীয় সড়কগুলোর ওপর বাজার স্থাপন করে রাস্তায় যানজট তিনি লক্ষ্য করেননি। তাদের ন্যায় আমাদের এই জেলাকেও যানজটমুক্ত রাখতে হবে। এতে শহরে যাতায়াত ও চলাচলে শৃংখলা যেমন ফিরে আসবে তেমনি মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। তিনি আইনের প্রতি সকলকে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে এ বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
আজ ২৫ অক্টোবর বুধবার সকালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরুনেন্দু ত্রিপুরার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পুলিশ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম,কে,এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কাউখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম চৌধুরী, বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুভ মঙ্গল চাকমা’সহ জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান ও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চেয়ারম্যান আরও বলেন, জনগণ ও দেশের গণমানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের স্বার্থে সরকার আমাদের নিয়োগ দিয়েছেন। তাই জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও তৃণমূল পর্যায়ের সকলকে নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ জেলা তথা দেশের উন্নয়নে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। কোন রোহিঙ্গা যাতে এ জেলায় প্রবেশ করতে না পারে সেবিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, জনগণকে পুলিশের সহায়তা ও বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পর্কে অবগত করার লক্ষ্যে আগামী ২৮অক্টোবর বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও থানা পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রাঙামাটিতেও র্যালী এবং আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এসকল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তিনি সবাইকে অনুরোধ জানান।
সভায় গণপূর্ত বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ফায়ার স্টেশনের ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া রাজস্থলী ও লংগদু উপজেলায় জায়গা নির্ধারণ হলে স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, খাগড়াছড়ি জেলার পাওয়ার গ্রীড উপ-কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলার শুকরছড়ি পাওয়ার গ্রীড উপ-কেন্দ্রটি চালুর ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নির্মাণ শেষে এই উপকেন্দ্রগুলো চালু হলে জেলার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী বলেন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের রাউজান রাবার বাগান হতে রানীর হাট এলাকা পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া গত ১৩জুন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১১৩টি স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স এর কর্মকর্তা বলেন, কাউখালী ফায়ার স্টেশন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, ল্যান্ড ফায়ার স্টেশনের জন্য ঝগড়াবিল এলাকায় জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাঘাইছড়ি সাজেকে একটি ফায়ার স্টেশন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন এর ব্যবস্থাপক বলেন, এ বছর লেকের পানি বৃদ্ধি ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে হ্রদে জেলেদের জাল ফেলতে সমস্যা হচ্ছে। তাই সাময়িকভাবে মাছ আহরণ কম হলেও জাক অপসারণের ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর সার্বিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্থানীয় বাজারে মাছের দাম কমেছে। তিনি আরও বলেন, এ প্রথম কাপ্তাই লেকে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হয়েছে চট্টগ্রামের হালদা নদীর মত। আশা করা যায় এর ফলে কাপ্তাই লেকে মাছের উৎপাদন আরও বেড়ে যাবে।
মাৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট এর উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন ক্রিকে মাছের বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। এ রোগ নিরাময়ে গবেষণা ইন্সটিটিউট হতে খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পুকুর বা ক্রিকের পানির রাসায়নিক গুণাগুণ পরীক্ষা করে রোগ বালাই দমনের জন্য খামারিদের গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটির কর্মকর্তা জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন সচেতনতা বিষয়ক অনুষ্ঠান দৈনন্দিন সম্প্রচার চলছে।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে জেলার খাদ্য ভান্ডারে ২৭৫০মেঃ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে এবং জেলা ও উপজেলায় ওএমএস এর চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
আঞ্চলিক পরিসংখ্যান কর্মকর্তা বলেন, নভেম্বর মাস থেকে সারাদেশের ন্যায় রাঙামাটিতেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাউসহোল্ড সেন্সাস শুরু হবে। এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে একটি ব্যাপক তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা। তিনি এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিভাগের প্রতিনিধি এক প্রশ্নের জবাবে সভাকে অবহিত করেন, দেশের ৬লক্ষ জনশক্তি বিদেশ গমনের বিপরীতে এ জেলা থেকে ৫০০ এর কাছাকাছি বিভিন্ন পেশার শ্রমিক বিদেশে কর্মসংস্থান উপলক্ষে গমন করেছে।
এছাড়া সভায় উপস্থিত অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ স্ব স্ব বিভাগের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন।