বৃহস্পতিবার ● ২৬ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » মনোজ শংকর সিআইডি’র হাতে আটক
মনোজ শংকর সিআইডি’র হাতে আটক
সিএইচটি মিডিয়া ডিজিটাল ডেস্ক :: (১১ কার্তিক ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় ভোর ৬.৩৯মি.) মোর্চার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তথা প্রধান চালিকাশক্তি এবং অন্যতম সংগঠক মনোজ শংকরকে গ্রেপ্তার করল সিআইডি। গতকাল বুধবার তাঁকে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার ধরা হয়। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে স্বতন্ত্র রাজ্য গড়তে চেয়েছিল মোর্চা। তার মূল কারিগর মনোজই। দিল্লিতে বসেই মোর্চার যাবতীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতেন তিনি। মনোজের মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবনাকেই বাস্তবে আন্দোলনের ময়দানে রূপ দিতেন বিমল গুরুং। উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় সংগঠন বাড়াতেও ব্যবহার করা হয়েছিল মনোজের মস্তিষ্ককে। এমনটাই জেনেছে সিআইডি। সংগঠনে টাকার জোগান দিতেও বড় ভরসা ছিলেন তিনি। সিআইডি সূত্রের খবর, মোর্চা নেতা রোশন গিরি পালিয়ে প্রথমে তাঁর বাড়িতেই উঠেছিলেন। এমনকী, বৃহত্তর গোর্খাল্যান্ড গড়ার ক্ষেত্রে কেএলও’র সঙ্গে মোর্চার গাঁটছড়ার বাঁধার বিষয়টি তাঁরই পরামর্শে হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
দিল্লিতে মোর্চার তিন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পারেন, দিল্লির রাজনীতিতে মোর্চার দাবিকে তুলে ধরতে মনোজ শংকরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে দিল্লির বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, এমনকী তাঁদের বাড়িতেও যাতায়াত রয়েছে তাঁর। রিয়েল এস্টেটের ব্যাবসার সূত্র ধরেই তাঁর এই রাজনৈতিক যোগাযোগ। তাকে কাজে লাগিয়ে মোর্চার বিভিন্ন দাবি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মধ্যস্থতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আন্দোলন চলাকালীন বিজেপি’র এক সংসদ সদস্যের সঙ্গে মোর্চার হরিয়ানা ও দিল্লি ইউনিটের এই সভাপতির একাধিকবার ফোনে কথা হয়েছে বলে জেনেছেন আধিকারিকরা। সেই কারণেই মোর্চা নেতৃত্ব বারবার কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চাইছিল। রাজধানীতে মোর্চার হয়ে বিভিন্ন স্তরে লবিও করেন তিনি। এমনকী প্রবাসী গোর্খাদের একজোট করে তাঁদেরও আন্দোলনমুখী করার পরিকল্পনা তাঁরই।
এরপরই তাঁর উপর নজরদারি শুরু করেন সিআইডি আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন মোর্চার বিভিন্ন নেতা। মঙ্গলবার মনোজ এক পরিচিতের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় দিল্লির সফদরজং রোড এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন সিআইডি’র আধিকারিকরা। তাঁকে বিমানে করে রাতেই কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। বুধবার রাতের ট্রেনেই তাঁকে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তদন্তকারী অফিসারদের কথায়, বিমল গুরুং মোর্চা প্রধান হলেও সাংগঠনিক দিকটি মনোজই দেখাশোনা করতেন। তিনিই বিমলকে বোঝান, শুধু দার্জিলিং নিয়ে গোর্খাল্যান্ড নয়, এর সঙ্গে জুড়তে হবে দুই দিনাজপুর, মালদহ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের একাংশকে। যাতে স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবি জোরদার হয়। এই জেলাগুলিতে তাঁর নিজস্ব কিছু যোগাযোগ রয়েছে। তাকে কাজে লাগিয়েই তিনি মোর্চার সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালান। পাশাপাশি আন্দোলনের জন্য পরিচিত চা বাগান মালিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা জোগাড় করতেন তিনি। এই কাজে তাঁকে যাঁরা সাহায্য করছিলেন, তাঁদের কয়েকজনের নামও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। পাহাড়ে আন্দোলন শুরুর পর মাত্র একবারই সেখানে এসেছিলেন মনোজ। দিল্লিতে বসেই তিনি আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নিয়মিত কথা বলতেন গুরুংয়ের সঙ্গে। লেপচা বস্তি এলাকায় গুরুংয়ের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াইয়ের পরও তাঁর সঙ্গে মোর্চা প্রধানের কথা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। নভেম্বরে ডুয়ার্সে এসে কেএলও’র সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল তাঁর। মূলত বৃহত্তর গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচা নিয়েও কথাবার্তা হওয়ার কথা ছিল। ওই বৈঠকের পরই দার্জিলিং ও সিকিম সীমান্তে গুরুংয়ের গোপন ডেরায় তাঁর যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে বসেই মোর্চার পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করার মতলব ছিল তাঁর। সূত্র : বর্তমান