মঙ্গলবার ● ২৪ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » রাঙামাটি » রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১টি মাত্র বাস ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাতায়তে চরম অসুবিধা হচ্ছে (ভিডিওসহ)
রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১টি মাত্র বাস ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাতায়তে চরম অসুবিধা হচ্ছে (ভিডিওসহ)
ষ্টাফ রিপোর্টার :: পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের আধুনিক শিক্ষাদান করার লক্ষে ১৮৬২ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয প্রতিষ্ঠিত হয় চদ্রঘোনায় বোর্ডিং স্কুল নামে ৷ এ স্কুলটি দুইটি ক্লাশে বাংলা, ইংরেজী, চাকমা ও বার্মিজ পড়ানো হতো ৷ ১৮৬৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অস্থায়ী জেলা সদর চন্দ্রঘোনা হতে সরিয়ে এনে রাঙামাটিতে স্থানান্তর করা হলে সে সময়ে বিদ্যালয়টিও রাঙামাটি সরকারি বোর্ডিং স্কুল নামকরণ করে রাঙামাটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷ ১৮৭৩ সালে স্কুলটি মিডল ইংলিশ ( এম-ই) স্কুলে পরিনত হয় ৷ তৎকালিন প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে পালন করেন আবদুল হামিদ ভূঁইয়া ৷ সে সময় মিডল স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো ৷ ১৮৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্কুলটি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে (বর্তমান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে) উন্নীত হয় ৷ ১৮৯৩ সালে এ” স্কুল হতে ১ম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ২২ জন পরীক্ষার্থীরা কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীন এন্ট্রান্স (বর্তমানে এস.এস.সি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ৷ রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম উচ্চ বিদ্যালয়৷ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অদ্যাবধি বিদ্যালয়টি স্বকীয় সাফল্য বজায় রেখে নাম জানা অজানা অনেক শিক্ষার্থীরা অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে বৃহত্তর পরিসরে দেশ ও সমাজে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং করছেন ৷
বর্তমানে বিদ্যালয়টি দুই শিফ্টের ৷ প্রভাতি ও দিবা শাখা ৷ শিক্ষক-কর্মচারি সংখ্যা প্রভাতি শিফ্টে একজন সহকারি প্রধান শিক্ষক ও ২৫ জন সহকারি শিক্ষক ৷ দিবা শিফ্টে একজন সহকারি প্রধান শিক্ষক ও ২৫ জন সহকারি শিক্ষ ক৷ উভয় শিফ্ট ও বিদ্যালয়ের সকল কার্যাবলী ০১ জন প্রধান শিক্ষক পরিচালনা করেন৷ বর্তমানে প্রাতঃ শিফ্টে ১৭ জন ও দিবা শিফ্টে ১৯ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন ৷ তাছাড়া উচ্চমান সহকারী ০২ জন, অফিস সহকারী ০২ জন (একজন প্রেষণে অন্যত্র কর্মরত) ও এম.এল.এস.এস ০৫ জন৷ বেসরকারি খাতে ০৩ জন এম.এল.এস.এস কর্মরত আছেন ৷
বিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষা চালু রয়েছে ৷ প্রভাতি শাখায় ৮ টি ও দিবা শাখায় ১০ টি সেকশন আছে ৷ প্রভাতি শিফ্টের সেকশন সমূহ হলো : তৃতীয় , চতুর্থ , পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম৷ দিবা শিফ্টের সেকশন সমূহ হলো: ষষ্ঠ- ক, ষষ্ঠ- খ, সপ্তম- ক, সপ্তম- খ, অষ্টম- ক, অষ্টম- খ, নবম- ক, নবম- খ, দশম- ক ও দশম- খ৷ মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১৮২ জন ৷ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপূস্তক বোড কর্তৃক নির্ধারিত কাঠামো অনুযায়ী দৈনিক শ্রেণি ব্যপ্তি ও সংখ্যা নির্ধারন করা আছে ৷ তাছাড়া বিদ্যালয়ের ফলাফল উন্নয়ন করতে অতিরিক্ত ক্লাশেরও ব্যবস্থা করা আছে ৷ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ আছে ৷
ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটাতে শরীর চর্চার গুরুত্ব রয়েছে ৷ দৈনন্দিন কার্যক্রমের পূর্বে শিক্ষার্থীদের সাথে সকল শিক্ষক- শিক্ষিাকাদের বিদ্যলয় ও শিক্ষা সম্বন্ধীয় বিভিন্ন বিষয়ের উপর সংক্ষিপ্ত জ্ঞানমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয় প্রাত্যহিক সমাবেশে ৷ উভয় শিফটে দিনের কর্মসূচীর প্রস্তুতি লগ্নে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি অনুযায়ী সারিবদ্ধভাবে বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থান নেয় ৷ প্রধান শিক্ষক সহ সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার উপস্থিতিতে শরীর চর্চা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, শপথ বাক্য পাঠ, জাতীয় সংগীত পরিবেশনা ও শরীর চর্চার মধ্য দিয়ে দৈনিক বিদ্যালয় কর্মসূচীর সূচনা হয় ৷ সমাবেশে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গুরত্বপূর্ণ বিষয়ের ঘোষনা , সম-সাময়িক বিষয় ও শিক্ষার বিভিন্ন দিকের উপর উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন ৷
বদলী ও অবসরজনিত কারণে প্রতিবছরই বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেক পদ শুন্য থাকে ৷ এতে সুষ্ঠ পাঠদান ও শ্রেনি কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটে ৷ বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং শুন্য পদ পুরণের আশ্বাস পাওয়া গেছে ৷
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোগুলোর আধুনিকায়নের উদ্যোগ নে’য়া জরুরী৷ ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয় জাতিকে উপহার দিয়েছে অনেক সুযোগ্য সন্তান৷ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সকলের সুদৃষ্টি এর বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে বেগবান করবে আশা প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম খীসা ৷
বিদ্যালয়ের প্রয়োজনের তুলনায় আসবাবপত্রের ঘাটতি রয়েছে৷ এতে ক্লাস ও বিভিন্ন পরীক্ষা পরিচালনায় অসুবিধায় পড়তে হয়৷ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় উদ্যোগই পারে এ ঘাটতি পূরণ করতে৷
অবস্থানগত কারণে বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীদেরকে বাসের উপর নির্ভর করতে হয়৷ যদিও বিদ্যালয়ে একটি বাস রয়েছে৷ কিন্তু সেটি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম৷ তাই রিজার্ভবাজার - পুলিশ লাইন - তবলছড়ি সড়কটিতে যদি সিএনটি ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করা যায় তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়তে অসুবিধা দুর হত৷
বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে ক্রমাম্বয়ে সমাধানের ব্যাপারে বিদ্যালয় প্রশাসন সজাগ ও তত্পর আছে৷ আশাকরি এ সকল প্রতিবন্ধকতাগুলোকে আমাদের মেধা, দক্ষতা, সহযোগীতা ও উদ্যোগী মনোভাব নিয়ে সমাধান করবো৷ প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের দুর্বল করে না
২১ ডিসেম্বর, ২০১২ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৪তম প্রধান শিক্ষক হিসাবে উত্তম খীসা যোগদান ৷ উত্তম খীসা তার শিক্ষা জীবণ শুরু করেন প্রাইমারী শিক্ষা কাপাশগোলা প্রাইমারী বিদ্যালয়, চকবাজার, চট্টগ্রাম৷ প্রর্বত্তক বিদ্যা পীঠ, চট্টগ্রাম হতে ১৯৮৯ সালে এস.এস.সি৷ হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম হতে ১৯৯১ সালে এইচ.এস.সি৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৯৪ সালে বি.বি.এ(সম্মান) ও ১৯৯৫ সালে এম.বি.এ(হিসাববিজ্ঞান)(১৯৯৭ সালে অনষ্ঠিত) ডিগ্রী অর্জন করেন ৷ ১৯৯৮ সালে প্রাইভেট চাকুরীর মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন৷ সানম্যান গ্রুপ, ইয়ংওয়ান ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রাম চাকুরী৷ ২০০২ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন৷২০১০ সালে বি.সি.এস(সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষক পদে রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন৷ তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারাতে ১৯৭৩ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর মাতার নাম সন্ধ্যা রাণী খীসা ও পিতার নাম হরিপদ খীসা।
আপলোড : ২৪ নভেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : সকাল ১০. ৩০ মিঃ