শনিবার ● ২৮ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » নতুন রাষ্ট্র কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা
নতুন রাষ্ট্র কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা
সিএইচটি মিডিয়া অনলাইন ডেস্ক :: (১৩ কার্তিক ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৩৮মি.) স্পেন থেকে আলাদা হয়ে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা চেয়ে উত্থাপিত প্রস্তাব স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির পার্লামেন্টে পাস হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সরাসরি শাসনের’ হুঁশিয়ারির জবাবে শুক্রবার ২৭ অক্টোবর ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’র প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে উত্থাপিত হলে বিপুল ভোটে পাস হয়ে যায়।
অবশ্য এদিনই মাদ্রিদ সরকার কেন্দ্রীয় সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটে কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন স্থগিত করতে একটি আইন পাস করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয় সময় দুপুরে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলে ৭২-১০ ভোটে পাস হয়ে যায়। তবে এই ভোট বর্জন করেন মাদ্রিদের অনুগত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। মূলত স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে মাদ্রিদের সরাসরি শাসনের অধীনে নিয়ে আসার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় কাতালান পার্লামেন্টে।
বার্সেলোনাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রধানমন্ত্রী রাজয়ের সিনেটে বক্তৃতার পরই পার্লামেন্টে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্বাধীনতাকামী ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব। ‘মাদ্রিদ আলোচনার টেবিলে এগিয়ে না আসায়’ উত্থাপিত এই প্রস্তাবের শুরুতে বলা হয়- ‘আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী স্বাধীন কাতালোনিয়ার ঘোষণা দিচ্ছি’। এই প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর বেশিরভাগ সদস্যই একযোগে ‘হ্যাঁ’ বলেন। প্রস্তাবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক ও সমাজবাদী রাষ্ট্র কাতালোনিয়ার জন্য সংবিধান প্রণয়নের আহ্বান’ও রাখা হয়।
গত ১ অক্টোবর গণভোটের পর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং গণভোট ইস্যুতে পরস্পরের স্বাধীনতা ঘোষণা ও স্বায়ত্তশাসন বাতিলের হুমকির ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সিনেটে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি আবেগপূর্ণ ভাষণে সিনেটরদের উদ্দেশে বলেন, যখন কোনো পথই খোলা থাকে না, তখন সংবিধান সুরক্ষায় কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসনই বাতিল করতে হবে। এই পথ সুগম করতে কাতালান প্রেসিডেন্টসহ (কার্লেস পুজদেমন্ত) ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেতাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে। সুতরাং সিনেটকে সেরকম পদক্ষেপই অনুমোদন দিতে হবে। কাতালান স্বায়ত্তশাসন বাতিলে সংবিধানের ১৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নই একমাত্র উপায়।
এখন কাতালোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলায় শোনা যাচ্ছে, সিনেটে অধিবেশনে বসেছেন মাদ্রিদের রাজনীতিকেরা। সেখান থেকে কী ঘোষণা আসে, সেদিকে নজর রাখছে সংবাদমাধ্যম। অবশ্য স্বাধীনতা ঘোষণার পরই প্রধানমন্ত্রী রাজয় ফের জাতিকে শান্ত থাকতে বলেছেন। একইসঙ্গে বলেছেন, ‘কাতালোনিয়া আইনের শাসন বজায় থাকবে এবং সংবিধান পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে’। যদিও স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে কাতালান নেতাদের স্বাগত জানাতে রাস্তায় নেমেছে লাখো মানুষ। বার্সেলোনার রাস্তা এখন স্বাধীনতাকামীদের পদভারে মুখরিত।স্পেন থেকে স্বাধীনতাকামী কাতালোনিয়ার ম্যাপস্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।
নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাকামী দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।
তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত গণভোটের পর দফায় দফায় বাকযুদ্ধ হয় রাজয় ও পুজদেমন্তের মধ্যে। পুজদেমন্ত এক পর্যায়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেও তা আলোচনার স্বার্থে স্থগিত করলেও রাজয় স্পেনের ঐক্য ও সংবিধান সুমন্নত রাখার স্বার্থে কাতালোনিয়াকে একীভূত রাখতে স্বায়ত্তশাসন বাতিলের কথাই বলেন। দু’পক্ষের অনড় অবস্থান শেষ পর্যন্ত শুক্রবারের এই উত্তেজনায় গড়িয়েছে।