বুধবার ● ৮ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » খেলা » নানা অনিয়ম ও অব্যাবস্থাপনার পরও সফলভাবে সম্পন্ন বিপিএল সিলেট পর্ব
নানা অনিয়ম ও অব্যাবস্থাপনার পরও সফলভাবে সম্পন্ন বিপিএল সিলেট পর্ব
হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: (২৪ কার্তিক ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ২.৫৪মি.) গ্যাল্যারী ভর্তি দর্শক, টান টান উত্তেজনা, সিলেট সিক্সার্সের টানা তিনটি দাপুটে জয়। দেশি বিদেশী ক্রিকেটারদের চার ছক্কার ফুলঝুড়ি সেই সাথে চারিদিকে সবুজের সমারোহ করেছে দর্শকদের আকৃষ্ট। সবমিলিয়ে বলাযায় সিলেটে প্রথমবারের মতো অনুষ্টিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)’র পঞ্চম আসরের প্রথম পর্ব সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
তবুও কিছু ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুরদিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে নানা অনিয়ম ও অবস্থাপনার কথা। যেমন শেষ দিনে দর্শকদের দেয়াল টপকে কিংবা মাঠি খুড়ে মাঠে প্রবেশের চেষ্টার সময় পুলিশের হাতে ৪০জন আটকের ঘটনা। এছাড়াও অনিয়ম ও অব্যাবস্থাপনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই ছিল।
উল্লেখ্য, সিলেটে ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আজ ৮ নভেম্বর শেষ হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)’র পঞ্চম আসর। এই প্রথমবারের মতো সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিপিএলের ৮টি ম্যাচ। যার জন্য সিলেটের ক্রিকেট প্রেমীদের উৎসাহের অন্তঃ ছিলনা। ঘরের মাঠে প্রিয় ক্রিকেটারদের খেলা দেখতে কার না ইচ্ছা জাগে। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীদের উৎসাহের ভাটা পড়ে ছিল টিকেট বিলম্বনায়।
৩১অক্টোবর থেকে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে নামমাত্র টিকেট বিক্রি শুরু হলেও টিকেটের সিংহভাগ অংশই ছিলো কালোবাজারিদের হাতে। এমনই অভিযোগ ছিল টিকেট প্রত্যাশীদের। রাত ১২টা থেকে লাইনে এসে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেরই পরেরদিন কপালে জুটেনি টিকেট নামক সোনার হরিণের।
সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বিপিএল টিকেট বিক্রি নিয়ে ১ নভেম্বর মিডিয়ার তোপের মুখে পড়ে কালোবাজারিরা। যার জেরে ২ নভেম্বর বিনা নোটিশে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি সাংবাদিকেদের।
যেখানে সাধারন ক্রীড়া প্রেমীরা টিকেট পাচ্ছেনা সেখানে নির্ধারিত চারটি বুথ ছাড়াও জেলা ক্রীড়া ভবনের বাম দিকের জানালায় বিশেষ ব্যবস্থায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে নিজ হাতেই টিকিট বিক্রি করতে দেখা যায় বিজিত চৌধুরী। সেখানে দাড়ানো টিকিট প্রত্যাশীরা জানান তারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের কর্মী।
টিকেটের জন্য লাইনে দাড়ানো অনেকেই এসব অবস্থাপনায় আঙ্গুল তুলছেন বিসিবি পরিচালক ও আওয়ামীলীগ নেতা শফিউল আলম নাদেলের দিকে। তারা বলছেন, যারা এই টিকেট পকেটে রেখে ২০০টাকার টিকেট ১০০০/১৫০০ টাকা বিক্রি করেছেন তারা সবাই নাদেলের কাছের মানুষ। তিনি সরাসরি এসবে জড়িত বলেও অভিযোগ করছেন অনেকে।
এদিকে বিপিএল টিকেট অনিয়ম আর নানা অব্যবস্থাপনার খোদ বিরক্ত সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতারা। সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী বিপিএল বর্জনের ঘোষণা দেন। শফিকুর রহমান চৌধুরীর ঘোষণায় সমর্থন দেয় জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। জেলা ও মহানগর আ:লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিপিএল বর্জনের এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিপিএল হচ্ছে সিলেটে আর খেলছে সিলেট সিক্সার্স। সেখানে সিলেটের টিমে নেই সিলেটি ক্রিকেটাররা। টিক তেমনি ভাবে সৌজন্য টিকেটও পাননি সিলেটের জাতীয় লিগ কিংবা সিলেটের প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটাররা। অবজ্ঞার শিকার সিলেটের রাজিন সালেহ চাপা কষ্ট নিয়ে বলেন ‘১৭ বছর ধরে সিলেটের হয়ে জাতীয় লীগে (এনসিএল) খেলছি। আগামী বছরই ১৮ বছর শেষ করে বিদায় নিব, সিলেটের হয়ে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্বও করেছি, ভালো খেলেছি বা খারাপ- সেটি পরে বিবেচনায় আসবে। হয়তো অনেক বড় ক্রিকেটারও ছিলাম না। এখনও জাতীয় দলের খেলা হলে আমরা টিকিট পাই, টিকিট পৌঁছে যায়, আশা করি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাবো। কিন্তু সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। ভবিষ্যতে হবে কি না তা-ও জানিনা। বিপিএল আমাদের শহরে হচ্ছে, কিন্তু আমাদের দল সিলেট সিক্সার্সতো পরের বিষয়, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা একটি ফোন করেও বলেনি তোমাদের জন্য টিকিট রেখেছি। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে আমাদের জন্য?’
শুধু রাজিন সালেহই নয়, জাতীয় দলে খেলা সিলেটের সাবেক কোনো ক্রিকেটারই বিপিএলের ৫ম আসরের টিকিট পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। সিলেটের সন্তান জাতীয় দল থেকে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র তো রাগে-ক্ষোভে কথা বলতেই চাইলেন না। শুধু বললেন, ‘বিষয়টা এতই বিব্রতকর- আমি এ নিয়ে কথা বলতেই চাই না।’ এ প্রতিভাবান ক্রিকেটার অবশ্য এবার কোনো দলেও খেলার সুযোগ পাননি।
সিলেট বিভাগকে একটা সময় রাজিন সালেহ ছাড়াও জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন অলক কাপালী, তাপস বৈষ্য, পেসার নাজমুল হোসেন। বৈষ্য বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন, আর অলক সিলেট দলে জায়গা না পেলেও খেলছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে।
শুধু জাতীয় দলেরই নয়, এখনকার লীগ খেলা কোনো ক্রিকেটারও টিকিট পাননি বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট জেলা ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি (কোয়াব) রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘রাজিন সালেহ শুধু জাতীয় দলেরই ক্রিকেটার নয়, সে সিলেট কোয়াবের সাধারণ সম্পাদকও। আমরা এ বিষয়ে সাবেক অধিনায়ক ও কোয়াবের সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে অভিযোগ করেছি। তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আমাদের স্বল্পসংখ্যক টিকিটও দিয়েছেন।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘তবে এটি খুবই লজ্জার বিষয় আমাদের লোকাল ক্রিকেটাররা বিপিএল থেকে কোনো সম্মান পাননি। যদি সিলেটের বাইরে হতো, তাহলে আমাদের এ আফসোস থাকতো না। কিন্তু নিজ শহরে এমন একটি আয়োজনে ক্রিকেটারদের সম্পৃক্ততা না থাকাটা খুবই কষ্টের।’
অন্যদিকে সিলেটের ক্রিকেটারদের টিকিট না পাওয়া নিয়ে আফসোস ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ও খালেদ মাসুদ পাইলট।
অবস্থাপনার শেষ এখানেই নয়, আরো আছে, বিপিএল’র উদ্ভোধনী অনুষ্টানের দাওয়াত দেওয়া হয়নি সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। দেওয়া হয়নি সৌজন্য টিকেটও। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরীতে এতো বড় ক্রীড়াযজ্ঞের আয়োজন অতচ আমাকে দাওয়াত করা হয় নি। এ অবমূল্যায়ন শুধু আমার নয় গোটা সিলেট মহানগরবাসীর অবমূল্যায়ন।
পরে অবশ্য এ বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় লেখালেখি শুরু হলে সিসিক মেয়রকে বিপিএল’র সৌজন্য টিকেট প্রধান করা হলেও আরিফুল হক চৌধুরী তা প্রত্যাখান করেন।
একিই ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিল ও প্যানেল মেয়র(১) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনি আক্ষেপের সুরে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার ওয়ার্ডের পাশেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিপিএলের পঞ্চম আসরের সিলেট পর্ব। কিন্তু আয়োজকরা আমাকে দাওয়াতটা দেয়নি।
বিপিএলের টিকিট কালোবাজারে বিক্রির প্রতিবাদে ‘কালোবাজারি নিপাত যাক সাধারণ দর্শক টিকেট পাক’ স্লোগানে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেল ২ টায় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সামনে মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিলেটে প্রথমবারের মত বিপিএল অনুষ্টিত হচ্ছে। অথচ সিলেটের ক্রীড়ামোদী দর্শকরা অখুশি। কারন দর্শকরা টিকিট পাচ্ছে না। সাধারণ দর্শকরা যেখানে মাঠে খেলা দেখার কথা, সেখানে দর্শকরা রাস্তায় টিকিটের জন্য আন্দোলন করছেন। এটা অত্যান্ত দু:খজনক। কালোবাজারিদের দৈরত্বে কথা উল্ল্যেখ করে বক্তারা বলেন, সাধারণ মানুষ টিকিটের জন্য রাত থেকে লাইনে দাড়িয়েছে ছিলো, অথচ সকালে টিকিটের বদলে তাদের পুলিশের লাটিচার্জ খেতে হলো।
আর কালোবাজারিরা নির্বিঘ্নে টিকিট বিক্রি করছে। এসময় বক্তারা টিকিট কালোবাজারিদের দৃষ্টান্তমমূলক শাস্তি জন্য প্রসাশন ও বিসিবি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
এছাড়াও বিপিএল’র সৌজন্য টিকেট পাননি সিলেটের অনেক জনপ্রতিনিধি ও অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সেখানে রোববার (৫ নভেম্বর) বেলা সোয়া ৩টার দিকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ৩নং গেইটে ‘সৌজন্য টিকেট উচ্চমূল্যে কালোবাজারে বিক্রির সময় আজিজুর রহমান ও আবদুস শহীদ নামের দুই বিসিবি কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। আটক কৃত বিসিবি কর্মকর্তাদ্বয়ের একজনের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে, অপরজন ঢাকার বিক্রমপুরের।
এ দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে সাধারণ দর্শকদের একজন বলেন মামু ধরা খাইছন। আর টিকেট ব্রাক করতায়নি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দর্শক বলেন আজ প্রমান হল টিকেট কালোবাজীর সাথে বিসিবির কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত।