মঙ্গলবার ● ১৪ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিলেট-২ আসনে ইসলামী দলগুলোর প্রার্থীদের তৎপরতা
সিলেট-২ আসনে ইসলামী দলগুলোর প্রার্থীদের তৎপরতা
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (৩০ কার্তিক ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ২.২৩মি.)আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন ২৩০ (সিলেট-২) এ বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এবং সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রার্থীরা দৌঁড়ঝাপে ব্যস্ত রয়েছেন। বসে নেই ইসলামী দলগুলোও মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে চলছে রীতিমত স্নায়ূযুদ্ধ। সংসদে যেতে এখন থেকেই অবিশ্রাম প্রচেষ্টা শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত এ আসনে প্রতিবারই নির্বাচনী উত্তাপ বিরাজ করে। আগামী নির্বাচনেও এর ব্যতয় ঘটবে না বলে ধারণা স্থানীয়দের।
নির্বাচনের জন্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের শরিক ইসলামী দলগুলো মাঠে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। দলীয় ব্যানারে তাদের প্রার্থীরা জনসম্পৃক্ততার মধ্যে দিয়ে এখন আলোচনায়। এই আসনে নিজেদের প্রার্থী ভাগ চায় ইসলামী দলগুলো। সাবেক সাংসদ বিএনপি নেতা নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর অবর্তমানে স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনাকে এ আসনে ২০ দলী জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিতই ধরে নিচ্ছেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে এই আসেনে জোটের শরীক অন্যতম দল জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসের প্রার্থীরাও জোটের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই তিনটি ইসলামী দল ছাড়াও সিলেট-২ আসনে ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী ঐক্যজোট।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রতীক হারিয়েছে আদালতের নির্দেশে। নিবন্ধন ফিরে না পেলে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলগতভাবে একক প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারবেন না জামায়াতের প্রার্থীরা। দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হয়ে যাওয়া’সহ আরও অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দলটি নির্বাচনে লড়তে চাইছে। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ থেকে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। সিলেট-২ আসেন জামায়াতে ইসলামীর একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে দলীয় প্রতীকে সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন। পরবর্তি নির্বাচন গুলোতে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ থাকায় দলটি এই আসনে কোন প্রার্থী দেয়নি। ইলিয়াস আলীর অবর্তমানে আগামী নির্বাচনে ২০দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে পেতে চান দলের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, আগামী নির্বাচনে এ আসনে একই জোটের প্রার্থী হতে তৎপর রয়েছেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী। আসন্ন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি দলকে সু-সংগঠিত করার পাশাপাশি জনকল্যানমুখী কাজের মাধ্যমে আলোচনায় রয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের কাছে প্রার্থীতার জন্য খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে মুনতাসির আলীকে এই আসনে মনোনয়ন চাইবে দলটি। বিষয়টি এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদেরও অবহিত করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।
এছাড়া জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও এই আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে হাফিজ হুসাইন আহমদ’কে ঘোষণা করেছে। টিভি প্রেজেন্টার ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের ট্রেজারার হাফিজ হোসাইন আহমদ জমিয়তের সাবেক সভাপতি মাওলানা শায়খ আশরাফ আলী বিশ্বনাথী (র) এর ছাহেবযাদা। ১৯৭০ সালে এই আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী হিসেবে খেজুরগাছ নিয়ে নির্বাচনে অংশনেন আল্লামা নুর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী এবং ১৯৯৬ সালে খেজুর গাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন আল্লামা শায়খ আব্দুস শহীদ। দীর্ঘ বিরতীর পর নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করায় জমিয়ত নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর দেড়েক আগেই সিলেট-২ আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। সিলেট জেলা ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম এনামুল হক মামুন-কে এই আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রার্থীর ব্যাপারে যথেষ্ট ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি মাঠে নিরলস ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি গঞ্জে-গ্রামে চষে বেড়াচ্ছেন। মতবিনিময় করে চলেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে। তারা অনেকটা কৌশলগত ভাবে সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে লিয়াজু স্থাপনের মাধ্যমে নির্বাচনে ভালো ফলাফলের আশাবাদি হয়ে উঠেছেন। এনামুল হক মামুন একজন সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাত। দলীয় পরিচিতির বাইরে তার রয়েছে আলাদা আবেদন। এতে করে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদি রয়েছেন। ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাকর্মীরা মনে করছেন- বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির ইতিহাসে জাতীয় নির্বাচনে যে সাফল্যটুকু রয়েছে, তার পুরোটাই বলতে গেলে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রাপ্য। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলটি সংসদের ১টি এবং ২০০১ সালের জাতীয় ও পরবর্তী উপনির্বাচনে মোট ৪টি আসন লাভ করে। এছাড়া কওমি মাদরাসাগুলোতে তো বটেই আলিয়া মাদরাসা এবং সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছেও রয়েছে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা।