বৃহস্পতিবার ● ১৬ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » লামায় পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছে প্রান্তিক চাষিরা
লামায় পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছে প্রান্তিক চাষিরা
এম জাবের উদ্দিন লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: (২ অগ্রহায়ণ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১.২৫মি.) লামায় পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছেন অনে কৃষক। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা পেলে তামাকের বিকল্প হিসেবে পেঁপে সহ মৌসুমি সবজি চাষে মনযোগি হবে চাষিরা। ভূমির পর্যাপ্ততা মাটির গুনাগুত মান ভালো হওয়ায় পেঁপে চাষে বিপুল সাড়া পড়েছে। দেশের বিভিন্ন শহরে পার্বত্যালাকার পেঁপে খুবই জনপ্রিয়। শুধুমাত্র ফল নয়, সবজি হিসেবেও পেঁপে ব্যপক চাহিদা মেটাচ্ছে। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। পার্বত্যালাকার পাহাড়ী ভুমিতে পেঁপের চাষ ভালো হয়। এক বছরের মধ্যে গাছে ফলধরে। একটি গাছে ২০ থেকে ৫০টি ফল হয়। সে হিসেবে এক একর জমিতে বছরে প্রায় ৭ হাজার থেকে দশ হাজার টি পেঁপে হয়। স্থানীয় উপজাতিরা পাহাড়ে পেঁপে চাষ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে লামা-আলীকদমে অনেকে এই ফল চাষে বিনিয়োগ করছেন। ৫ একর পাহাড়ি ঢালুতে উৎপাদিত পেঁপে বিক্রি হয় ১৫-১৮ লাখ টাকা।
লামা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, দেশের বেশির ভাগ মানুষ পুষ্টি পূরণে শাকসবজি ও ফলমূলের উপর নির্ভর করে থাকেন। এ বিষয়টি মাতায় রেখে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল চাষ হয়। এর মধ্যে পুষ্টিগুন সম্পন্ন অনেকগুলো ফলমুল পাহাড়ী অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটিতে চাষের উপযোগিতা রয়েছে বেশ।
চিকিৎসা সাস্ত্রে জানাযায়, অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, ডিপথেরিয়া, আন্ত্রিক ও পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রভুতি রোগ নিরাময়ে কাঁচা পেঁপের পেপেইন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পেঁপের আঠা ও বীজ ক্রিমিনাশক ও প্লীহা যকৃতের জন্য উপকারী।
পাহাড়ী অঞ্চলে সারা বছরই পেঁপে চাষ হয়। ফলে এখানকার হাট-বাজারে বারো মাস পেঁপে সবজি বা ফল হিসেবে পাওয়া যায়। এক সময় স্থানীয়রা পেঁপে চাষ করে কেবল নিজের পরিবারে পুষ্টিকর ফল ও সবজির চাহিদা মিটিয়ে উদবৃত্ত ফসল বাজারজাত করতেন। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পেঁপে। লামা উপজেলা কৃষি অফিসার নুরে আলম সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম প্ররতিনিধিকে জানান এই এলাকায় স্থানীয় পেঁপে বেশি চাষ হয়।
এছাড়া বানিজ্যিক ভিত্তিতে উচ্চ ফলনশীল শাহী, রেডলেলি, থাইল্যান্ডীসহ আরো কয়েক প্রজাতির পেঁপে চাষ করছেন অনেকে। উচুঁ ও মাঝারি উচুঁ উর্বর দো-আশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। পরিচর্যা করলে সব ধরণের মাটিতেই চাষ সম্ভব। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামাঝি এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রমাসের মাঝামাজি সময় পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। এছাড়া শাহী পেঁপে সারা বছরই চাষ করা যায়। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিনে চারা তৈরি করলে, দেড় থেকে দু’মাসের মাতায় রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায় বলে কৃষি সূত্রে জানাযায়। চারা রোপনের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়। পানি নিকাশের জন্য দুই সারি মাঝখানে ৫০ সে:মি: নালা রাখতে হয় (সমতল জমিতে)। কৃষকদের মতে গুনগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে যতটুকু সম্ভব সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া মাটি পরীক্ষা করে এর ধরণ অনুযায়ী সারের ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে জৈব সার ব্যবস্থাপনা উত্তম বলে কষকরা জানান।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সব রকম সহযোগিতা এখন কৃষকের হাতের নাগালে। ফলে রোগবালাই তেমন না থাকলেও সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক কৃষি বিভাগের লোকেরা হাজির হন কৃষকের দোড়গোড়ায়। কয়েকজন কৃষক জানান, প্রতি একর পেপে চাষে ২৫ হাজার টাকা মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়। ব্যাংক, এনজিও বা নিকটাত্মীয়দের থেকে সুদের উপর ঋণের টাকা নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা পেঁপে চাষ করছেন। এই এলাকায় প্রশিক্ষন ও সরকারি সহজ শর্তে ঋণসহযোগিতা পেলে কৃষকরা পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বি হওয়ার যতেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষক নুরুচ্ছপা জানান। কৃষক আব্দুল মালেক সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিকে জানান, এই এলাকায় অর্থকরি অনেক ফসল ফলানো সম্ভবনা রয়েছে, প্রয়োজন শুধু সরকারি সহযোগিতা। আগাম অর্থ বিনিয়োগ, উৎপাদিত কৃষি পন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা (হীমাগার) থাকলে কৃষকরা তামাকের বিকল্প হিসেবে অন্য ফসল চাষ করবে।
কৃষক নুর উল্ল্যাহ বলেন, সরকার বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান এই এলাকায় একটি হিমাগার স্থাপন করে কৃষিপন্য সংরক্ষণ করা গেলে; তামাক চাষের ব্যাপকতা রোধ হবে। একটি কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় প্রতি মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমান নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি পন্য নষ্ট হয়ে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। এর ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা জেনেও বছর বছর তামাক চাষের প্রতি ঝুকে পড়ছেন কৃষকরা। সরকার বা দেশের বিত্তবানদের প্রতি এলাকাবাসি একটি হিমাগার স্থপনের দাবী জানিয়েছে। পরিবেশ ও কৃষিশিল্প বান্ধব কৃষকদের এ দাবী পুরণে সরকার বা কোন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসা উচিত।