শুক্রবার ● ১৭ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় প্রতিকূল পরিবেশে পাঠদান
দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় প্রতিকূল পরিবেশে পাঠদান
মো.মাইনউদ্দিন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: (৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৩১মি.) খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় দক্ষিণ হাফছড়ি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটিতে প্রতিকূল পরিবেশে পাঠদান চলছে। শিক্ষা কেন্দ্রের পুরনো ভবনের ইট ও প্লাস্টার গুলো কোথাও কোথাও খসে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করতে হয়, যে কোন সময় দূর্গটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা নিয়েও নিয়মিত পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ভবনের চুনকাম না করাণোর ফলে ধুলোবালি, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সব মিলিয়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে পাঠদান চলছে যার কারণে ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সময় বিভিন্ন রোগে ভোগেন। একজন শিক্ষার্থী শিমুল চাকমা (চতুর্থ শ্রেণী) অভিযোগ করে বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে বসে ক্লাশ করার কারণে অসুস্থ হয়ে গত তিনদিন শিক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারে নাই।
১নং মানিকছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ হাফছড়ি গ্রামে ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ অর্থবছরে উপজেলা স্থানীয় সরকারের অর্থায়নে একটি টিন সেট ভবন নির্মাণ করা হয়, যা পরবর্তিতে কমিউনিনিটি গ্রামীণ স্কুল নামে পাঠদান পরিচালিত হয়ে আসছিল।
কমিউনিটি স্কুলটি স্থাপিত হওয়ার পর এলাকাবাসীর ধারণা ছিল উক্ত ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের অন্ততঃ ১৫০ থেকে ১৮০ জন কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়া শেখার একটি সুযোগ হয়েছে । কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, অবৈতিকভাবে দূর থেকে এসে কয়েকজন শিক্ষক বছরখানেক থেমেথেমে পাঠদান চালালেও স্থানীয় যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক শিক্ষিকা না থাকায় স্থায়ীভাবে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন গ্রামীণ স্কুলটি বন্ধ থাকার পর পূনরায় ২০০৭ থেকে এলাকাবাসী, ছাত্রছাত্রী অভিভাবগণ নিজেদের মধ্যে অনুদান সংগ্রহ করে শিক্ষকদের বেতন ও প্রশাসনিক খরচ নির্বাহ করে ২০০৯ পর্যন্ত বিদ্যালয়টি নিয়মিত পাঠদান চালু রাখেন।
এলাকাবাসী হতে প্রাপ্ত অনুদান অনিয়মিত হওয়ায় শিক্ষকদের সম্মানী ভাতা দিতে না পারা ও ম্যানেজিং কমিটিদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের কারণে স্কুলটি পূনরায় বন্ধ হয়ে যায়।
অবশেষে ২০১২ সাল থেকে কারিতাস আলোঘর (লাইট হাউজ) প্রকল্প উক্ত স্কুলটিকে দক্ষিণ হাফছড়ি পাড়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্র নামে পরিচালনা করে । বর্তমানে এই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ইসিই থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১২০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ২ জন নিয়মিত ও ২ জন খন্ডকালীন শিক্ষক কতৃক নিয়মিত পাঠদান পরিচালনা হয়ে আসছে। এই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটিতে ৩টি শ্রেণি কক্ষ ১টি অফিস কক্ষ রয়েছে। নিয়মিত দুইজন শিক্ষকের বেতন, শিক্ষার্থীদের বইখাতা কাগজকলম সহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ ও টেকনিক্যাল সহায়তা এবং শিক্ষা অফিস সহ উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সাধনের কাজটিও নিয়মিতভাবে কারিতাস আলোঘর প্রকল্প থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়।
খন্ডকালীন শিক্ষিকা মানু মারমা এ প্রতিবেদককে বলেন, দুইজন শিক্ষক দিয়ে ০৭টি শ্রেণীতে পাঠদান করা খুবই কষ্টকর, তাই শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালনা কমিটিদের অনুরোধে বিনা বেতনে নিয়মিত পাঠদান দিয়ে আসছি । তিনি আরো বলেন, সকল ক্রাইটেরিয়া পূরণ থাকলেও প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টির অভাবে শিক্ষা কেন্দ্রটি বারবার জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।
উক্ত শিশু শিক্ষা কেন্দ্রেটি ৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। পরিচালনা কমিটির সভাপতি যোগেশ চন্দ্র চাকমা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষাকেন্দ্রে ও তার আশপাশে সুপেয় পানিয় ব্যবস্থা না থাকায়, কুয়ার পানি পান করে ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সময় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভোগেন এবং শিক্ষা কেন্দ্রটি পূর্ণ সংস্কার করা খুবই জরুরী ।
মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিল, হ্লাপাইদং, দক্ষিণ হাফছড়ি গ্রামে একই সময়ে তিনটি গ্রামীণ স্কুল স্থাপন হলেও শুধুমাত্র গচ্ছাবিল স্কুলটি জাতীয়করণ হলেও দক্ষিণ হাফছড়ি ও হ্লাপাইদং কমিউনিটির স্কুলটি জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ে যায় । তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ হাফছড়ি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি ব্যাতিত ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বিদ্যালয় না থাকায় একমাত্র ভরসা এই শিক্ষা কেন্দ্রটি। এছাড়া গচ্ছাবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৬ কিলোমিটার দূরে।
পাড়া কার্বারী ম্রাগ্যচাই মারমা বলেন , দক্ষিণ হাফছড়ি পাড়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে বিদ্যালয় ভবন , খেলার মাঠ, শিক্ষক শিক্ষার্থী সবকিছু থাকা সত্তেও শিক্ষাকেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয়কণ থেকে বঞ্চিত ।
গত ডিসেম্বর ২০১৬ শিক্ষাকেন্দ্রের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা,উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শুভাশীষ বড়ুয়া , ১ নং মানিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডে মহিলা মেম্বার রাশেদা আক্তারসহ আরও অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন ।
মানিকছড়ি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শুভাশীষ বড়ুয়া ও বলেন, দক্ষিন হাফছড়ি নিভ’ত পল্লীতে কারিতাস আলোঘর প্রকল্প কর্তৃক শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে । তবে নভেম্বর মধ্যে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে । বিদ্যালয়টি পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটারে মধ্যে পাশাপাশি কোন বিদ্যালয় না থাকায় এলাকায় কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বিদ্যালয়টি চালু রাখা খুবই প্রয়োজন ।
কারিতাস আলোঘর (লাইট হাউজ) প্রকল্প খাগড়াছড়ি এরিয়া কো অর্ডিনেটর মো. মোজাম্মেল হক বলেন, নভেম্বর ২০১৭ তারিখে দাতা সংস্থার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তাই দক্ষিণ হাফছড়ি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটির এখনি যদি একটি বিহিত না হয় তাহলে পূনরায় শিক্ষাকেন্দ্রটি বন্ধ হলে শতশত কোমলমতি শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা বলেন, যোগাযোগ অভাব কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাকেন্দ্রটি জাতীয়করণ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে । তিনি আরো বলেন যেহেতু বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছে তাই উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সাথে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান ।