শুক্রবার ● ২৪ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » জীবণ বাঁচাতে জীবণ সাজাতে- দয়াল চাকমা’র দোকান
জীবণ বাঁচাতে জীবণ সাজাতে- দয়াল চাকমা’র দোকান
নির্মল বড়ুয়া মিলন, মিজোরাম সীমান্ত থেকে ফিরে :: (১০ অগ্রহায়ন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.১৮মি.)আমরা দেশেও বিদেশে অনেক বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, ভ্যারাইটি ষ্টোর ও বিভিন্ন ধরনের দোকান ও রকমারী ষ্টোর দেখেছি এবং নাম শুনেছি। আমাদের দেশে এবং অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন দোকানের দেখা পাওয়া যায়না। আমরা এমন একটি বিস্ময়কর দোকানের সন্ধান পেয়েছি, যা চোখে না দেখলে চিন্তা করা যায়না। দোকানটি কয়েকটি ধাপে বিভক্ত। মালমাল প্রয়োজন ও ধরন অনুযায়ী সাজানো। দোকানের একপাশে আলু, পেয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, নারিকেল তেল, সরিষার তেল, নারিকেল, সুপারি, চাউলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও শাকসবজি, অন্যপাশে বিভিন্ন রোগের ঔষুধ, স্যালাইন, ট্যাবলেট ঔষুধী সামগ্রী আরেকপাশে রয়েছে, এলপি গ্যাস, ঢেউটিন, রশি, থাই ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, সোলারের ভাল্ব, সিমেন্ট, তেল, মোবিল, পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, সুইসুতা, কেসি ইত্যাদি হার্ডওয়্যার সামগ্রী, তাৎক্ষনিক পেট পুজার ব্যবস্থাও রয়েছে চা, কফি, নাস্তা, ভাত তরতাজা সব তরকারী রান্না।
এছাড়া পান বিড়ি, সিগারেট, তামাক, পায়ের স্যান্ডেল, জুতা মৌজা, লুঙ্গি, গামছা, ছাতা, বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী, বিভিন্ন প্রাষ্টিকের সামগ্রী, খাতা কলম, কাগজ, মোবাইল রিচার্জের কার্ড, বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য (বাংলাদেশী ও ভারতীয়) টিনজাত করা মাছ, টিনজাত করা মাংস,টিনজাত করা মিষ্টি, হাঁস মুরগীর তাজা ডিম, শুটকিমাছ এমনকি আপেল, কমলাসহ বিভিন্ন ফলমূল। একই দোকানে সকল প্রকার মালামাল। ভারত বাংলাদেশ যোগাযোগের জন্য দুটি এন্টিনাযুক্ত ফোন, একটি বাংলাদেশী অপারেটরের অন্যটি ভারতীয়। আর যেহেতু যোগাযোগের জন্য একমাত্র মাধ্যম পানিপথ তাই ইঞ্জিন বোটও রেখেছেন একটি। অর্থাৎ জীবণ বাঁচাতে এবং জীবণ সাজাতে সবই এক দোকানে। দোকানটি রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মিজোরাম সীমান্তে রাঙামাটি শহর থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল বরকল উপজেলার বড় হরিণা ইউনিয়নে মিজোরাম সীমান্ত ঘেষে কুকিছড়া বাজারে। দোকানের মালিক দয়াল চাকমা। দোকানের বিক্রয়ের জন্য রাখা মালামাল দেখে আশ্চার্য্য হওয়ার বিষয়, কারণ এর আগে এ ধরনের দোকান দেশে কোথাও চোখে পরেনি। তবে এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ধরনের দোকান রয়েছে বিষয়টি আশ্চার্য্য হওয়ার চেয়েও অত্যন্ত ভালো লাগার। বাজারে ২০টির মত দোকানের মধ্যে এক দোকানে সব কিছু রাখার পিছনে দোকানের মালিক দয়াল চাকমা বলেন, আমাদের এলাকাটা অত্যন্ত দুর্গম, কেউ এসে সমস্যায় পরলে যাতে সমস্যা সমাধান করা যায় সেই চিন্তা থেকে আমি এই ধরনের মালামালের দোকান সাজিয়েছি। দোকানে ঔষুধ ও স্যালাইন ইনজেকশন রাখা এবং এসবের সেবা দেওয়ার বিষয়ে দয়াল চাকমা জানান, তিনি নিজেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পল্লী চিকিৎসক, জরুরী প্রয়োজনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এসব ঔষুধ স্যালাইন দিয়ে। দোকানের ধরন এবং মালামালের আইটেম দেখে দয়াল চাকমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় দোকানে কি নেই? তিনি বলেন, দোকানে সবই পাওয়া যায়।
এই দোকানের পেছনে পরিবারের চার সদস্য দয়াল চাকমা তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে সময় দেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে দোকানটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্টান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এলাকাবাসী। দয়াল চাকমার মত সমাজ সচেতন, জনসচেতন ব্যবসায়ীরা এসব দুর্গম অঞ্চলের মানুষের জীবণ যাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেও জানা গেছে।